ঢাকা : পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার (২৩ জুন) দিন ধার্য রয়েছে। তবে দেশের বাইরে অবস্থান করায় দ্বিতীয় দফায়ও তিনি দুদকের তলবে হাজির হচ্ছেন না।
এর আগ প্রথম দফায় সময়ের আবেদন করলেও দ্বিতীয় দফায় এখনো তিনি সময়ের আবেদন করেননি। অবশ্য দুদকের আইনে সময় চেয়ে দ্বিতীয়বার আবেদনের সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতিতে শিগগিরই তার ঠিকানায় সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠানো হবে।
এরপর ২১ কর্মদিবস এবং পরে সময়ের আবেদন করলে আরো ১৫ কর্মদিবস সময় পাবেন তিনি। তবে বিদেশে অবস্থান করায় বেনজীর যেমন দুদকের নোটিশ গ্রহণ করতে পারবেন না, তেমনি দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতেও ব্যর্থ হবেন।
বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে কমিশনের তদন্তকারী দল তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুদক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, বেনজীর আহমেদ সম্পদ বিবরণী দাখিল না করলে দুটি মামলা হবে। দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করার জন্য হবে ‘নন-সাবমিশন’ মামলা, আর বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের যেসব অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে আরেকটি ‘অবৈধ (জ্ঞাত আয়বহির্ভূত) সম্পদ অর্জনের’ মামলা হবে।
দুদক আইনে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছর এবং নন-সাবমিশন মামলায় তিন বছরের সাজার বিধান রয়েছে।
দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, বেনজীর আহমেদ জিজ্ঞাসাবাদে না এলে তাকে আর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সময় দেয়া হবে না। তবে অনুসন্ধান চলতে থাকবে। অনুসন্ধান শেষে অনুসন্ধানকারী দল কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর কমিশনের অনুমতিক্রমে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ গত ৪ মে স্বপরিবারে দেশ ত্যাগ করেছেন। এর আগে তাকে গত ৬ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল। বিদেশে অবস্থান করায় তিনি ওইদিন দুদকে হাজিন হননি। পরে তিনি সময় চেয়ে আবেদন করলে তাকে ১৬ দিনের সময় দিয়ে রবিবার ডাকা হয়। এছাড়া বেনজীরের স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে– ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার ডাকা হয়েছে। তারাও বেনজীরের সঙ্গে গত ৪ মে দেশ ত্যাগ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নিতে তারা দেশে এসেছেন কিনা– এটিও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বেনজীরের পরিবারের এই তিন সদস্যকে এর আগে গত ৯ জুন জিজ্ঞাসাদাদের জন্য ডাকা হয়েছিল। বিদেশে থাকায় তারাও নির্ধারিত তারিখে হাজির হতে পারেননি। পরে তারা সময় চেয়ে আবেদন জানালে তাদেরকে ১৪ দিন সময় দিয়ে সোমবার ডাকা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বেনজীর আহমেদ ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। এরপর ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক পদে দায়িত্ব পালন করেন। এই দুই মেয়াদের দায়িত্ব পালনকালে অঢেল সম্পদের মালিক হন বলে দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে। আদালতে উপস্থাপন করা নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঢাকার রূপগঞ্জে ২৪ কাঠা জমিতে ৪টি প্লটের মোট মূল্য দেখানো হয়েছে ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্লটগুলো সাভানা ইকো রিসোর্টের নামে ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কেনা হয়েছে।
২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বাড্ডায় ১৩ দশমিক ৬৬ কাঠা জমির ওপর রুপায়ন মিলিয় স্কয়ার নামে ১৪ তালা ভবনে ২টি ফ্ল্যাট ৬৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যে কেনা হয়। ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর বান্দরবান জেলা আদালত থেকে ২৫ একর জমি লিজ নেন বেনজীর। এছাড়া সিটিজেন টিভিতে শেয়ার ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ও টাইগারেফিট অ্যাপারেলস (গার্মেন্টেস) লিমিটেড কোম্পানিতে ২০২২ সালের ১ আগস্ট শেয়ার কেনা হয়েছে। এ দুই কোম্পানির শেয়ার বেনজীর, তার স্ত্রী জিশান মির্জা, তিন মেয়ে- ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর, জাহরা জারিন বিনতে বেনজীর এবং তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বলে উল্লেখ করেছে দুদক।
মামলার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম আদালতকে বলেন, গত ২২ এপ্রিল ৩ (তিন) সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে, স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়েদের নামে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে।
এমটিআই