ঢাকা : যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু মঙ্গলবার (১৪ মে) ঢাকায় আসছেন। দুদিনের এ সফরে তিনি ব্যবসা-বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, নাগরিক অধিকারসহ দুই দেশের অগ্রাধিকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা করবেন।
জানা গেছে, সবকিছু ঠিক থাকলে আজ দিনের প্রথম ভাগে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে ডোনাল্ড লুর ঢাকায় আসার কথা। গত জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে তার প্রথম সফর এটি।
বাংলাদেশে স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নানা তৎপরতার মধ্যে এর আগে গত ১১-১৪ জুলাই ঢাকা সফর করেছিলেন লু। সে সময় তিনি দেশটির বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার সঙ্গী হয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে চিঠি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড লু।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, লুর এ সফর দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বার্তা নিয়ে আসার সফর। সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ওয়াশিংটন শ্রম অধিকার সুরক্ষার বিষয়টিতে জোর দিতে পারে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বাইডেন সরকারের সঙ্গে যে বৈরী সম্পর্ক দেখা গেছে, তা থেকে উভয় পক্ষই একটা সাধারণ সম্পর্ক তৈরি করতে চায়। এ ছাড়া ভূরাজনৈতিক ও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য ‘মোড়ল দেশগুলোর’ কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
লুর এ সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। প্রধানমন্ত্রী চতুর্থবার নির্বাচিত হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট চিঠি লিখে সম্পর্ক এগিয়ে যাওয়ার বা নতুন উচ্চতায় নেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। মার্কিন প্রশাসন থেকে যারাই বাংলাদেশে সফর করুক না কেন, সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। সেখানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে, আমাদের নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা আছে।’
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি করেছে। লুর সফরে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি তুলে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সেগুলো (র্যাবের নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি) আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছুটা রেখাপাত করেছে তো বটেই। সেগুলো নিয়ে অবশ্যই আমরা আলোচনা করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেগুলো (র্যাবের নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি) যেন সহজীকরণ হয় বা উঠে যায় তা নিয়ে এরই মধ্যে হোয়াইট হাউজ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় এ প্রসঙ্গগুলো স্বাভাবিকভাবে আসতেই পারে। আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে উভয় দেশ কাজ করছি।’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সফরের প্রথম দিন আজ ডোনাল্ড লু প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন এবং তার দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন। সফরের দ্বিতীয় দিন কাল বুধবার তিনি প্রথমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও পরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন। এরপর লু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া তার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের করারও কথা রয়েছে।
ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘নির্বাচন-পূর্ববর্তী অস্বস্তিকে পেছনে ফেলে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার আলোচনা করতেই ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর। নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর তার প্রথম সফর হবে এটা। নির্বাচনের আগে যে চিত্র ছিল, এখনকার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেননা নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। স্থিতিশীল একটি সরকার। সরকার নিয়মিত কর্মকা- এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সুতরাং সব দেশ আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চায়।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর কয়েক দিন আগে জানিয়েছে, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ সফর করবেন ডোনাল্ড লু। তার এ সফরের মধ্য দিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার হবে বলে প্রত্যাশা করছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্র যে একটি মুক্ত, অবাধ ও সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল দেখতে চায়, লুর সফরে সেটাই গুরুত্ব পাবে।
এমটিআই