• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

একদফা দাবিতে আজ থেকে শিক্ষার্থীদের ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ৪, ২০২৪, ১০:০০ এএম
একদফা দাবিতে আজ থেকে শিক্ষার্থীদের ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’

ঢাকা : কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে রোববার থেকে (৪ আগস্ট) ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ কর্মসূচি পালন করা হবে। শুরুতে ৯ দফা দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও গতকাল শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করেন।  

শনিবার (৩ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এক দফা দাবিতে রোববার (৪ আগস্ট) সারাদেশে সর্বাত্মক অসহযোগ শুরু হবে।

কোটা সংস্কার ও মেধাভিত্তিক সমাজ গঠনের দাবিতে আমরা বাংলাদেশের ছাত্র-তরুণরা সারাদেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। আমাদের ন্যায্য ও যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের হায়েনারা আমাদের বোনদের নির্মমভাবে পিটিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও দমন-পীড়নের কাজে লাগিয়ে সারা দেশে ছাত্রদের ওপর নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে। যার প্রতিবাদে আমরা সারাদেশে শাটডাউন কর্মসূচি দিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা দেখেছি, সরকার শাটডাউন কর্মসূচিতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন শুরু করেছিল। পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে নামিয়ে কারফিউ জারি করা হয়।’

সমন্বয়ক নাহিদ বলেন, ‘সেই রাতে আমরা কারফিউ ভাঙার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই ঘোষণা কোনো মিডিয়ায় প্রচার করতে দেওয়া হয়নি। ১৯ জুলাই আমাদের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। আমাদের জবরদস্তি করে আন্দোলন প্রত্যাহার ও সরকারের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দেয়। আমাদের হাসপাতালে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সেটিও না পেরে আমাদের ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে জোর করে আমাদের দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ানো হয়েছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের বক্তব্য বিশ্বাস না করে রাজপথ দখলে রেখেছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সমন্বয়কদের অনশনের কারণে সেই পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, খুনের হিসাবটা পর্যন্ত আমরা পাইনি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, ‘এই সরকার মানুষ খুন করেছে এবং লাশও গুম করেছে। যারা খুন করেছে তারা কীভাবে সেই খুনের বিচার করবে? আমরা এই সরকারের কাছে খুনের বিচার প্রত্যাশা করি না।’

সমন্বয়ক নাহিদ বলেন, ‘আমরা আজ এক দফার দাবিতে এখানে হাজির হয়েছি। আমরা জীবনের নিরাপত্তা, বাংলাদেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এক দফার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। সরকার এখন বলছে আলোচনার জন্য গণভবনের দরজা খোলা রয়েছে।’

নাহিদ আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, তিনি আগেই বুঝে গিয়েছেন যে গণভবনের দরজা খোলা রাখতেই হবে। আমরা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। শুধু পদত্যাগ করলেই হবে না, দেশে যত খুন-গুম হয়েছে তার দায়ে তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। শুধু শেখ হাসিনা নয়, পুরো মন্ত্রিপরিষদকে পদত্যাগ করতে হবে। এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে বিনাশ করতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই, যেখানে আর কখনোই কোনো স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসবে না।’

এই সমন্বয়ক বলেন, ‘আমাদের এক দফা হলো শেখ হাসিনাসহ এই সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিদায়। এই সরকারের লুটপাট ও গণহত্যাসহ সব অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা। সব রাজবন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা প্রয়োজনে জেল ভেঙে আমাদের ভাইদের মুক্ত করে নিয়ে আসবো। আমরা জনগণকে বলতে চাই, আপনারা স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র নাগরিক অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে যোগ দিন। পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় সংগঠিত হন। আমরা খুব দ্রুতই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাত্র নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য সর্বস্তরের নাগরিক, ছাত্র সংগঠন ও সব পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে মিলে সম্মিলিত মোর্চা ঘোষণা করব। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা শিগগির আপনাদের সামনে ঘোষণা করবো। আমরা জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন চলবে।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরকারকে কোনো ধরনের সহযোগিতা ও সমর্থর করব না। যদি কোনোভাবে ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ দেওয়া হয় তা আমরা প্রত্যাখ্যান করব। আমরা প্রয়োজনে গণভবন ঘেরাও করব। সবার প্রতি আহ্বান থাকবে আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে অসহযোগ ও রাজপথের কর্মসূচি পালন করবেন। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবেন। নিরাপত্তাবাহিনী, সেনাবাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা সবার কাছে আহ্বান থাকবে, জনগণ যদি সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে, সরকার যদি জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ায়, সেই সরকারের হুকুম মানতে আপনারা আর বাধ্য নন। সরকারকে সমর্থন না দিয়ে আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়ান। আমাদের মিছিলে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা হুকুমের আসামির বিচার চাই, আপনাদের কেন খুন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা সব গণহত্যার বিচার করবই।’

নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের পর সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের জরুরি নির্দেশনা দেন আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবেন না। বিদ্যুৎবিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না। সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অর্নিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না। সব ধরনের সরকারি সভা, সেমিনার আয়োজন বর্জন করবেন। বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোন ধরনের পণ্য খালাস করবেন না।’

সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টসকর্মী ভাই-বোনেরা কাজে যাবেন না। গণপরিবহণ বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না। জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববার ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে। পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যতীত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়োট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে।’

এই সমন্বয়ক বলেন, ‘বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যতীত অন্যান্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে। আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না। দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সব অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে। বিলাস দ্রব্যের দোকান, শো-রুম, বিপণিবিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট অর্নিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে হাসপাতাল, ফার্মেসি, জরুরি পরিবহণ সেবা যেমন-ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহণ, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহণ, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহণ সেবা চালু থাকবে।’

শুক্রবার (২ আগস্ট) রাতে ‘সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা’ দাবিতে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ফেসবুকে লাইভে কর্মসূচির ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান।

আলোচনা: প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে ‘না’

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, কোটা আন্দোলনকারীরা যদি চায়, আমি তাদের সাথে বসব, তাদের কথা শুনব। তাদের দাবি-দাওয়া এ পর্যন্ত মেনে নিয়েছি। আরও কিছু আছে কি না- সেটা আমার শুনতে হবে। আমি সংঘাত চাই না।

শনিবার (৩ আগস্ট) গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে সরকারপ্রধান এ আগ্রহের কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সামনে আমি বলছি, দেশবাসীর সামনে বলছি, কখনোই আমি দরজা বন্ধ করিনি। গণভবনের দরজা খোলা, যখনই আন্দোলনকারীরা বসতে চায়- আমি আবারও বলছি, আন্দোলনকারীরা যদি আসতে চায়, যেকোনো সময় আসতে চায়- আমি রাজি আছি, আলোচনা করতে পারে। দরকার হলে অভিবাবকদেরও নিয়ে আসতে পারে।

সংঘাতময় পরিস্থিতিতে শনিবার (৩ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে শিক্ষার্থীদের তরফে এই প্রস্তাব সরাসরি ‘না’ করে দেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

সংঘাতময় পরিস্থিতিতে শনিবার (৩ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে শিক্ষার্থীদের তরফে এই প্রস্তাব সরাসরি ‘না’ করে দেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

তবে ফেইসবুক বার্তায় সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, খুনি সরকারের কাছে বিচার চাওয়া বা সংলাপে বসারও সুযোগ আর নেই। ক্ষমা চাওয়ার সময়ও পার হয়ে গেছে।

এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ঘোষণা হয় এক দফার; সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক আসে।

মানুষের ঢলের মধ্যে সরকার পতনের ডাক : বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সমাবেশ আহ্বান করা হয় শুক্রবারই।

শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানে এক দফার পক্ষে স্লোগান উঠতে থাকে।

শহীদ মিনারমুখি মিছিলেও সেই স্লোগান ছিল মুখ্য। সেই সমাবেশে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছিলেন তাদের অভিভাবকেরা, শিক্ষক, শিল্পী বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মী।

কানায় কানায় পূর্ণ ছিল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, একপর্যায়ে মানুষের ঢল ছাপিয়ে যায় দুই পাশের রাস্তার ওপরেও। সেই জনতার ঢলের মধ্যে সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন সংগঠনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, আমাদের নয় দফা এখন ‘এক দফায়’ পরিণত হয়েছে। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আগামীকাল আমরা অসহযোগ আন্দোলন করব। পাশাপাশি দেশের সর্বত্র বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে।

জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই ‘খুনি সরকারকে’ কোনোভাবে আর সমর্থন দেবেন না। যদি কোনোভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, কোনোভাবে কারফিউ বা জরুরি অবস্থা দেওয়া হয়, আমরা বলে দিচ্ছি, প্রয়োজনে গণভবন ঘেরাও করে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হবে।

কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে প্রাণহানি, সংঘর্ষ থামার পর শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে লাগাতার কর্মসূচির মধ্যে এবার চূড়ান্ত এই দাবি প্রকাশ করা হল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিশাল এই সমাবেশে।

শুধু শেখ হাসিনা নয়, পুরো মন্ত্রিপরিষদও পদত্যাগ করতে হবে বলে দাবি করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে।

আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে চাই যেখানে আর কখনও কোনো ধরনের ফ্যাসিজম, স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসবে না।

শেখ হাসিনা এবং এ সরকারের ‘লুটপাট, দুর্নীতি এবং গণহত্যার’ বিচার করা হবে ঘোষণা দিয়ে বলেন, আগের সকল হত্যা গুম নিপীড়নেরও বিচার করা হবে। সকল রাজবন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা প্রয়োজনে ‘জেল মুক্তি’ করে আমাদের ভাইদের নিয়ে আসব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ‘ছাত্র নাগরিক অভ্যুত্থানের’ জন্য নাগরিক ছাত্রসংগঠন এবং পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে মিলে ‘সম্মিলিত মোর্চার’ ঘোষণা দিয়ে নাহিদ বলেন, “আমরা আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা আমরা খুব শিগগিরই হাজির করব।

অসহযোগের রূপরেখা : রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক যে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা এসেছে, তার রূপরেখা কী হবে সে বিষয়ে জানানো হয় সমাবেশ থেকে।

সেই রূপরেখা তুলে ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন–

>> কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবেন না।

>> বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না।

>> সকল ধরনের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কল কারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন।

>> শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

>> প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিটেন্স দেশে পাঠাবেন না।

>> সকল ধরনের সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন।

>> বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না।

>> দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টকর্মী ভাই বোনেরা কাজে যাবেন না।

>> গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না।

>> জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববারে ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে।

>> পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যতীত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে।

>> দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সকল অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে।

>> বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যতীত অন্যান্য বাহিনী সেনানিবাসের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে।

>> আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না।

>> বিলাস দ্রব্যের দোকান, শো রুম, বিপণিবিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে।

তবে হাসপাতাল, ফার্মেসি, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে।

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানানো হয় সমাবেশে।

বিক্ষোভে অভিভাবকরাও : রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর, শান্তিনগর, আফতাবনগর, প্রগতি সরণি, বাড্ডা, রামপুরা, শনির আখড়া এলাকায় যে বিক্ষোভ হয়েছে সেখানে আন্দোলকারীদের ওপর গুলি বন্ধের দাবি জানিয়ে জাতীয় পতাকা এবং প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান ধরা হয়।

কোথাও কোথাও এই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অভিভাবকরা। ঢাকার এই বিক্ষোভ কর্মসূচির সব পয়েন্টে পুলিশের সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে।

সায়েন্স ল্যাব মোড়ে সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নিলেও কর্মসূচিতে তারা কোনো বাধা দেয়নি। বিক্ষোভে আন্দোলনকারীরা ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’সহ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

দুপুরে যাত্রাবাড়ীর শনির আখরা ও কাজলা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের উপরেও যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আফতাবনগরে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনের রাস্তায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিাবকেরাও রাস্তায় অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে রামপুরা ব্রিজ থেকে আফতাবনগর যাওয়ার রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দুপুর ২টার দিকে রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত সড়কে নেমে আসেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী। এ সময় রাস্তায় পুলিশ অবস্থান করলেও ছাত্রদের উপস্থিতি বাড়লে তারা সরে যান।

মিরপুর ১০ নম্বরে বেলা ১১টার পরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেন।

যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে প্রগতি সরণি সড়কেও শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে ও শান্তিনগর মোড়েও তাদের অবস্থান দেখা যায়।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে জড়ো হন সংগীত শিল্পীদের অনেকে। স্লোগানে স্লোগানে সংহতি জানান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে। তখন সাংস্কৃতিক কর্মীদের কেউ কেউ যোগ দেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

শিল্পকলা একাডেমির সামনে জড়ো হওয়ার পর নাট্যসংগঠন প্রাচ্যনাটের কর্মীরা সাদা কাপড় নিয়ে পদযাত্রা করে যোগ দেন শহীদ মিনারের জমায়েতে।

এক দফা নিয়ে সরকার কী ভাবছে?

রাতে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তিনি জানান, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে কারফিউ শিথিলের সময় আরও দুই ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। রোববার সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। এ নিয়ম চলবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত।

এসময় তার কাছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ঢাকার পরিস্থিতি তুলে ধরে এক সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন আন্দোলনকারীরা সম্প্রতি আপনিসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা স্বাভাবিক রাখতে আপনারা পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে ‘স্যাক্রিফাইস’ করবেন কি না?

এর জবাবে কামাল বলেন, প্রয়োজন হলে সেরকম পরিস্থিতি যদি আসে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন, আমরা সব সময় দেশের জন্য কাজ করি, সেটা করব।

রোববার (৪ আগস্ট) কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকায় সরকারকে ‘অসহযোগ’ এর কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। এ নিয়ে পুলিশের প্রস্তুতি এবং তা নস্যাৎ করা হবে কি না- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা নস্যাৎ করতে চাই না তো। দেশের জনগণ আন্দোলনে যুক্ত হয় হবে। সেগুলো আমরা নস্যাৎ করতে চাই না।

তারা কোনো আক্রমণের শিকার হবে না কি না-আরেক প্রশ্নে কামাল বলেন, আপনাকে যদি কেউ আক্রমণ করে তাহলে আপনি বসে থাকবেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সেলফ ডিফেন্সের অধিকার দেওয়া আছে। আপনারও সেলফ ডিফেন্সের অধিকার আছে।

নেমেছে আওয়ামী লীগ, আরও নামার ঘোষণা : শনিবার ঢাকার বিভিন্ন সড়কে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও মিছিল দেখা গেছে। বিভিন্ন জায়গায় তাদের অবস্থানও দেখা গেছে।

ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ারে চেয়ার নিয়ে বসে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়েও আওয়ামী লীগের মিছিল দেখা গেছে সকালে। মোহাম্মদপুরে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। তবে কোথাও গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি।

রোববার (৪ আগস্ট) ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে এবং দেশের সব মহানগর এবং জেলায় রোববার জমায়েত কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শনিবার তাদের যে শোক মিছিল হওয়ার কথা ছিল, সেটি পালিত হবে সোমবার। ওইদিন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত মিছিল করবে ক্ষমতাসীন দলটি।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেছিলেন, কেবল ঢাকা না, জেলায় জেলায় মাঠে নামার এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ছাত্রদের আন্দোলেন সঙ্গে আজকের যে ‘এক দফা’ দাবি তারা করেছে এর কোন যৌক্তিকতা নেই। এটা রাজনৈতিক কর্মসূচি, রাজনৈতিকভাবে আমরা মাঠে থাকব।

আওয়ামী লীগও মাঠে নামছে, তাতে সংঘাতের আশঙ্কা আছে কি না, এই প্রশ্নে রহমান বলেন, দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আমরা থাকব।

দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ঢাকার প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে আমাদের অবস্থান থাকবে, এমনকি পাড়া মহল্লায়ও নেতাকর্মীরা থাকবে। আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে কাল (রোববার) থেকেই মাঠে থাকব, কর্মসূচি দলীয়ভাবে ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে, থানা-ইউনিয়নে মাঠে থাকবে।

গুজবে কান নয়: সেনাপ্রধান

যে কোনো পরিস্থিতিতে জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

তিনি গুজব সম্পর্কে সচেতন থেকে ‘সততা, সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতার’ সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশও দিয়েছেন।

শনিবার (৩ আগস্ট) সেনা সদরে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে 'অফিসার্স অ্যাড্রেস' গ্রহণ করার সময় তিনি এই নির্দেশ দেন বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

সেখানে বলা হয়, সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেশের চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর আলোকপাত করেন এবং সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

সেনাপ্রধান বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণের আস্থার প্রতীক। জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের যে কোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।

সংঘাত-প্রাণহানি চলছেই : আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে শনিবার দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তায় এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তারর নাম জাকির হোসেন, বাড়ি সাতক্ষীরায়। তিনি লেপ-তোষকের ব্যবসা করতেন।

শ্রীপুর থানার ওসি আকবর আলী খান জানান, মাথায় আঘাত পেয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (৩ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে আন্দোরনকারীরা মাওনা চৌরাস্তার পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে অবস্থান নেয়। আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা মাওনা চৌরাস্তা ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নিলে উত্তেজনা দেখা যায়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘাত তৈরি হয়। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা তিনটি পুলিশ বক্স ও পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠেছে মহানগর আওয়ামী লীগসহ ও সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর মিলেছে।

আহতদের মধ্যে সাতজন গুলিবিদ্ধ বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে নগরীর রেসকোর্স পুলিশ লাইনস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে আহত শিক্ষার্থীদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চান্দিনার এসিল্যান্ডের সরকারি গাড়ি ভাঙচুরের পর আগুন লাগিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।

সংঘর্ষ হয়েছে সিলেটেও। দুপুর থেকে শিক্ষার্থীরা নগরীর চৌহাট্টায় বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় অন্যরাও। এক পর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। জবাবে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদুনে গ্যাস ও বাবার বুলেট ছোড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

নগরীর চৌহাট্টা, দরগাগেইট, মিরবক্সটুলা ও জিন্দাবাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা রাস্তায় আগুন দেয়।

রাজশাহীতে এদিন তিনটি পুলিশ বক্সে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীদের পিটুনিতে আহত হয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য সাইফুল ইসলাম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের সমন্বয়কারী রাকিব হাসান অর্ণবকে পিটিয়ে জখম করে আন্দোলনকারীরা। অর্ণব কয়েকদিন আগে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ায় তার ওপর হামলা করা হয়। তাদের দুইজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নওগাঁ, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘাতের খবর এসেছে। টাঙ্গাইলে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক বন্ধ করে দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীরা।

চট্টগ্রামে পাল্টাপাল্টি হামলা : সংঘাতময় পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনন ও চট্টগ্রাম-১০ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে হামলা হয়।

শনিবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেইটের মেয়র গলিতে মিছিল থেকে শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় হামলা করা হয়। তারা বাড়ির গেইট ভেঙে প্রবেশ করে এবং বাড়ির নিচে থাকা দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে।

চশমা হিলে নওফেলের এটি পৈত্রিক নিবাস। এটি তার বাবা প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও তিনবারের সিটি মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবন।

সন্ধ্যার পর সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বহদ্দারহাটের বাসভবনে হামলা চলে।

নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকায় এই হামলার সময় মেয়র বাড়িতেই ছিলেন। হামলাকারীরা বাইরের ফটক ভেঙে ফেললেও ভেতরের ফটক ভাঙতে পারেনি। তার নিরাপত্তায় থাকা পুলিশের সদস্যরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন।

এর কিছুক্ষণ পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরুসহ বাসায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায়।

চট্টগ্রামে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা ইদ্রিস আলী জানান, রাত সাড়ে ৮টার পর মেহেদীবাগে আমীর খসরুর বাসায় হামলা হয়। সেখানে থাকা গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।

এর কিছুক্ষণ আগে নগরীর বাদশা মিয়া রোডে হামলা হয় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেনের বাসায়। সেখানেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর বাসায়ও হামলা হয়। সেখানে থাকা গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়।

নগরীর চট্টেশ্বরি এলাকায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় নেতা তার পুত্র মীর হেলালের বাড়িতেও হামলার অভিযোগ করে চট্টগ্রাম বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা ইদ্রিস আলী।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!