• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

থানা আক্রমণ, সারা দেশে গুলিতে নিহত ৯৭ জন


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ৬, ২০২৪, ১২:৪৭ এএম
থানা আক্রমণ, সারা দেশে গুলিতে নিহত ৯৭ জন

ঢাকা : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার দিনেও সহিংসতায় সারা দেশে কমপক্ষে ৯৭ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। 

এর মধ্যে বিক্ষুব্ধ জনতা থানা আক্রমণ করতে গেলে প্রতিরোধের চেষ্টায় পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৪১ জন নিহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এর মধ্যে বিক্ষুব্ধ জনতা উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাও করতে গেলে গুলিতে ১০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যাত্রাবাড়ী থানায় হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তাদের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। রাজধানীর বাইরে বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ও পুলিশের স্থাপনায় আক্রমণ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অনেক স্থানে পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে।

এ ছাড়াও নিহতদের মধ্যে পুলিশ ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যার খবর পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকেলে শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা উত্তরা-পূর্ব থানা ঘিরে রাখে। তখন থানার ছাদ থেকে সাদা পোশাকে ২ জনকে রাবার বুলেট ও গুলি চালাতে দেখা যায়। উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সেখানে ১০ জনের মরদেহ রয়েছে। বহু লোক আহত হয়ে এসেছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এদিকে সোমবার (৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর চাঁনখারপুল, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪১ লাশ : গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বজন ও পথচারীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ৪১ জনকে নিয়ে আসেন। তাদের অনেকেই হাসপাতালে আসার আগে মারা যান। অনেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহতদের মধ্যে ২১ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। 

তাদের মধ্যে ১৩ জন নিহত হন যাত্রাবাড়ী ও আশপাশের এলাকায়। নিহদের মধ্যে কাজলা এলাকা থেকে রাসেল (২৮), আব্দুর রহমান (২২), যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে মো. আজমত (৪০), মোহন (২২), ইয়াসিন (২৪), শাহিন (২২), শাকিল (২১), আব্দুল নুর (৩০), লিটন উদ্দিন (৩২), শাওন (১৪), কুতুবখালী থেকে সাইফুল ইসলাম তন্ময় (২২), শনিরআখড়া থেকে আবু ও আব্দুল হান্নানের (৫০) মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। এ ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ থেকে মো. রাকিব (২২), আব্দুল্লাহপুর থেকে মানিক মিয়া (২৫), বাংলামটর থেকে ইসমাইল রাব্বি (২২), বংশাল থেকে রনি (১৭) ও হামিদুর রহমান (২২), শরীয়তপুর নড়িয়া থেকে মনোয়ার (৫০)কে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, অপর ২২ মরদেহ কাজলা, যাত্রাবাড়ী, বংশাল এবং উত্তর বাড্ডা এলাকা থেকে এলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৫ জন নিহত : ঝিনাইদহ ব্যুরো জানায়, ঝিনাইদহ শহরের স্টেডিয়াম পাড়ায় সোমবার বিকেলে বিক্ষুব্ধ জনতা সদর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হিরণের বাড়ি ঘেরাও করতে গেলে তাদের উপর নির্বিচারে গুলি করা হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ওই বাড়িতে হামলা চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় আ.লীগ নেতার গাড়িচালক আক্তার হোসেনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত আক্তার হোসেনের বাড়ি সদর উপজেলার পোড়াহাটী ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামে। এছাড়া আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম হিরণের বাড়ি থেকে ছোড়া গুলিতে ৬ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন ২৫ জন। পরবর্তিতে বিক্ষুব্ধ জনতা ওই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে শহিদুল ইসলাম হিরনসহ আরও ৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বিক্ষুব্ধ জনতা হিরনের লাশ ভ্যানে করে এনে শহরের প্রাণকেন্দ্র পায়রা চত্বরে নিয়ে যায়। অন্যদের লাশ ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে হামলার সময় আওয়ামী লীগ নেতা হিরনের ছোড়া গুলিতে আহত হন- আরাপপুরের ইমরান হোসেন, আইয়ুব হোসেন, চাপড়ি গ্রামের রাকিবুল হোসেন, রায়হান উদ্দীন, বেলেডাঙ্গা গ্রামের সিরাজুল, উদয়পুরের বাদশা, আদর্শপাড়ার নাফিজুল, আরাপপুরের ইয়াসিন, আলিফ, আদর্শপাড়ার তরি, গোয়ালপাড়ার তারিক ও পোড়াহাটী গ্রামের মাহিমসহ অন্তত ২৫ জন। এদের মধ্যে ১৪ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছে। বাকি ১১ জন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। হতাহতের খবর নিশ্চিত করেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নুসরাত জাহান। এদিকে সকাল থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের পাশাপাশি বিএনপি ও জামায়াতসহ সাধারণ মানুষ রাস্তায় অবস্থান গ্রহণ করে। দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পালানোর খবর ছড়িয়ে পড়লে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। তারা ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। এক পর্যায়ে আ.লীগ নেতাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। জনতা শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভেঙে সেখানে স্বাধীনতাচত্বর লেখা ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়। তবে শুক্রবার দুপুর থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যকে বাইরে দেখা যায়নি।

কুষ্টিয়ায় সহিংসতায় প্রাণ গেছে ৭ জনের : কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭ বিক্ষোভকারী। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলকারী ও সাধারণ জনতা কুষ্টিয়া মডেল থানায় আগুন দেয়। ভাঙচুর করা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের পিটিআই রোডের বাড়িতে। বিকেল ৩টার পর মজমপুর গেটে শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ। দিনব্যাপী চলা সহিংসতায় অন্তত ৬ বিক্ষোভকারী প্রাণ হারান। আহত হন অন্তত ৫ শতাধিক বিক্ষোভকারী।

সোনাইমুড়ীতে পুলিশসহ ৮ জন নিহত : সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, সোনাইমুড়িতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ২ পুলিশ সদস্যসহ ৮ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকাল সোয়া চারটার দিকে সোনাইমুড়ী থানায় হামলা করতে গেলে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারী সূত্রে জানা যায়, থানায় আওয়ামী লীগের নেতারা আছেন এমন সংবাদে বিকাল সোয়া চারটার দিকে আন্দোলনকারী, স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা থানা ঘিরে ফেলে। তারা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে আন্দোলনকারীর পিছু হটে এবং থানার সামনের দোকানপাট আগুনে পুড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে তারা থানা চত্বরে ঢুকে পুলিশের গাড়ি ও মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। এ সময় পুলিশ গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই ২ জনের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ ১৮ জনকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় মারা যান আরও ২ জন। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়। সংঘর্ষে ২ পুলিশও নিহত হয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন এসআই জাকির।

শ্রীপুরে বিজিবি-জনতা সংঘর্ষে নিহত ৬ : শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে সংঘর্ষে ৬ জন আন্দোলনকারী নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এতে অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী ও উৎসুক জনতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ওই সময় বিজিবির তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। গতকাল দুপুর থেকে শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ মোড় ও বাংলাদেশ ফিলিং স্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন— কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সিফাতউল্লাহ (২২), শ্রীপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের দারগারচালা গ্রামের শরীফ আহমেদ (২০), ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার কাওসার (২৮), নান্দাইল উপজেলার জুয়েল মৃধা (৩০)। তবে অপর দুজনের নাম পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহ বিভাগে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যের কয়েকটি বাসে করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছিল। বাসগুলো মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় এলে আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা আটকে দেয়। দুটি বাসে থাকা প্রায় ৮০ বিজিবি সদস্যকে মুলাইদ এলাকার বাংলাদেশ ফিলিং স্টেশনের সামনে আটকে দেয়। এ সময় আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা তাদের ভারতীয় পুলিশ বা বিএসএফ সদস্য ও তারা হিন্দি ভাষায় কথা বলে গুজব ছড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যের কাছে থাকা অস্ত্রসহ গোলাবারুদ আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা বস্তায় ভরে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা বিজিবি সদস্যদের উপর চড়াও হয়। ওই সময় বিজিবি সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি করে। দুপুর থেকে কয়েক ধাপে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে আন্দোলনকারী ও উৎসুক জনতার মধ্যে ৬ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ফরিদগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নিহত ১ : ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে বিক্ষুব্ধরা থানায় হামলার চেষ্টাকালে পুলিশের গুলিতে শাহাদাত (২০) নামে এক ছাত্রনেতা নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল করে। বিকালে একটি বিক্ষোভ মিছিল থানায় প্রবেশের চেষ্টাকালে গেট ভেঙে ফেললে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালালে শাহাদাত (২০) ও এমরান হোসেন (৩৮) নামে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়। এতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আহতদের দ্রুত ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত চাঁদপুর রেফার করলে পথেই তার মৃত্যু হয়।

গাজীপুরে সংঘর্ষে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু : গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে তফাজ্জল হোসেন নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

কয়রায় উপজেলা চেয়ারম্যানকে হত্যা : কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, খুলনার কয়রায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম মোহসিন রেজাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কয়রা সদরের বাসায় হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা তার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে কয়রা বাজার থেকে একটি আনন্দ মিছিল তার বাসার দিকে গেলে সেখান থেকে মিছিলের উপর গুলি ছোড়া হয়। এতে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এর জেরে বিক্ষুব্ধ জনতা তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে। এরপর তার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা।

সিলেটের গোলাপগঞ্জে দুজন নিহত : সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটের গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা আরেকজন নিহত হয়েছেন।

রাজশাহীতে এক শিক্ষার্থী নিহত : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আর গুলিবিদ্ধ হয়ে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪০ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত সবুজ বেসরকারী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গতকাল সকালে মিছিলের সময় ওই শিক্ষার্থী নিহত হন।

হবিগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ৬ : হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গে পুলিশ আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় উত্তেজিত জনতা বানিয়াচং থানায় হামলা, ভাঙচুর করেছে। নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বানিয়াচং উপজেলার হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীমা আক্তার। স্থানীয়রা জানান, সোমবার দুপুরে কারফিউ ভেঙে কোটা আন্দোলনকারীরা মিছিল করতে চাইলে পুলিশ বাধা প্রধান করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধলে পুলিশের গুলিতে ৬ জন নিহত হন।

যশোরে আবাসিক হোটেলে অগ্নিসংযোগে নিহত ৬ : যশোর ব্যুরো জানায়, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচতারকা হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনালে’ অগ্নিসংযোগ করেছে বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণকারী বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে দগ্ধ হয়ে ৬ জন নিহত ও ২০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। সোমবার বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। এ সময় হোটেলের ভিতরে অনেকই আটকা পড়েন। পরে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকারী দল ১৪ তলা বিশিষ্ট হোটেলের ছাদ থেকে কয়েকজনকে উদ্ধার করে। আরও কয়েকজনকে ১৪ তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে উদ্ধারের জন্যে নিশানা উড়াতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি দল সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘জাবির হোটেলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে পাঁচজনের মরদেহ হাসপাতাল মর্গে আনে ফায়ার সার্ভিসের টিম। এছাড়া একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হোটেলে অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ২০ জনের মতো। আহতদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক।’

চৌদ্দগ্রামে পুলিশের গুলিতে নিহত ১ : চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা চৌদ্দগ্রাম থানায় হামলা চালালে কমপক্ষে ২০ জন গুলিবিদ্ধ হন। এদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জামসেদুর রহমান মিয়াজী জুয়েল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

ধামরাই রণক্ষেত্র, নিহত ৫ : ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ধামরাইয়ে শরীফবাগ বাজারে চাল গুঁড়ি করতে এসে সাজেদা আক্তার নামে এক গৃহবধূ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় ধামরাই পৌর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আজ (৫ আগস্ট) দুপুর ১২টার সময় এ ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূ সাজেদা আক্তার (৪০) শরীফবাগ এলাকার বাসচালক মো. শওকত আলীর স্ত্রী। ওই ঘটনার জেরে বিক্ষুব্ধ জনতা মাইকিং করে হাজার হাজার লোক সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরে পুলিশ নির্বিচারে নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার উপর রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও বন্দুকের গুলি বর্ষণ করে। এতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে পৌরশহরের গোয়ারীপাড়া মহল্লার অজ্ঞাত পরিচয় এক তরুণ, ধামরাই হার্ডিঞ্জ সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ত্রিমোড়ে এক যুবক এবং ধামরাই সরকারি হাসপাতালের বারান্দায় আরেক যুবকসহ গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

টাঙ্গাইলে গুলিতে নিহত ৩ : টাঙ্গাইলে পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল সদর থানায় দুজন এবং বিকেলে ধনবাড়ী থানার সামনে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ সময় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। তাদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার রাত ৯টায় টাঙ্গাইলের কোটা আন্দোলনের সমন্বয়করা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, বিকেলে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে টাঙ্গাইল সদর থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ মিছিলে গুলি করে। এতে দুজন শিক্ষার্থী নিহত হন। এছাড়া ধনবাড়ীতেও পুলিশের গুলিতে একজন শিক্ষার্থী মারা যান।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, গুলিবিদ্ধ দুজনের লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে পুলিশের দাবি, সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় প্রবেশ করে পুলিশের উপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এছাড়া ধনবাড়ীতেও থানায় হামলা করার সময় পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন।

ভৈরবে তিনজনের প্রাণহানি : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জান্নাত রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্টে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ভৈরব ফায়ার সার্ভিস। এদিকে ভৈরব থানা ও আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ঢাকার সাভারে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিনিধি জানিয়েছেন।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!