ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি কোর্টেই (আদালত) সমাধান করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১৪ জুলাই) বিকেল ৪টায় গণভবনে চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
কোটা আন্দোলনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন করছে করুক কিন্তু কোনো ধংসাত্মক কিছু করতে পারেবে না, পুলিশের গায়ে হাত দিতে পারবে না। তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের আদালতে গিয়ে সমাধান খুঁজতে হবে। এবিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই।
বাংলাদেশকে বিচিত্র দেশ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার নাতী কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি আবার কোটার বিরুদ্ধে কথা বলে। তাকে কী করা উচিত। তাকে তো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া উচিত, যা তোর পড়া লাগবে না, বাড়ি গিয়ে বসে থাক।
‘মেধা না কোটা’ কোটা বিরোধীদের এই স্লোগন নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিরা মেধাবী না, এই দেশে রাজাকারের নাতিরা সবাই মেধাবী তাই না? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিরা কোটা পাবে না তো কী রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে?
এসময় সুদমুক্ত ঋণসহ চারটি প্যাকেজে বাংলাদেশকে ২ কোটি বিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা দেবে চীন। সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেট (আবাসন) এবং হসপিটালিটি খাতে বিনিয়োগে চীনের ব্যবসায়ীরা আগ্রহ দেখিয়েছে বলেও জানান তিনি।
রোববার (১৪ জুলাই) বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার (৮ জুলাই) চার দিনের সফরে চীনে যান। পরে সফর সংক্ষিপ্ত করে ১০ জুলাই রাতে দেশে ফিরে আসেন।
এর আগে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াংয়ের আমন্ত্রণে গত সোমবার বেইজিংয়ে পৌঁছান শেখ হাসিনা। দেশে ফেরেন বুধবার। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ২১টি দলিল এবং সাতটি প্রকল্পের ঘোষণাপত্রে সই করেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। এছাড়া বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) রেনমিনবি বা ইউয়ানের (প্রায় ১ হাজার ৬১৫ কোটি টাকার সমান) অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয় চীন।
এর পর গত বুধবার সফরের শেষ দিন বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। একই স্থানে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াংয়ের সঙ্গেও বৈঠক হয় তার।
শি জিনপিংয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার সর্বশেষ বৈঠক হয় ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকে বৈঠকে বসেন উভয় নেতা। শেখ হাসিনা এর আগে ২০১৪ ও ২০১৯ সালে চীন সফর করেন। আর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফর করেন ২০১৬ সালে। সে সময় উভয় দেশ ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ পৌঁছার কথা বলেছিল। আর শেখ হাসিনার সদ্যসমাপ্ত সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব থেকে কৌশলগত বিস্তৃত সহযোগিতা অংশীদারত্বে’ উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।
এবার সই হওয়া ২১টি দলিলের মধ্যে ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে চায়না ন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রেগুলেটরি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনএফআরএ) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে ব্যাংকিং ও বীমা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে। বাংলাদেশ থেকে চীনে আম রফতানিবিষয়ক একটি প্রটোকলেও সই করে দুই দেশ।
সই হওয়া সাতটি ঘোষণাপত্রের মধ্যে রয়েছে চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সমাপ্তি ঘোষণা; চীন-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি ত্বরান্বিতকরণ নিয়ে আলোচনা শুরুর ঘোষণা; ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রকল্পে টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণের সমাপ্তি ঘোষণা; ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পের সঙ্গে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের ট্রায়াল রান সমাপ্তি ঘোষণা; রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালুর ঘোষণা; শানদং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই এবং বাংলাদেশে লুবান ওয়ার্কশপ নির্মাণের ঘোষণা।
আইএ