• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ঈদের জামাতে বিশ্ব শান্তির প্রার্থনা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৭, ২০২৪, ০৯:১৭ এএম
ঈদের জামাতে বিশ্ব শান্তির প্রার্থনা

ঢাকা : ত্যাগের আহ্বান আর আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে আরেকটি উৎসবের দিন, ঈদগাহ আর মসজিদে মসজিদে ঈদুল আজহার নামাজে অংশ নিয়েছেন সকল শ্রেণি, পেশা আর বয়সের লাখো মুসলমান।

সোমবার (১৭ জুন) সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এবারের কোরবানির ঈদের প্রধান জামাত হয়। সেখানে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন।

নামাজ শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনার পাশাপাশি বিশ্ববাসীর শান্তি প্রার্থনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। সকল ‘বালা মুসিবত’ থেকে সুরক্ষা চাওয়া হয় আল্লাহর কাছে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজারো মানুষ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রধান জামাতে অংশ নেন।

এ জামাতে অংশ নিতে ভোর থেকেই ঈদগাহর মূল ফটকের বাইরে লাইন শুরু হয়। সবাই সারি বেঁধে ঈদগাহে প্রবেশ করেন। জামাত শুরুর সময়ের আগেই ঈদগাহ পরিপূর্ণ হয়ে যায়।

নামাজ ও মোনাজাত শেষে রেওয়াজ মাফিক বুকে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি আর কুশল বিনিময় করেন সবাই।

এবার একসঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। নারীদের জন্য ছিল আলাদা ব্যবস্থা।

প্রধান ঈদ জামাত ঘিরে নিরাপত্তার বন্দোবস্তুও ছিল।আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে ঈদগাহ এলাকায়।

প্রতিবছরের মত এবারও ঈদুল আজহার দিনে পাঁচটি জামাত হবে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। সকাল ৭টায় সেখানে প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা ইহসানুল হক।

নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হয়। দোয়া করা হয় ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আহত, নিহত ও বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য।

আবহাওয়া অফিস বলেছিল, আষাঢ়ের শুরুতে এই সময়ে ঢাকায় কোরবানি ঈদের সকালটা মেঘাচ্ছন্ন থাকবে, হয়েছেও তাই।

দিনের যে কোনো সময় ঢাকায় হালকা বৃষ্টিরও পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস, তবে সকালে ঈদের নামাজের সময় বৃষ্টির বিড়ম্বনা পোহাতে হয়নি।

ঈদ জামাত শেষে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন পশু কোরবানির তোড়জোড়ে। এবার ঢাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পশু জবাই করার জন্য আলাদা স্থান বেঁধে দেওয়া হয়নি। বরাবরের মতই নগরজুড়ে রাস্তা ও অলিগলিতে পশু জবাইয়ের দৃশ্য দেখা গেছে।

ঢাকায় কোরবানি করা পশু এবং কোরবানির হাট মিলিয়ে অন্তত ৩৯ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হবে ধরে নিয়ে সেগুলো দ্রুততম সময়ে অপসারণের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে এই বর্জ্য অপসারণ শুরু হবে। ঢাকা উত্তরের লক্ষ্য বেশ উচ্চাভিলাসী, তারা ছয় ঘণ্টার মধ্যে এবং দক্ষিণ সিটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শহর পরিচ্ছন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে।

মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে ঈদ জাতীয় উৎসবে রূপ নেয়। ঈদে তিন দিন সরকারি ছুটি থাকে। ঢাকা থেকে প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ গ্রামে চলে যান স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে।

ঈদ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, কোরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব জাগ্রত করে এবং সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।

রাষ্ট্রপতির ঈদের বাণীতে এসেছে বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতার কথাও। তিনি বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক মানুষ নানা প্রতিবন্ধকতা ও কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। ফিলিস্তিনের গাজাসহ বিশ্বের অনেক স্থানে মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে ও বিনা চিকিৎসায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

স্বজনহারা বেদনায় গভীর শোক আর নিদারুণ কষ্টে তাদের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। তাদের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে আমাদের সাধ্যমত সহযোগিতা ও সমর্থন যোগাতে হবে। ঈদের খুশিতে তারাও যাতে শরিক হতে পারে সে চেষ্টা চালাতে হবে।

দেশবাসীকে ঈদ মোবারক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, জীবনের সকল পর্যায়ে মুসলমানদের ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি ছড়িয়ে পড়ুক- এই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। হাসি-খুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক।

আমি আশা করি, ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে। আসুন, আমরা সকলে পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আজীবন স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, উন্নত-সমৃদ্ধ আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সকালে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাতে যোগ দেবেন। পরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ৯টায় গণভবনে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!