ঢাকা : ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পলায়ন করেন। এরপর একের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বিগত শেখ হাসিনা সরকারের নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির চিত্র। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাসহ দলের বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রীসহ আরও অনেকের নাম প্রকাশিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের নামে বরাদ্দ কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) বাতিল করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
জানা গেছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই-একদিনের মধ্যেই পতিত সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের নামে ইস্যু করা লাল পাসপোর্ট বাতিল করতে আদেশ জারি করা হচ্ছে। লাল পাসপোর্ট বাতিল হলে যেসব সাবেক মন্ত্রী-এমপির নামে ফৌজদারি অপরাধের মামলা আছে বা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের সাধারণ পাসপোর্ট পেতে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে আদালতের আদেশ পেলেই কেবল মিলবে সাধারণ পাসপোর্ট।
এদিকে গত ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ভারতে পালিয়ে যান তিনি। তবে তার কাছে এখন পর্যন্ত বৈধ সরকারি পাসপোর্ট রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ইংরেজি একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আমরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রিসভায় থাকা অন্যদের সরকারি পাসপোর্ট বাতিলের পদক্ষেপ নিয়েছি। কারণ প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের মাধ্যমে ওই মন্ত্রিসভা ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আইন অনুযায়ী তারা আর অফিসিয়াল পাসপোর্টধারী নন।
শেখ হাসিনার সরকারি পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত একটি বৈধ সরকারি পাসপোর্ট বহন করছেন। তবে দু-একদিনের মধ্যে তা বাতিল করার প্রক্রিয়া চলছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা বর্তমানে দিল্লির উপকণ্ঠে একটি আধাসামরিক বাহিনীর অতিথিনিবাস বা ‘সেফ হাউসে’ অবস্থান করছেন। পশ্চিমা কয়েকটি দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
শেখ হাসিনা ঠিক কোন ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসে’ ভারতে রয়েছেন, সে বিষয়ে ভারত সরকার সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে। অর্থাৎ তিনি কোনো বিশেষ ভিসায় ভারতে অবস্থান করছেন, না কি তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে – এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকার এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি।
এই কারণেই প্রশ্ন উঠছে, ভারতে এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার অবস্থানের অভিবাসনগত বৈধতা ঠিক কী এবং সেই স্ট্যাটাস কতদিন পর্যন্ত বৈধ থাকতে পারে? এ বিষয়ে ভারত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার বরাতে বিবিসি বাংলা জানায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার যে ‘ডিপ্লোম্যাটিক/অফিশিয়াল’ পাসপোর্ট ছিল তা এখনও বৈধ। আর সেই পাসপোর্টের সুবাদে তিনি অন্তত দেড় মাস কোনো ভিসা ছাড়াই অনায়াসে ভারতে অবস্থান করতে পারবেন।
ফলে এই সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট ‘রিভোকড’ বা বাতিল হলেও অন্তত ভারতে তাঁর বর্তমান অবস্থান সম্পূর্ণ আইনসম্মত। ভারতের এ ক্ষেত্রে আলাদা করে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রয়োজন নেই বলে জানান কর্মকর্তারা।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :