• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

সরকার হটাতে কোটা আন্দোলনকারীদের চাইল ছাত্রদল


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৬, ২০২৪, ০৩:০৮ পিএম
সরকার হটাতে কোটা আন্দোলনকারীদের চাইল ছাত্রদল

ঢাকা : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রাজপথে থাকার প্রতিশ্রুত দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ জুলাই একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে আজ থেকে কোটা প্রথা বাতিলের এই আন্দোলনে সব সময় মাঠে থেকে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

একইসাথে ছাত্রদল- আন্দোলনরত সকল শিক্ষার্থীদেরকে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থার মূল উৎস তথা অবৈধ ফ্যাসিবাদী এই সরকার হটিয়ে প্রকৃত চেতনা তথা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারভিত্তিক একটি সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে আসতে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ও হামলার পরদিন বিএনপির ছাত্রসংগঠন এ অবস্থানের কথা জানাল।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রদল রাজপথে থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে রাকিব বলেন, বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের ব্যানারে যেদিন থেকে সভা-সমাবেশ শুরু হয়েছে, তখন থেকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা তাদের পাশে রয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে এই আন্দোলনের সাথে ছাত্রদলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ছাত্রদল সর্বাত্মকভাবে এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে রয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে ছাত্রদলের কোনো তৎপরতা নেই, সাংগঠনিকভাবে আমাদের কোনো সস্পৃক্ততা নেই।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পর সেখান থেকে ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। মিছিলটি কাকরাইলের নাইটিঙ্গল রেস্তোঁরার মোড় ঘুরে নয়া পল্টনে এসে শেষ হয়।

ছাত্রদল ক্রেডিট নিতে চাচ্ছে না : রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘আপনারা গতকাল নিউজ করেছেন, শহীদুল্লাহ হল ও কার্জন হলে হামলা হয়েছে; সেখানে ছাত্রদলের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ ছিল। অধিকাংশ মিডিয়াতেও অনেক যে আহত হয়েছে- তারও নিউজ করেছেন, বিগত সময়ে আপনাদের নিউজে এটা (আমাদের নেতা-কর্মীরা আছে) উঠে এসেছে। আপনাদের মাধ্যমে একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, ছাত্রদল ক্রেডিট নিতে চাচ্ছে না।

আমরা চাই, এই যৌক্তিক আন্দোলনের শেষ পরিণতি হোক। আমরাও চাই, এই বৈষম্যমূলক কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে কোটা প্রথা বিলুপ্ত হোক, তাদের দাবি পূরণ হোক।

কেন সাংগঠনিকভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছেন না, এমন প্রশ্নের উত্তরে ছাত্র দল সভাপতি বলেন, আজকে আমরা যদি কেন্দ্রীয় সংসদের ব্যানারে নেতা-কর্মী নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করি, সেটাতে আন্দোলন ভিন্নখাতে চলে যাবে। সেজন্য আমাদের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত, এই কোটা বিরোধী আন্দোলনের ইস্যুতে ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারেই সর্বাত্মক অংশগ্রহণ করবে।

এতে কে কী বলল, আমাদের কিছু আসে যায় না। আমরা আমাদের মতো করে তাদেরকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি, সর্বাত্মকভাবে তাদের পাশে রয়েছি, সর্বাত্মকভাবে পাশে থাকব।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, গতকাল দিনের বেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা হয়েছে, রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও হামলা হয়েছে। নির্মম এসব হামলার ঘটনা।

এসব হামলায় একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, যুদ্ধের ভেতরে একটি আইন থাকে, ইন্টারন্যাশনাল হিউমেনেটিরিয়ান ল। সেটি হচ্ছে যে, যুদ্ধের মধ্যে হসপিটাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপনি হামলা করতে পারবেন না।

কিন্তু আমরা দেখেছি, গতকাল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করার পরে যারা আহত হয়েছে, তাদের ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতে গিয়ে তারা হামলা করেছে। এটি স্বাধীনতার পরে আমাদের ছাত্র রাজনীতির জন্য সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়েছে। এটি শুধু আন্তর্জাতিক আইনের ব্যত্যয় শুধু হয়নি, একই সাথে ফৌজদারি অপরাধও হয়েছে।

২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে সরকারপ্রধান বলেন, কোটা আন্দোলন করার আগে তো তোদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?

মুক্তিযোদ্ধাদের অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, নিজের পরিবার সংসার সব বাদ দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, খেয়ে না খেয়ে, কাদা মাটিতে রোদ বৃষ্টি ঝড় সব উপেক্ষা করে যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির বলেন, এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী যে হিংসাত্মক কটূক্তি করেছেন, আমরা ছাত্রদল এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে এই রকম বক্তব্য প্রদানের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানও জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!