ঢাকা: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশে এবং একজনকে ভারতের কলকাতায়। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে— হত্যার সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত আরও অন্তত চারজনের নাম পেয়েছে দু’দেশের পুলিশ। তারা এখনও ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন আখতারুজ্জামান ও সিয়াম। আছেন ফয়সাল আলী সাজী ও মো. মুস্তাফিজুর রহমান ফকির নামে আরও দুজন। তারা খুলনার ফুলতলার বাসিন্দা। এলাকায় শিমুল ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এই দুজন এখন পর্যন্ত দেশেই রয়েছেন।
জানা গেছে, এমপি আনার হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হিসেবে শনাক্ত আসামিসহ গ্রেফতার চারজনই বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন। তাদের মধ্যে আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও তানভীর ভূঁইয়াকে আটদিন করে রিমান্ড দিয়েছেন ঢাকার আদালত। এছাড়া জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদের ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত আদালত।
তদন্ত সূত্র বলছে—শিমুল খুলনা অঞ্চলের পেশাদার খুনি এবং সাবেক চরমপন্থী নেতা। তিনি এমপি আনার হত্যায় সরাসরি জড়িত। বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে হত্যা পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন নিয়ে এখন পর্যন্ত তিন ধরনের তথ্য দিয়েছেন তিনি।
তবে শুধু শিমুল ভূঁইয়া নয়, বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন ডিবির অধীনে জিজ্ঞাসাবাদে থাকা শিলাস্তি রহমানও। তাদের দুজনের কথায় কোনো খুঁজে পাননি তদন্তকারীরা। তার একটি উদাহরণ দিয়ে সূত্র জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে শিমুল বলেছেন— চেতনানাশক প্রয়োগ করে আপত্তিকর ছবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু শিলাস্তি রহমান জানিয়েছেন, চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করে তার সঙ্গে ছবি তোলার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কর্মকর্তারা জানান, শিমুল প্রথমে বলেছিলেন— এমপি আনারকে একটি চেয়ারে বসিয়ে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহটিকে টুকরো টুকরো করে খালে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু পরে হত্যার আরেক বর্ণনায় তিনি বলেন, খুনের উদ্দেশ্যে নয়, আপত্তিকর ছবি তুলে (ব্ল্যাকমেল করে) টাকা আদায়ের লক্ষ্যে আনারকে ওই ফ্ল্যাটে ডেকে নেওয়া হয়। কিন্তু অতিরিক্ত ক্লোরোফর্ম প্রয়োগ করায় তার জ্ঞান ফিরছিল না। তাই তাকে হত্যা করা হয়।
এর আগে আরেক ভাষ্যে শিমুল জানান, হত্যার আগে ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়েছিল এমপি আনারের সঙ্গে। কিন্তু তার দেওয়া এই তথ্যের সঙ্গে চেয়ারে বসিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা কিংবা চেতনানাশক প্রয়োগের তথ্যের মিল নেই। এখানেই শেষ নয়, মরদেহের খণ্ডিতাংশ বাইরে ফেলা নিয়েও একাধিক তথ্য দিয়েছেন শিমুল।
এদিকে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান-শিমুলদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে— এমন বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। যেখানে স্বর্ণ ও ডায়মন্ড ব্যবসায়ী, দুজন সাবেক সংসদ সদস্য ও বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের একাধিক রাজনৈতিক নেতার নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত আটজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :