• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দুদকের

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর যুক্তরাজ্যে আড়াই হাজার কোটির ২৬০ বাড়ি


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১৯, ২০২৪, ০১:১৩ পিএম
সাবেক ভূমিমন্ত্রীর যুক্তরাজ্যে আড়াই হাজার কোটির ২৬০ বাড়ি

ঢাকা : সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে যুক্তরাজ্যে ২৬০টি বিলাসবহুল বাড়ির সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে ১৫৫টি বাড়ি রয়েছে রাজধানী লন্ডনে।

এ ছাড়া লিভারপুলে রয়েছে ৩০টি, আর বাকিগুলো অন্যান্য বড় শহরে। ব্রিটেনের বর্তমান বাজারমূল্যে বাড়িগুলোর মূল্য প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এসব সম্পদের মালিকানা অর্জন করেন।

এ ছাড়া তাদের নামে দুবাইয়ে বাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনার তথ্য পাওয়া গেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে দেশে-বিদেশে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রোববার (১৮ আগস্ট) এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

যুক্তরাজ্যের কোম্পানি হাউজ তথ্যমতে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২৬০টি প্রপার্টি কিনতে ব্যয় করেছেন প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড, যা বাংলদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। তার মোট সংখ্যার ১৭৯টি বাড়ি ও ফ্ল্যাট জেডটিএস প্রপার্টিজের আওতায় রয়েছে। জেডটিএস প্রপার্টিজের একক মালিক সাইফুজ্জামান চৌধুরী। আর বাকি বাড়িগুলো প্রতিমন্ত্রীর অন্যান্য প্রপার্টিজ কোম্পানিগুলোর আওতায়। এর মধ্যে সবচেয়ে দামি বাড়িটি রয়েছে লন্ডনে। বর্তমানে এই বাড়ির দাম প্রায় ১৩ মিলিয়ন পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮২ কোটি টাকা। এটি তিনি ২০২১ সালের ১৬ জুলাই এককালীন মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে কিনেছেন।

যুক্তরাজ্য সরকারের কোম্পানি হাউজের তথ্য থেকে দেখা যায়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ৮টি প্রপার্টিজ কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে খোলা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি তার একক মালিকানাধীন ও কয়েকটিতে তার পরিবারের সদস্যদের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৪ সালে র‌্যাপিড র‌্যাপ্টর এফজিই এবং ২০১৫ সালে জেবা ট্রেডিং এফজিই নামে দুটি কোম্পানি খোলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এর মধ্যে একটি কম্পিউটার ও সফটওয়্যার ব্যবসা এবং আরেকটি ভবন নির্মাণসামগ্রী বিক্রির ব্যবসা।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর দুবাই ইসলামিক ব্যাংক, ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের দুবাই শাখায় অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব হিসাবে ৩৯ হাজার ৫৮৩ দিরহাম ও ৬ হাজার ৬৭০ ডলার জমা রয়েছে। সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দুবাইয়ে ২২৬টি স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করেছেন।

এ ছাড়া তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের নামে ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এবং ৩০ নভেম্বর দুবাইয়ের আল-বারশা সাউথ-থার্ড এলাকায় ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ দিরহাম দিয়ে দুটি বাড়ি ক্রয় করা হয়; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা।

এদিকে, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। এসব হিসাবে আগামী ৩০ দিন কোনো লেনদেন করা যাবে না। এমনকি তাদের নামে থাকা ক্রেডিট কার্ডেও কোনো লেনদেন হবে না। ১৩ আগস্ট এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ২০১৮-২৩ সাল সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরী ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান।

গত মার্চে এক সংবাদ সম্মেলনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছিলেন, তার বাবা ১৯৬৭ সাল থেকে লন্ডনে ব্যবসা করেছেন। তিনি নিজে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করে ১৯৯১ সাল থেকে সেখানে ব্যবসা করেছেন। এরপর তিনি যুক্তরাজ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন। বিদেশে তার আলাদা আয়কর নথি আছে। আর বিদেশে তার যে সম্পদ আছে, তার জন্য ব্যাংকঋণ নেওয়া হয়েছে।

গত জাতীয় নির্বাচনের আগে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীর বিদেশে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। প্রয়োজনে সরকারকে তারা সব তথ্য ও নথি দিয়ে সহায়তা করবে। পরে এই মন্ত্রীকে সাইফুজ্জামান চৌধুরী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

জানা যায়, যুক্তরাজ্যে তার স্ত্রী রুখমিলা জামান এবং মেয়ে জেবা জামানের নামে কোম্পানি খুলেছেন সাবেক মন্ত্রী। এ ছাড়া পারিবারিক মালিকানায় থাকা ব্যবসায়িক গ্রুপ আরামিটের নামেও সে দেশে একটি কোম্পানি খুলেছেন তিনি।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!