ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিএনপি নেতাসহ তিন জনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে আরও তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে।
সোমবার (১৯ আগস্ট) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলা তিনটি দায়ের করা হয়। এরমধ্যে দুটি মামলা ঢাকার মিরপুর মডেল থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ এবং অন্য মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিন মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ২২৮ জন। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করা হয়েছে।
বিএনপি নেতা হত্যায় আসামি হাসিনাসহ ৬৭ জন কোটা আন্দোলন চলাকালে ঢাকা মহানগর উত্তরের ১১নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ কবির খানকে হত্যার মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৬৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মেহেদী হাসানের আদালতে এ মামলাটি করেন নিহতের স্ত্রী আফসানা ইসলাম (৩৫)। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মিরপুর মডেল থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এ মামলায় শেখ হাসিনা ব্যতিত উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মো. কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মান্নান কচি ও মেসবাউল আলম সাচ্চু।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় আইডিয়াল স্কুলের সম্মুখে ছাত্র জনতা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিক্ষোভ করছিল। এসময় ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ কবির খান আন্দোলনে আহত ছাত্রদের সহযোগিতা করে রিক্সায় তুলে চিকিৎসার জন্য পাঠাচ্ছিলেন। সে সময় শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ গুলি চালালে তিনি নিহত হন।
হাসিনাসহ ১৪৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে রাজধানীর মিরপুরে লিটন হাসান লালু ওরফে হাসান নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৪৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে নিহত হাসানের ভাই মিলন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। আদালত মিরপুর মডেল থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান (নিখিল), ইলিয়াস মোল্লা, কামাল আহমেদ মজুমদার, আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি হারুন-অর-রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগ নেতা এস এম মান্নান (কচি)।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ইলতুৎমিশ সওদাগর এ্যানী মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, দেশে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালে নিহত হাসান গত ৪ আগস্ট মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। দুপুর ২টার দিকে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আব্দুল্লাহ আল মামুন, হারুন-অর-রশীদ, আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিপ্লব কুমার ও হাবিবুর রহমানের নির্দেশে অন্যান্য আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ২০০-৩০০ জন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি করে। অজ্ঞাত আসামির ছোঁড়া বুলেটে হাসান গুলিবিদ্ধ হয়। আগারগাঁও নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট হাসান মারা যান।
হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার তদন্তে পিবিআই
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় কাঠমিস্ত্রি তারিক হোসেনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারহা দিবা ছন্দার আদালতে তারিকের মা মোসা. ফিদুশি খাতুন এ মামলা দায়ের করেন।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি হারুন-অর-রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার। বাদীপক্ষের আইনজীবী লিটন মিয়া এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭.১৫ মিনিটের দিকে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে শেরেবাংলা নগর থানার সামনে রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন তারিক হোসেন। তাকে দ্রুত পার্শ্ববর্তী শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৯ আগস্ট তিনি মারা যান।
আইএ