• ঢাকা
  • সোমবার, ০৮ জুলাই, ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১

৪৪০ বছর পর বাতিল হল মুঘল তৈরি ভূমি কর আদায়ের নিয়ম


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৪, ২০২৪, ০১:২২ পিএম
৪৪০ বছর পর বাতিল হল মুঘল তৈরি ভূমি কর আদায়ের নিয়ম

ঢাকা : সমাজব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে যুগের পর যুগ ধরে নানা রকমের আইন ও নিয়ম তৈরি হয়েছে। সময়ের সঙ্গে মিল রেখে বেশ কিছু নিয়ম পরিবর্তন বা বন্ধ হয়ে গেলেও এখনো চলামান রয়েছে কিছু প্রথা।

এবার মুঘল আমলের ৪৪০ বছরের পুরোনো এমনই এক প্রথা বাতিল করা হলো। চালু করা হল নতুন নিয়ম। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলা সাল অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ৪৪০ বছরের পুরোনো মুঘল প্রথা বাংলাদেশ থেকে বাতিল করা হয়েছে। চলতি মাস থেকে অর্থবছরের সাথে সঙ্গতি রেখে অর্থাৎ পহেলা জুলাই থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত কর আদায়ের প্রথা কার্যকর করা হয়েছে।

এতোদিন ভূমি কর আদায় করা হতো বাংলা বর্ষপঞ্জী পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০শে চৈত্র পর্যন্ত। ভূমি কর আদায়ের এই রীতি চালু হয়েছিল প্রায় ৪৪০ বছর আগে মুঘলদের আমলে। তবে এখন থেকে সেটা খ্রিষ্ট্রীয় ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে অর্থবছরের সাথে মিল রেখে আদায় করা হবে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কৃষি ফসল ওঠার উপর নির্ভর করে মুঘল আমলে খাজনা আদায় করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কৃষির ফলনের ঋতু পরিবর্তন হয়েছে। একইসাথে আর্থিক কাঠামোর সাথে সঙ্গতি রেখে হিসাব ব্যবস্থাপনা সহজ করতে অর্থবছর অনুযায়ী ভূমি কর আদায়ের উদ্দেশ্যেই শতশত বছরের পুরোনো এ রীতি পরিবর্তন করা হয়েছে।

মুঘল আমলে যেভাবে আদায় হত ভূমির কর : ইতিহাস গবেষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, মুঘল আমলে বাংলা অঞ্চল হিজরি সনে পরিচালিত হতো। তখন বাংলা ছিল কৃষি প্রধান অঞ্চল। ফলে খাজনা দেয়াসহ নানা কাজে বছরের শুরুটা হিসাব করতে সমস্যা হতো।

এ কারণে সম্রাট আকবর তখন বাংলা সন প্রবর্তন করেন, যার শুরু পহেলা বৈশাখ দিয়ে। গবেষকরা বলছেন, সম্রাট আকবরের বঙ্গাব্দ সন চালু, কৃষকদের কর দেয়ার সাথে সম্পর্কিত ছিল।

পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট আকবরই ভূমি রাজস্ব পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন। সামগ্রিক রাজস্ব ব্যবস্থাকে সাজাতে ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে রাজা টোডরমলকে দেওয়ান পদে নিয়োগ দেন তিনি। রাজা টোডরমল কয়েক প্রকার ভূমি রাজস্ব চালু করেন। জাবতি, গালাবক্স এবং নাসক প্রথা এদের মধ্যে অন্যতম।

তবে জাবতি ব্যবস্থার জন্যই রাজা টোডরমল রাজস্ব ব্যবস্থায় ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। এই ব্যবস্থায় নগদ অর্থে রাজস্ব দেয়া যেত। জমির উৎপাদনের হার বাড়লে রাজস্বও বাড়তো।

এ ব্যবস্থায় জমিকে সরেশ, মাঝারি, নিরেশ এই তিন ভাগে ভাগ করে প্রতি বিভাগের ১০ বছরের মোট উৎপাদনের গড় করে সেই গড় উৎপাদনের তিনভাগের একভাগ ছিল সরকারি ভূমি রাজস্ব। এ পদ্ধতির আরো পরিণত রূপ ছিল নাসক ব্যবস্থা। কারণ জাবত ব্যবস্থায় প্রতি বছর জমি জরিপ জটিলতার সৃষ্টি করতো। এ সমস্যার সমাধান করা হয় নাসক রাজস্ব ব্যবস্থায়।

যেভাবে ভূমি কর পরিশোধ করতে হয় : ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ভূমি উন্নয়ন কর হালসনের হিসাব অনুযায়ী পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ, প্রতি বছরের ভূমি উন্নয়ন কর ওই বছরের ৩০ জুনের মধ্যে জরিমানা ছাড়া আদায় করা যাবে।

কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি বা পরিবার-ভিত্তিক কৃষি জমির মোট পরিমাণ আট দশমিক ২৫ একর বা ২৫ বিঘা পর্যন্ত হলে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে না। তবে এই জমির পরিমাণ ২৫ বিঘার বেশি হলে সম্পূর্ণ কৃষিজমির ওপর ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে বলে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে।

এছাড়া, অকৃষি ভূমিকে ব্যবহার ভিত্তিক বাণিজ্যিক, শিল্প এবং আবাসিক ও অন্যান্য শ্রেণিতে বিভাজন করে সরকার কর আদায় করে থাকে।

যা বলছে সরকার : গত বছর ১৯৭৬ সালের ভূমি উন্নয়ন কর আইন রহিত করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। এটি ভূমি উন্নয়ন কর আইন ২০২৩ নামে পরিচিত। ভূমি মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ জানান, ২০২৩ সালের আইন আর্থিক কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই হিসাব সহজ করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থবছর হচ্ছে পহেলা জুলাই থেকে ৩০শে জুন। ফলে হিসাব - নিকাশ সহজ করার জন্য এ আইনের পরিবর্তন করা হয়েছে।

মুঘল আমলে মূলত কৃষিভিত্তিক রাজস্ব আদায় করা হতো। সে সময় চৈত্র মাসকে ফসল ওঠার শেষ সময় ধরে মুঘল সম্রাট বা তার জমিদারেরা খাজনা আদায় করতো। কারণ ওই সময় ফসল উঠলে বিক্রি করে খাজনার টাকা দিতো কৃষকেরা।

এই আইনের পরিবর্তনের যুক্ত তুলে ধরে ভূমি মন্ত্রী বলছেন, “মুঘল আমলের মতো কৃষির ফলনের সময় এখন নেই, এখন তা পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমাদের দেশে প্রধান হয়ে গেছে গ্রীষ্মকালীন ধান।

তিনি আর জানান, এখন অর্থনীতি এমন হয়ে গেছে কৃষকদের বারো মাসই তরিতরকারি, সবজি, ফলমূল সবকিছু হচ্ছে। বারো মাসই ইনকাম থাকে। বিশেষ করে জুন মাসে কর দেওয়াটা সহজ হবে কারণ ধান উঠে যাচ্ছে মে মাসের মধ্যে। ফলে ধান উঠলে তারা খাজনা দিতে পারবে।

ফলে সবকিছু মিলিয়ে আগের পরিস্থিত বদলে যাওয়ায় শতাব্দী প্রাচীন এই রীতি পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান ভূমি মন্ত্রী। এর ফলে দেশে বাংলা সন অনুযায়ী কর আদায়ের একমাত্র রীতিটির বিলোপ হয়েছে।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!