ঢাকা : তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কার্যত সরকারবিহীন চার দিনে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা; জেলায় জেলায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি, মন্দির ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে।
একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় নেতাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার খবরও এসেছে। কোনো কোনো জেলায় বিএনপি নেতাদের বাড়িঘরেও হামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) পর্যন্ত ভাঙচুর-লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে কোথাও কোথাও।
হামলা হয়েছে থানাতেও; অস্ত্র লুট, পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আক্রমণ করা হয়েছে পুলিশ সদস্যদের ওপর। মঙ্গল ও বুধবারেও অনেক জায়গা থেকে পুলিশের লাশ ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ অবস্থায় গত কয়েকদিন থেকে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
কয়েকটি কারাগারে বন্দি বিদ্রোহের পাশাপাশি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অনেক জঙ্গি, দাগি আসামি পালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অস্ত্র ও গুলি লুট হয়েছে।
বেশ কয়েকটি জেলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিরূপ পরিস্থিতিতে সংবাদকর্মীরাও নিরাপদ বোধ করছেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফলে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের সঠিক ও সব তথ্য সংগ্রহ করাও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
তারা বলছেন, দেশের অনেকে স্থানে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুক্রবার (৯ আগস্ট) পর্যন্ত অনেক জায়গাতেই ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খোলেনি। সড়কে মানুষের চলাচল ছিল কম। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়িঘর থেকে বের হয়নি।
সন্ধ্যার পর মফস্বলের অনেক সড়কই ফাঁকা দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকে এলাকাছাড়া।
অনেক হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা, মন্দির, উপাসনালয় ঘিরে রাতের বেলায় সাধারণ মানুষের পাহারা দেখা গেছে। তাতে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও যোগ দিচ্ছেন। একে ‘আতঙ্কের মধ্যেও ভরসা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন কেউ কেউ।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিরা হামলা, সহিংসতার খবর পাঠিয়েছেন। ধারাবাহিকের এ পর্বে আরও নয় জেলার চিত্র তুলে ধরা হল।
ফরিদপুর : ৪ অগাস্ট দুপুরে জেলা সদর ও সালথা, নগরকান্দা এবং চরভদ্রাস থেকে কয়েক হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে শহরের দিকে আসে। এ সময় শহরে বীরমুক্তিযোদ্ধা লাভলু সড়কে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সেখানে আওয়ামী লীগের কর্মীদের পিটিয়ে আহত করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল। বিক্ষোভকারীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে অগাস্ট মাসের জন্য তৈরি করা তোরণ, বিলবোর্ড ও ব্যানার ভাঙচুর করে।
পরদিন সোমবার বিকালে ফদিরপুর কোতোয়ালি থানায় ভাঙচুর ও অস্ত্র লুট করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য ও ৭ই মার্চের ভাস্কর্য।
বিকালে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ শহরের আলীপুরের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামিম হকের বাড়ি, সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইসতিয়াকের বাড়ি, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাব বোসের বাড়ি এবং যুবলীগ নেতা রাহাদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করে। এদিন আবারও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
মধুখালী ও সদরপুর উপজেলা থানা ভবনে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুরাদ হোসেনকে লাঞ্ছিত করে বিক্ষোভকারীরা। বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়েও ভাঙচুর করা হয়।
ফরিদপুর শহরতলীর ধুলদির এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামিম হকের প্রতিষ্ঠিত ‘হল্যান্ড চিল্ডেন হাউজে’ (এতিম খানায়) হামলা-লুটপাট হয়। হামলাকারীরা ট্রাকে করে এতিম খানার মালপত্র লুট করে নিয়ে যায়।
মঙ্গলবার সদরপুর উপজেলার কৃষ্টপুর এলাকায় ১০-১২টি হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়িতে হামলা ও লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার বেশ কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরবাড়ির দরজা-জানালা ও টিন খুলে নেওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
বুধবার (৭ আগস্ট) বোয়ালমারীর কয়েকশ মানুষ মোটরসাইকেলে করে আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদে হামলা-ভাঙচুর করে।
শরীয়তপুর : সোমবার শরীয়তপুর জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়। সদ্য সাবেক শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর বাড়িতে লুটপাট-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হামলাকারীরা।
ভেঙে ফেলা হয় জেলা শহরের ধানুকা মনসা বাড়ির একটি মন্দির। শরীয়তপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র বাচ্চু বেপারীর ক্লাবে লুটপাট-অগ্নিসংযোগ হয়। ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ শেখের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও ঘড়িসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে দখল করা হয়েছে। পুরো উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। ভাঙচুর-লুটপাট হয়েছে সাবেক পৌর মেয়র শহীদুল ইসলাম বাবু রাড়িতেও।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চরকুমারীয় ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মো. ফারুক মোল্লাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় ১৫টি বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে জানা গেচে। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে।
গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ভেদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্য়ালয়। পুরো উপজেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর এবং বিভিন্ন ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। ডামুড্যা উপজেলা শহরেরও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর হয়েছে।
নড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শহীদুল ইসলাম বাবু রাড়ী বলেন, নড়িয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়, পানি ভবন ভাঙচুর করেছে। আমার বাড়িতেও ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।
হবিগঞ্জ : রোববার হবিগঞ্জ শহরে হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আবু জাহির এবং সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খানের বহুতল বাসভবনে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। রাতে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিমের বাসায় লুটপাট হয়। বানিয়াচং থানায় হয় অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর।
মঙ্গলবার শহরে চেম্বার অব কমার্সের অফিস, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরীর বাসবভন, বানিয়াচংয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ধন মিয়ার বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ময়মনসিংহ : সোমবার বিকালে নগরীর গরীর পণ্ডিতপাড়া এলাকায় সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ও ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদের বাসায় ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। রোববারও বাসাটিতে ভাঙচুর করা হয়েছিল।
ভাঙচুর ও লুটপাট হয় তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল সরকারের বাসা-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।
নগরের শিববাড়ি রোডে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, আঠারবাড়ি বিল্ডিং এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের বাসায় অগ্নিসংযোগ, সার্কিট হাউজ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর, রাইফেলস ক্লাব ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নওশেল আহমেদ অনির নাহা রোডের বাসায় আগুন এবং সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আসিফ হোসেন ডনের বাসায় আগুন দেওয়া হয়।
ময়মনসিংহের সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটুর বাসায়ও ভাঙচুর করা হয়। ময়মনসিংহ সদর আসনের সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমানের নাটকঘর লেনের বাসায় আগুন দেওয়া হয়। ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায়ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর হয়।
ময়মনসিংহ-৫ মুক্তাগাছা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বাবুর মনতলার বাসায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে।
মুক্তাগাছার পৌর মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকারের ভাবকির মোড় এলাকায় পেট্টোল পাম্পে ও বাসায় আগুন দেওয়ার হয়; চলে লুটপাট। মেয়রের বাসা ভস্মীভূত হয়ে কাজের বুয়া মারা যায়। উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মাহবুবুল আলম মনির বাসায়ও অগ্নিসংযোগ হয়।
শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আরব আলীর বাসায়ও লুটপাট, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বাঁশাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার চন্দর দুটি অটোরাইস মিলের ১০ হাজার বস্তা চাল লুট, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিমের রাইস মিলের চাল লুট এবং কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদারের কাপড়ের দোকান লুটসহ অর্ধশত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
গৌরীপুরে বিক্ষুব্ধরা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে আগুনে পুড়িয়ে দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নিলুফার আনজুম পপির (এমপি) রাজনৈতিক কার্যালয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোমনাথ সাহার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরএমজি অটোরাইস মিল, পাঁচটি বাস, একটি ট্রাক ও মধ্য বাজার এলাকার ব্যবসায়ী বাদল পালের দুটি মুদির দোকান ও তাঁতকূড়া বাজারে একটি গোডাউনে ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের ফার্নিচারের দোকানে। গৌরীপুর সরকারি কলেজের সাবেক জিএস ও ছাত্রলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম টুটুলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘পূর্ণা ইলেকট্রনিকস’ এবং রামগোপালপুর ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি মাছের হ্যাচারি ও বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানপাট ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়।
নান্দাইলে বিক্ষুব্ধ জনতার বিজয় মিছিল থেকে দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিনের পৌর বাসভবনে ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়া হয়। নান্দাইল পৌরসভার মেয়র রফিক উদ্দিন ভূঁইয়ার অফিস ও দোকানপাটে ভাঙচুর হয়। এছাড়াও নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাসায়ও ভাঙচুর হয়েছে।
এছাড়া নান্দাইলে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালামের দলীয় কার্যালয়, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েলের দলীয় কার্যালয়, বাসভবন, উপজেলা ছাত্রলীগের কার্যালয়, পৌর ছাত্রলীগের কার্যালয় এবং সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজ ছাত্রলীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। ভেঙে ফেলা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল।
হালুয়াঘাট উপজেলায় আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র খায়রুল আলম ভূঁইয়ার বাড়ি আংশিক ভাঙচুর, সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর ও লুট, ধুরাইল, ভূবনকুড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়ার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়ি ভাঙচুর লুটপাট, ভূবনকুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আদিবাসী নেতা প্রহর চিসিম পলসহ বেশ কয়েকটি আদিবাসীর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
আগুন দেওয়া হয়েছে ফুলবাড়িয়া থানায় পুলিশের গাড়ি, মোটরসাইকেল ও থানা কার্যালয়ে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন এমন খবরে থানা গেট ভেঙে ভেতরে শত শত মানুষ প্রবেশ করে থানা ভাঙচুর, পুলিশের দুটি গাড়ি এবং চার থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।
ময়মনসিংহ-৭ ত্রিশাল আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী ও এবিএম আনিছুজ্জামান আনিছের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি ও নিজস্ব কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করা হয়।
বগুড়া : সোমবার বগুড়া সদরের সাবেক সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুর বাড়িতে ভাঙ্চুর করে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে লুটপাটও হয়। সদর আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিকুল ইসলামের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ রাজের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিস, টাউন ক্লাব, জাসদ অফিস, উদিচির কার্যালয় ও বগুড়া থিয়েটারেও দেওয়া হয় আগুন। অভিজাত বিপনী বিতান পুলিশ প্লাজায় ভাঙচুরসহ লুটপাট হয়। বগুড়া সদর থানা, সদর ফাঁড়ি ও সদর ভূমি অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে।
ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে শেরপুর উপজেলায় সাবেক সংসদ সদস মজিবর রহমান মজনু ও হাবিবুর রহমানের বাসায়। আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল বারী ডাবলু, পৌর সভার প্যানেল মেয়র খোকন, কাউন্সিলর শুভ ইমরানের বাসায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটপাট করা হয়। সাপ্তাহিক ‘আজকের শেরপুর’ কার্যালয়েও ভাঙচুর হয়েছে। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে শেরপুর প্রেসক্লাবেও।
শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কার্যালয় এবং সরকারি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করাসহ ভাঙচুর করা হয়। পৌর মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিকের বাসা, মাইক্রোবাস, ব্যাক্তিগত কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগসহ প্রেসক্লাবেও অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর করে লুটপাট করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা সোহেলরানা রাসেলের দোকানে। এছাড়া নারায়ণপুর গ্রামের তিনিটি সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে।
ধুনট উপজেলায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রউফ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ স্বপন, এলাঙ্গী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ তারেক হেলাল, গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন, উপজেলা যুবলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেনের বাড়ি ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুট করা হয়।
এছাড়া প্রায় ২০ জন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীদের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
শাহজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান, মাদলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল বারী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাদলার বাড়িতেও হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও আরও ৩০টি বাড়িতে হামলা ও লুটের ঘটনা ঘটেছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলায় বগুড়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান, তার ভাগ্নে ইতি, পৌর মেয়র মতিউর রহমানের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। একই ঘটনা ঘটে প্রেসক্লাব, পাবলিক লাইব্রেরি, আওয়ামী লীগ অফিস এবং ছাত্রলীগ নেতা সাগর ও শাহাদাতের বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০টি বাড়িতে।
সোনাতলা উপজেলা পরিষদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি মিনহাদুজ্জামান লিটন, দলীয় কার্যালয়, প্রেসক্লাব, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুল আলম, শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অসীম কুমার, সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন কুমারসহ অর্ধশতাধিক বাড়ি ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনা ঘটেছে।
হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুট হয়েছে দুপচাচিয়া উপজেলা পরিষদ, থানা, সাবেক মেয়র বেলাল হোসেন, গোবিন্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাখাওত হোসেন, সাংবাদিক মতিউর রহমানের বাড়িসহ শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে।
বগুড়া জেলা পুজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল রায় বলেন, শেরপুর ভবানী মন্দিরের সেবক অপূর্ব চন্দ্রকে মারধর করা হয়েছে। সোনাতলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান লুট করা হয়েছে। আদমদিঘী, গাবতলী, বগুড়া সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। সব হিসেব এখনও পাওয়া যায়নি।
কাহালু উপজেলায় আওয়ামী লীগ অফিস, শ্রমিক লীগ অফিস, আওয়ামী লীগ সভাপতি হেলাল কবিরাজের বাড়ি, সাংবাদিক আব্দুস সালেক তোতার বাড়িসহ প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে। এ উপজেলার সবগুলো বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
গাবতলী পৌর সভার সভাপতি আজিজার রহমান পাইকাড়, কাগইল ইউনিয়নের সভাপতি শফি আহাম্মেদ, নাড়ুয়ামালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাদশা, সুখানপুকুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জুয়েলের বাড়িসহ শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়ে লুটপাট করা হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় গাবতলী উপজেলার সকল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ কার্যালয়।
আদমদিঘী উপজেলার চিত্রও একই। কোন উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা ভয়ে বাড়িতে নেই।
নোয়াখালী : সোমবার সোনাইমুড়ী থানা ভবন ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে থানার কাগজপত্র, আসবাবপত্র ও গাড়ি পুড়ে যায়। সেসময় সংঘর্ষে প্রাণ হারান চার পুলিশসহ আটজন। আহত হন আরও শতাধিক মানুষ। থানা থেকে বেশ কয়েকটি অস্ত্রও লুট হয়।
বেগমগঞ্জ উপজেলায় চৌমুহনী পৌরসভার মূল ভবন, অডিটরিয়াম এবং গ্যারেজসহ তিনটি ভবনের প্রতিটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গ্যারেজের ভেতরে ও বাইরে থাকা গাড়ি। চালানো হয়েছে ব্যাপক লুটপাট।
হামলা-ভাঙচুর হয়েছে চৌমুহনী রেলগেট এলাকায় নোয়াখালী-২ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের মালিকানাধীন মোরশেদ আলম কমপ্লেক্সে ।
সেনবাগ উপজেলার ছমিরমুন্সির বাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মানিকের মালিকানাধীন জাহাঙ্গীর আলম কমপ্লেক্স নামে বিপণি বিতানটির দুই পাশের সব কাচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
একইদিন সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভেতরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়সহ ১৩টি সরকারি দপ্তরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। চাটখিল থানায় হামলা ভাঙচুর ও অস্ত্র লুট হয়।
কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার বড় রাজাপুর গ্রামে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতেও ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বাড়ির বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে।
সোমবার রাতে এবং পরদিন সদর উপজেলার মান্নান নগর এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শিহাব উদ্দিন শাহিনের গরুর খামারে হামলা হয়। তারা খামারের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে জেনারেটর, ফ্রিজ, ফ্যান, পাম্প মেশিন, আসবাবপত্র, গেটসহ সবকিছু নিয়ে যায়।
মঙ্গলবার জেলা শহরের মাইজদী বাজারে নোয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিথুন ভট্ট ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইমন ভট্টের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়।
মিথুন ভট্ট বলেন, হামলাকারীরা তার বাসার চারটি ঘর ভাঙচুর করে এবং চারটি মোটরসাইকেল আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। এসময় আতঙ্কে তার স্ত্রী সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাণ ভয়ে তারা এখন বাড়ির বাইরে অবস্থান করছেন।
৮ অগাস্ট নোয়াখালী-১ আসনের (চাটখিল ও সোনাইমুড়ী আংশিক) সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিমের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হামলাকারীরা। পুড়িয়ে দেয় বাড়ির আঙিনায় থাকা একটি গাড়ি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সোমবার পুড়িয়ে দেওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা। সদর হাসপাতাল রোডের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং ব্যাংক এশিয়ার ভবনে ভাঙচুর হয়েছে। ভাঙচুরের শিকার হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব।
ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারি চৌধুরী মন্টু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন শোভনের বাসভবনে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যুবলীগ নেতা হাসান সারোয়ারের বাড়ি।
আখাউড়া উপজেলায় রেলওয়ে জংশনে থাকা তিনটি ট্রেনের দেড়শ’র বেশি জানালা ভাঙচুর করা হয়েছে। নবীনগর ও আখাউড়া পৌরসভার মেয়রের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর হয়েছে। আখাউড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগ সভাপতি শাহবুদ্দিন বেগ শাপলু, সাবেক ছাত্র নেতা মো. শাহীনের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হয়েছে।
ব্যাপক লুটপাট চালিয়ে ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের গ্রামে বাড়ি পানিয়ারুপে। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছায়েদুর রহমানের বাড়ি।
কসবা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আবু তাহেরের বাড়ি লুটপাট-ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ভাঙচুর চালানো হয় কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি ও সুজন কসবা উপজেলা শাখার সভাপতি মো. সোলেমান খানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিডিসি স্কুলে।
কসবা পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রুবেল মিয়া, গেদু মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা রংগু মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার সামছুল হকের বাড়িতেও একইভাবে আক্রমণ হয়েছে।
পৌর শহরের স্টেশন রোডে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজের বাড়িতেও হামলা-ভাঙচুর করা হয়। কসবা পৌর শহরের স্টেশন রোডের নজরুল ইসলাম নামের এক চা দোকানদারের দোকান ভাঙচুর ও পেছনে থাকা বাসার মালামাল লুটপাট কিরে নিয়ে যায়।
কসবা রেলওয়ে স্টেশনের পাশে সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল কাওয়াসার ভুইয়া জীবনের বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ইকতিয়ার উদ্দিন রণির জাজিশার গ্রামের বাড়িতেও একই ঘটনা ঘটেছে।
কসবা থানায় ও ব্যাপক ভাঙচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ লোকজন। সেখানে সরকারি দুটি পিকআপ ভ্যান এবং প্রাইভেটকারসহ ১৫-১৬টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া লুট করে নিয়ে যায় পুলিশের আটক করা শতাধিক মোটরসাইকেল।
গোপিনাথপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপর গ্রামের ফরিদ মেম্বারের বাড়ি, কুটি ইউনিয়নের জাজিয়ারা গ্রামের সোহরায়ার্দীর বাড়িতে লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ : সোমবার বিকালে সদর উপজেলায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের জামতলার বাড়ি, তার বড়ভাই একেএম সেলিম ওসমানের উত্তর চাষাঢ়ার বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর- লুটপাট হয়েছে। সেলিম ওসমানের বাড়িতে আগুনও দেওয়া হয়।
ভাঙচুর চালিয়ে লুট করা হয় কলেজ রোড এলাকার শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন ও ভাতিজা আজমেরী ওসমানের ব্যক্তিগত কার্যালয়।
নগরীর চাষাঢ়ায় নাসিম ওসমান (শামীম ওসমানের প্রয়াত বড়ভাই) প্লাজা নামে একটি নির্মাণাধীন ভবনে থাকা একটি রেস্তোরাঁও ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এই রেস্তোরাঁর মালিকের সঙ্গে ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে জানা গেছে।
লুটপাট চলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবেও। ক্লাবের নির্মাণাধীন ভবনে থাকা নির্মাণসামগ্রীও লুট হয়। বিত্তশালীদের এই ক্লাবটির নিয়ন্ত্রণ ছিল ওসমান পরিবারের সদস্যদের কাছে।
আগুন দেওয়া হয় চাষাঢ়ায় পুলিশের ডাম্পিং জোনে (পূর্বে এটি চাষাঢ়া ফাঁড়ি ছিল)। সন্ধ্যায় লুটপাট করা হয় নগরীর মাসদাইর এলাকার পুলিশ লাইন্সেও। বিকালে সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়।
বন্দর উপজেলায় সোমবার বিকালে বন্দর থানা প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙচুর করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
একই রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিমউদ্দিন মিয়ার হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়। নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী স্থানীয় মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী।
লুটপাট চালানো হয় মদনগঞ্জ এলাকায় স্থানীয় একটি ডক-ইয়ার্ডেও। এই ডকইয়ার্ডের মালিকানার সঙ্গে স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতাও রয়েছেন।
সোনারগাঁ উপজেলায় ৫ অগাস্ট বিকালে মোগরাপাড়া এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়।
এ উপজেলায় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। উপজেলা পরিষদেও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভেঙে ফেলা হয়। বিকালে ভাঙচুর ও লুটপাট চলে কাঁচপুর হাইওয়ে থানায়। পরে থানার সামনে আগুন দেওয়া হয়।
৬ অগাস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা টোলপ্লাজায় ভাঙচুর ও লুটপাট চলে। ৮ অগাস্ট পর্যন্ত এখানে টোল আদায় বন্ধ ছিল। এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আড়াইহাজার উপজেলায় থানায় লুটপাট চালিয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয় সংসদের হুইপ ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ও তার দুই ভাইয়ের বাড়িতে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ভাঙচুর হয়েছে। এই উপজেলায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন সংসদ সদস্যের স্ত্রী সায়মা আফরোজ। ভাঙচুর করা হয় উপজেলা পরিষদ ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকেও।উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপনের বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়।
রূপগঞ্জ উপজেলায় বিকালে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীরের রূপসীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সে সময় বাড়ির ভেতরেই ছিলেন সংসদ সদস্যের স্ত্রী ও তারাব পৌরসভার মেয়র হাছিনা গাজী। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি ঘর থেকে বের হন।
এই সময় সরকারি একটিসহ তিনটি গাড়ি পুড়ে যায়। এছাড়া, রূপসী ও কর্ণগোপ এলাকায় গাজীর দুটি ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে লুটপাট করা হয়। হামলা ও লুটপাট চলে স্থানীয় সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন জানান, সোমবার বিকালে সদর উপজেলার ভূঁইগড় রঘুনাথপুর এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও পূজা উদ্যাপন পরিষদের সহসভাপতি মানিক সরকারের বাড়িতে হামলা, লুটপাট হয়। একইদিন রূপগঞ্জের ফুলতায় গণেশ পালের মিষ্টির দোকানে আগুন দেওয়া হয় এবং তার বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়।
এছাড়া আড়াইহাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক রবীন্দ্র ভৌমিকের বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফতুল্লার কাশীপুর ইউনিয়নের নমপাড়া এলাকায় অশোক সরকারের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়।
বুধবার শিখন সরকারের শহরের উকিলপাড়া এলাকায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে তালা দেওয়া হয়। যদিও স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরে তা খোলা হয় বলে জানান তিনি।
একইদিন দুপুরে ফতুল্লার লালখা এলাকায় স্থানীয় এক নারী সাংবাদিকের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : সোমবার দুপুরে শহরের শান্তিমোড়ের সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স, স্কুল-কলেজ রোডে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। নিউ মার্কেট এলাকার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সেও ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে আগুন দেওয়া হয়।
হামলাকারীরা জেলা প্রশাসকের বাস ভবনে হামলা করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে গ্যারেজের বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। জেলা পরিষদ কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গ্যারেজে রাখা দুটি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। কোর্ট এলাকায় মালখানা থেকে বিভিন্ন মামলার আলামত লুটপাট করা হয়।
সদর আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদের শহরের দুটি বাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আরেকটি বাড়িতে ইটপাটকেল ছোড়ে। এছাড়াও মহারাজপুর ঘোড়া স্ট্যান্ড এলাকায় তার একটি পেট্রোল পাম্প জ্বালিয়ে দেয় এবং দক্ষিণ শহরের পার্ক তছনছ করা হয়।
লুটপাটের পর পুড়িয়ে দেওয়া হয় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমিনের শরূপনগরের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমানের বটতলা হাটের বাড়ি, তার মালিকানাধীন জোসনারা পার্কে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়। এছাড়াও শরূপনগর এলাকায় গ্যারেজে থাকা গ্রামীণ ট্রাভেলসের তিনটি পরিবহনে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয় পরিবহনটির ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের টিকেট কাউন্টারে।
শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের বাড়িতেও লুটপাট-ভাঙচুর হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয় তাদের পারিবারিক উদ্যোগে পরিচালিত জিকে ফাউন্ডেশন। সাবেক সচিব জিল্লার রহমানের বাড়িতে হামলা ও গ্যারেজে থাকা দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিবগঞ্জ পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুম্মন আলির বাড়িসহ এলাকার ১২টি বাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে। এছাড়া এই উপজেলায় শতাধিক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।
কানসাটের পুকুরিয়া এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রব্বানীর বাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। কানসাট বাজার মিলিক মোড়ে এক মার্কেটের সাতটি দোকান লুটপাট ও আশপাশের পাঁচটি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়।
শ্যামপুর ইউনিয়নে আশরাফুল ইসলাম ভোদন চেয়ারম্যানের বাড়ি ও আওয়ামী লীগ নেতা আল-মামুনের বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুর হয়েছে। রানিহাটি ও নয়ালাভাঙ্গা এ দুটি ইউনিয়নে বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা বেশি ঘটছে।
এছাড়াও উপজেলার বিনোদপুর, মনাকষা ও দুর্লভপুর এ তিনটি ইউনিয়ন ছাড়া অন্যান্য ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বেশ কিছু বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
ভোলাহাট উপজেলায় আওয়ামী লীগ দুটি অফিসে আগুন ও তিনটিতে ভাঙচুর চালায়। নেতাকর্মীদের পাঁচটি দোকানের মালামাল লুটপাট, দশ-বারটি দোকান ঘর ভাঙচুর করে। পঁচিশটি বাড়ি-ঘরে হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
গোমস্তাপুর উপজেলার আলীনগরে আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। চৌডলা এলাকার অফিস ভাঙচুর করে।
এছাড়া নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের বরেন্দ্রা গ্রামের আদিবাসীদের চার-পাঁচটি বাড়ি-ঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :