ঢাকা : দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বলবৎ থাকা কারফিউর মেয়াদ আরও ১৫ থেকে ৩০ দিন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সোমবার (২৯ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের বৈঠকে এ প্রস্তাব করা হয়।
বৈঠকে জোট নেতারা বলেন, আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলেও এখনো জামায়াত-শিবির ও বিএনপি ঘরে ফিরে যায়নি। তাই মাঠ থেকে এখনই সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তুলে নেওয়া ঠিক হবে না।
বৈঠকে জোটের প্রায় সব নেতাই চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে জনগণের মধ্যে কীভাবে স্বস্তি ফেরানো যায় সে বিষয়ে কথা বলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে পুলিশ যেন বাড়াবাড়ি না করে সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে বলেন তারা। কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য সঠিক তথ্য নিয়ে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
একইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ১৪-দলীয় জোটের নেতারা। তারা বলেন, ধারাবাহিকভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
একই বৈঠকে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের বৈঠকের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উপস্থিত সব নেতা।
জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির ‘সন্ত্রাস’ এবং ‘জঙ্গিবাদের’ সঙ্গে যুক্ত উল্লেখ করে সংগঠন দুটিকে নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক ব্যক্তি নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেল ৫টায় শুরু হওয়া রুদ্ধদ্বার এ বৈঠক রাত ৯টা পর্যন্ত চলে। বৈঠক শেষে গণভবনের ফটকে দাঁড়িয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের অবগত করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘১৪ দলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে জামায়াত-শিবির গোষ্ঠীর অপশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য।
জোটের নেতৃবৃন্দ মনে করেন, বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, শিবির ও তাদের দোসর উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’
এদিকে জোটের গতকালের বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামলাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে বলে জানা গেছে। একাধিক নেতা বলেন, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য-বিবৃতি পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করেছে।
একইসঙ্গে ডিবি হেফাজতে নিয়ে সমন্বয়কদের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের ব্যবহার (এক টেবিলে বসে খাবার খাওয়ার ছবি) নিয়ে হাইকোর্টের মন্তব্য সরকারের বিপক্ষে গেছে বলেও বৈঠকে একাধিক নেতা অভিমত প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে জোটের একটি দলের নেতা বলেন, ‘সমন্বয়কদের ধরলওবা কেন? আবার ধরে ওদের খাইয়ে মিডিয়ার প্রচার জাতির সঙ্গে মশকরা।’
জবাবে বৈঠকে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘হারুন সবসময় উল্টাপাল্টা কাজ করে। ওরে দ্রুতই বদলি করার জন্যও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দেওয়া দরকার।’
এ সময় ডিবির এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল রাতেই কথা বলবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
এমটিআই