ঢাকা: দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের কৃতকর্মের দায় পুলিশ বাহিনীর নয় বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
একইসঙ্গে বেনজীর আহমেদ বর্তমানে দেশে আছেন নাকি বিদেশে চলে গেছেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকারের কাছে নেই বলেও জানান তিনি।
শনিবার (১ জুন) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) ছাত্রলীগ কর্তৃক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত 'আমাদের বঙ্গবন্ধু' শীর্ষক বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যদি কেউ অন্যায় করে তাহলে তার শাস্তি বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী হবে৷ তার বিষয়ে তদন্ত চলছে৷ তিনি অন্যায় করেছেন না কি নির্দোষ, তিনি কি কর ফাঁকি দিয়েছেন না কি অন্যভাবে অর্থ সম্পদ গড়েছেন, সেটা তদন্ত শেষ হলে সে অনুযায়ী তার বিচার করা হবে।
তদন্ত চলমান অবস্থায় একজন আইজিপি বিদেশ চলে যেতে পারেন কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, সে এখনো দেশে আছে নাকি বিদেশ চলে গেছে এটা আমি জানি না।
তিনি বলেন, তাকে এখনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তার আগেই তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন বলে শুনেছি। যদিও তার যাওয়ার ব্যপারে আমি জানি না। বিস্তারিত জেনে এ বিষয়ে কথা বলব।
আইজিপির এমন কর্মকাণ্ডে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, না, এটা ব্যক্তিগত বিষয়। আমাদের পুলিশ বাহিনী অনেক কষ্ট করে। জঙ্গি-সন্ত্রাস দমন, কোভিডসহ যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা জীবন বাজি রেখে কাজ করেছে। কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে তার দায় প্রতিষ্ঠান নেয় না।
এদিকে একটি গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী আইজিপি বেনজীর আহমেদ স্ত্রীসহ চলে গেছেন সিঙ্গাপুরে।গত ৪ মে রাতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনেসের একটি ফ্লাইটে করে তিনি দেশত্যাগ করেন বলে পুলিশের সূত্রের বরাতে এমন খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, স্ত্রীর চিকিৎসার কথা বলেই তিনি দেশের বাইরে যাচ্ছেন বলে তার স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বলেছেন। তবে প্রভাবশালী মহলের একাংশকে দেশ ত্যাগের বিষয়টি অবহিত করেই তিনি দেশ ছেড়েছেন।
নাম প্রকাশ না করে বেনজীর আহমেদের ঘনিষ্ঠ এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাতে খবরে বলা হয়েছে, দুদকে তলব করাসহ সবকিছুর বিষয়ে তিনি আগাম ওয়াকিবহাল ছিলেন। প্রভাবশালী একটি মহল তাকে আগাম সবকিছু বলে দিয়েছিল। তবে তিনি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খুবই বিব্রত।
আগামী ৬ জুন বেনজীর আহমেদকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তলব করা হয়েছে। আর ৯ জুন তার স্ত্রী ও তিন সন্তানকে ডেকেছে সংস্থাটি।
দুদক সূত্র জানায়, অভিযোগ ওঠার পর বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক স্বজনের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি ক্রোক বা জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই দিন বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়।
তাছাড়া বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে থাকা মাদারীপুরে ২৭৬ বিঘা (৯১ একর) জমি এবং বেনজীরের পরিবারের নামে থাকা গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটও জব্দের আদেশ দেন আদালত। বেনজীর পরিবারের নামে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসা করার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ করার আদেশও দেওয়া হয়। সাভারে তাদের কিছু জমিও পড়েছে একই আদেশের মধ্যে। এরই মধ্যে সম্পদ জব্দের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আইএ