• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১
হাল ধরতে দেশের মাটিতে ইউনূস

দমন-পীড়ন সরকারের কাজ নয়


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ৮, ২০২৪, ০৩:১৮ পিএম
দমন-পীড়ন সরকারের কাজ নয়

ঢাকা : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিতে দেশে ফিরলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস।

ফ্রান্সের প্যারিস থেকে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছান।

২০০৬ সালে নোবেল জয়ের পর অধ্যাপক ইউনূসকে ঘিরে যে বাঁধ ভাঙা আনন্দের জোয়ার বয়েছিল, দেড় যুগ পরে সেই উচ্ছ্বাসের আবহ ফিরল দেশে।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ও নৌ বাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান, নতুন আইজিপি ময়নুল ইসলাম এবং র‌্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে অধ্যাপক ইউনূসকে অভ্যর্থনা জানান।

সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল শিক্ষার্থীদের যে প্ল্যাটফর্ম, সেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহও উপস্থিত ছিলেন। মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তারা তুলে দেন ফুলের তোড়া।

সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, উবিনিগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতা, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মোহাম্মদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন বিমানবন্দরে।

গ্রামীণ চেকের ফতুয়া ও কটি পরিহিত ৮৪ বছর বয়সী অধ্যাপক ইউনূস হাস্যোজ্জ্বল মুখে হাত মেলান সবার সঙ্গে।

আরো অনেক শিক্ষার্থী ফুল আর জাতীয় পতাকা হাতে অপেক্ষা করছিলেন বিমানবন্দরের বাইরের রাস্তায়। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও অনেকে দাঁড়িয়েছিলেন ব্যানার হাতে।

বিমানবন্দর থেকে অধ্যাপক ইউনূস যাচ্ছেন তার গুলশানের বাসায়। সামরিক প্রোটোকলে নিরাপত্তা দিয়ে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি থাকবেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়।

ছাত্র জনতার বিপুল গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের সরকারের পতনের পর চার দিন ধরে সরকার নেই দেশে। সংবিধানে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা না থাকলেও নতুন নির্বাচনের প্রয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীও তাতে সমর্থন দিচ্ছে।

এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাতে সম্মতি দেন।

সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান রোববার বলেছেন, এ সরকারের উপদেষ্টা হতে পারে ১৫ জনের মত। বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় বঙ্গভবনে তাদের শপথ হবে।

দেশের পরিস্থিতি যখন টালমাটাল, অলিম্পিকের আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিতে অধ্যাপক ইউনূস ছিলেন প্যারিসে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিতে বাংলাদেশ সময় বুধবার রাতে প্যারিস থেকে দেশের পথে রওনা হন তিনি।

গত সরকারের সময়ে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে ৬ মাসের যে সাজা দেওয়া হয়েছিল, বুধবার তা বাতিল করেছে শ্রম আপিল আদালত।

দমন-পীড়ন সরকারের কাজ নয়: বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশে ফিরে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাইঞ্জে সংবাদ মাধ্যমের সামনে কথা বলতে গিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সরকার মানে দমন-পীড়নের যন্ত্র নয়। মানুষ মনে করে, সরকার মানে হলো ভয়ের কিছু।

এর আগে আন্দোলনে সফলতার জন্য তরুণদের প্রতি সব প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। ড. ইউনূস বলেন, তরুণরা দেশকে রক্ষা করেছে, পুনর্জন্ম দিয়েছে। নতুন বাংলাদেশ নিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে চাই।

আবু সাঈদের কথা স্মরণ করে কাঁদলেন ড. ইউনূস : ঢাকা: শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দেশে ফিরেছেন। বেলা ২টা ১০ মিনিটের কিছু পরে তিনি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।

এরপর সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের কথা বলতে গিয়ে কেঁদেছেন ড. মুহম্মদ ইউনূস।

তিনি আরো বলেন, সাহসের সঙ্গে আবু সাঈদ যেভাবে পুলিশের গুলির সামনে দাঁড়িয়ে গেল এটা অবিশ্বাস্য। এরপর থেকে কোনো যুবক-যুবতী আর পিছু হটেনি। নতুন স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। প্রতিটি মানুষের ঘরে সুফল পৌঁছে দিতে হবে। না হলে এর কোনো দাম নাই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অর্থ হলো সবার পরিবর্তন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য ১৫ জনের মতো হতে পারে বলে গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

কে কে এই সরকারে থাকছেন, তা জানা যায়নি। বিভিন্ন নামের তালিকা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা আছে। সদস্যসংখ্যার পর যেটি আলোচনা, তা হলো, এ সরকারের মেয়াদ কত দিন হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ১৫ জনের নামের একটি তালিকা তৈরি করেছে বলে জানা গেছে। ড. ইউনূস আজ দেশে ফেরার পর তার সঙ্গে আলোচনা করে তালিকাটি চূড়ান্ত হবে।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ছাত্র আন্দোলনের নেতারা গতকাল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেখা করে তালিকার বিষয়ে কথা বলেছেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় গত সোমবার। এরপর তিন দিন ধরে দেশে কার্যত কোনো সরকার নেই।

এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে: ঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পুনর্জন্মে যে বাংলাদেশ পেলাম সে বাংলাদেশ যেন পূর্ণতা পায়। যে বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ নতুন করে বিজয় পেল তা যেন পূর্ণতা পায়। দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

এসময় তিনি তরুণ সমাজকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, তরুণ সমাজ যেন নিজেদের মতো করে দেশটা সাজাতে পারে।

এসময় তিনি রংপুরের আবু সাঈদের কথা স্মরণ করে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ড. ইউনূসকে বহনকারী ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

বিমানবন্দরে ড. ইউনূসকে স্বাগত জানিয়েছেন তিন বাহিনীর প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেবে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন বিজয় দিবস সৃষ্টি করল তরুণ প্রজন্ম : নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আজ আমাদের গৌরবের দিন। যে বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজকে নতুন বিজয় দিবস সৃষ্টি করল এটা সামনে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’  

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ড. ইউনূস।

অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, ‘তরুণরা এ দেশকে রক্ষা করেছে, পুনর্জন্ম দিয়েছে। আমরা এগিয়ে যেতে চাই। এরা এ দেশকে রক্ষা করেছে। এ স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে। এ স্বাধীনতার সুফল আমাদের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।’  

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সবাইকে দেশের এ স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। আমাদের সরকারকে জনগণের আস্থায় নিতে হবে।’

দেশে কারও ওপর কোনো হামলা হবে না— আস্থা রাখতে বললেন ড. ইউনূস : বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বেলা ২টা ১০ মিনিটের দিকে তিনি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।

দেশে ফিরে বিমানবন্দরেই সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি।

সম্মেলনে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দেশবাসী আমার ওপরে বিশ্বাস রাখেন, ভরসা রাখেন, দেশে কারও ওপর কোনো হামলা হবে না।’

শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন বিজয় দিবস শুরু করল। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যারা এটি করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, তারা (সমন্বয়কেরা) দেশকে রক্ষা করেছে। দেশকে পুনর্জন্ম করেছে।‘

এ সময় রংপুরে গুলিতে নিহত বেগম রোকোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে স্মরণ করে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তিনি।

ড. ইউনূসকে স্বাগত জানিয়েছেন তিন বাহিনীর প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অন্য সমন্বয়কেরা। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও স্বাগত জানিয়েছেন।

এদিকে ড. ইউনূসের দেশে ফেরার সময় বিবেচনায় রেখে আজ রাত আটটার দিকে বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!