ঢাকা: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে গত দুদিনে পাচার হওয়া সাড়ে ১৪ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এ সময় ৮ চোরা কারবারিকে আটক করেছে তারা। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার এসব অভিযান চালানো হয়। বিএসএফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল শনিবার (৬ জুলাই) এক বিবৃতিতে বিএসএফ জানিয়েছে, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বিএসএফের ৮ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গে নদিয়া জেলার পুট্টিখালীর সীমান্ত ফাঁড়ি এলাকার মথুরাপুর গ্রামে তল্লাশি চালান। এ সময় মথুর দাস নামে এক সন্দেহভাজনকে চ্যালেঞ্জ করে তল্লাশি করলে তার কাছ থেকে ২০টি সোনার বার ও দুটি সোনার ইট উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা সোনার ওজন প্রায় ৪ দশমিক ৭ কেজি। এর ভারতীয় বাজারমূল্য ৩ দশমিক ৩ কোটি রুপির বেশি। বিএসএফের দাবি, উদ্ধার করা সোনা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করা হয়েছে।
বিএসএফ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন, সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি ঠাকুরী গ্রাম থেকে একটি স্কুটিতে করে মথুরাপুর গ্রামের দিকে আসছে। পথেই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে তাকে সীমান্ত ফাঁড়িতে এনে তল্লাশি চালিয়ে স্কুটির সিটের নিচে রাখা প্যাকেট থেকে ২০টি সোনার বার ও দুটি সোনার ইট উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে ৪ দশমিক ৭ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে বিএসএফ। আটক মথুর দাস পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বাসিন্দা। জিজ্ঞাসাবাদে, মথুর স্বীকার করেছেন, সোনার চালানটি তিনি বনগাঁয় পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। দীর্ঘদিন এ কাজ করে ভালো অর্থ উপার্জন করেছেন বলেও জিজ্ঞসাবাদে স্বীকার করেছেন মথুর। আটক ব্যক্তি এবং উদ্ধার করা সোনা পরবর্তী আইনি ব্যবস্থার জন্য রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদপ্তর (ডিআরআই) কলকাতার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, গত শুক্রবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার সীমানগরের ১১ নম্বর রাজ্য সড়কে পর পর ৪টি অনুসন্ধান চালিয়ে ১০ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে বিএসএফের ৬৮ ব্যাটালিয়ন এবং কলকাতার রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদপ্তর (ডিআরআই)। এ সময় ৭ জন চোরাকারবারি গ্রেপ্তার হয়েছে। সেদিন উদ্ধার করা সোনার মধ্যে রয়েছে ১টি সোনার ইট এবং সাড়ে ৯ কেজির বেশি ওজনের সোনার বিস্কুট। জব্দকৃত সোনার দাম পৌনে সাত কোটি রুপির বেশি। একই সঙ্গে জব্দ করা হয়েছে ১১ লাখ ৫৮ হাজর ৫০০ রুপি নগদ এবং সোনা ডেলিভারিতে ব্যবহৃত একটি মারুতি ইকো গাড়ি। দেশটির যৌথ বাহিনী দাবি করেছে, এসব সোনা বাংলাদেশ থেকে ভারতে আনা হয়েছিল। সংস্থাটি জানায়, বৃহস্পতিবার সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বিএসএফের ৬৮ ব্যাটালিয়ন এবং ডিআরআই-এর একটি যৌথ দল সীমানগর এলাকায় ১১ নম্বর রাজ্য সড়কে যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ বাহিনীর সদস্যরা একটি সন্দেহজনক মারুতি ইকো গাড়ি থামায়। সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করার পর তল্লাশির সময় ৪ দশমিক ৮ কেজি সোনাসহ দুই পাচারকারীকে আটক করা হয়।
একইভাবে ওই সড়কে সকাল ৭টা নাগাদ একটি বাস থামিয়ে তল্লাশিকালে ১ দশমিক ২ কেজি সোনাসহ একজনকে আটক করা হয়। কিছুক্ষণ পর সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আরেকটি বাস থামিয়ে তল্লাশিকালে ৩ দশমিক ৬২ কেজি সোনাসহ তিনজনকে আটক করা হয়। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অপর একটি অভিযানে ওই জেলার করিমপুরের রামনগর গ্রামে একটি সন্দেহজনক বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ১টি সোনার বিস্কুট ও সাড়ে ১১ লাখ অবৈধ নগদ টাকাসহ একজনকে আটক করা হয়।
গ্রেপ্তার প্রধান পাচারকারীর নাম রফিক মণ্ডল, নদীয়া জেলার টেপুরের বাসিন্দা তিনি। এ ছাড়া লাল, রবি, প্রদীপ, দাউদ, সীমান্ত ও বিট্টু নামের পাচারকারীরা সবাই নদীয়া (পশ্চিমবঙ্গ) জেলার বাসিন্দা। জিজ্ঞাসাবাদে রফিক মণ্ডল জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত এবং এবার তিনি কৃষ্ণনগরে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছে সোনার চালান পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। এ ছাড়া অন্যান্য পাচারকারী জানিয়েছে যে, তারা করিমপুরের সীমান্ত এলাকা থেকে সোনা নিয়ে কলকাতার দমদম রেলস্টেশনে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। গ্রেপ্তার চোরাকারবারিদের সোনাসহ পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ডিআরআই, কলকাতার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিএসএফ বাংলাদেশ থেকে এসব সোনা পাচার হয়েছে বলে দাবি করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এমএস