ঢাকা : সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে দেশজুড়ে ছাত্র আন্দোলনের জেরে কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে বাধ্য হয় সরকার। তবে ২০২১ সালে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করলে গত ৫ জুন এক রায়ের মাধ্যমে আবারও ফিরে আসে কোটা। এরপর আবার আন্দোলনে নামের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার আন্দোলনের ষষ্ঠ দিনে সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৩টা থেকে তারা সারা দেশে এই কর্মসূচি পালন করবেন।
শনিবার (৬ জুলাই) শাহবাগে অবরোধ করে ছাত্রসমাজের পক্ষে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ধর্মঘটের ঢাকা দিয়েছেন তারা। আজ থেকে শুরুর ঘোষণা দেওয়া এই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের প্রতি ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলনের কারণে দেশের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে আছে। ক্লাস ও পরীক্ষার পাশাপাশি সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
গতকাল লাগাতার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিকেল ৩টায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর-বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ইডেন কলেজ নীলক্ষেত টিএসসি হয়ে শাহবাগে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান করেন তারা। অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড়ের সড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে চারপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। পরে এক ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। এদিন আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সরকার ভেবেছে আমরা এক দিন-দুদিন আন্দোলন করব এবং একদিন ক্লান্ত হয়ে যাব। আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের যদি বাধ্য করা হয়, আমরা প্রয়োজনে সারা দেশে হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’
তিনি বলেন, আজকের ছাত্রসমাজকে আদালতের মুখোমুখি করা হচ্ছে, এ দায় নির্বাহী বিভাগ এড়াতে পারে না। এ সময় হলে হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা দেওয়ায় ছাত্রলীগের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন নাহিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু হলের তালা ভাঙতে জানি। শিক্ষার্থীদের যদি বাধা দেওয়া হয়, এর জবাব আপনাদের দিতে হবে। যদি আমরা চাকরি না পাই তাহলে আপনাদেরও চাকরি থাকবে না।’
নাহিদ আরও বলেন, ‘আমরা শুধু শাহবাগে বসে থাকব না। আগামীকাল (আজ রবিবার) বিকেল ৩টা থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। আগামীকাল ঢাকা শহরের শাহবাগ, নীলক্ষেত, মতিঝিল, চানখাঁরপুল, সায়েন্সল্যাবসহ প্রতিটি পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা নেমে আসবেন এবং বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরে শিক্ষার্থীরা সমস্ত মহাসড়ক অবরোধ করবেন।’
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হচ্ছে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করতে হবে। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এমটিআই