ঢাকা: চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে।
বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবে। আশা করি কাউকে হতাশ হতে হবে না। এসময় আদালতের সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বজন হারানো বেদনা আমার থেকে বেশি কেউ জানে না। কিছু মহল আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়।এর ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, যা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে ছাত্রদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে। সম্প্রতি আদালত এটি বাতিল করে। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতা করে। রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে সুযোগ দেওয়া হয়। নিরাপত্তারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো কিছু মহল আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত উচ্চাভিলাস চরিতার্থ করতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এর ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেলো। আপনজন হারানোর বেদনা কত কষ্টের, আমার থেকে আর কে বেশি জানে। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আমি সব হত্যার নিন্দা জানাই।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা হত্যাকাণ্ড, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, এরা যেই হোক না কেন, তারা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে। কাদের উসকানিতে এই অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হলো, তা তদন্ত করে বের করা হবে।
উল্লেখ্য, চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ছয়জন মারা গেছেন। রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে আসেন। দুপুরের পর থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব ও চানখারপুল এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।
আহত হয়েছেন কয়েকশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় সারা দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইএ