• ঢাকা
  • বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে’


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২৪, ২০২৪, ০১:০৫ এএম
‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে’

ঢাকা : ‘মানুষ মানুষের জন্যে/ জীবন জীবনের জন্যে। একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না? ও বন্ধু…।’ এই গানটির গীতিকার, সুরকার ও গায়ক হচ্ছেন ভূপেন হাজারিকা। এই বিখ্যাত গানটির স্রষ্টা বেঁচে নেই কিন্তু গানটির প্রত্যেকটি লাইন মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। যে কোনো দুর্যোগ-দুর্পিবাকে গানটির কয়েকটি লাইন অর্থবহ হয়ে ওঠে। মানুষ হিসেবে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসাই প্রধান ও প্রথমত ধর্ম হওয়া উচিত। হঠাৎদেশের ১৩টি জেলা যখন বন্যা কবলিত, তখন জাতি-ধর্ম-বর্ণ কিংবা বয়স কোন বাধা হতে পারেনি। তার প্রমাণ মিলেছে গত দু’একদিনে পানিবন্দি মানুষদের সহযোগিতার চিত্রে।

হঠাৎ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টিতে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যা সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে ফেনীতে। এছাড়া চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজার জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। তবে বন্যার ভয়াবহ রূপ দেখছে ফেনী, কুমিল্লা ও নেয়াখালী জেলার মানুষরা। এই তিন জেলার মানুষ ত্রাণ নয় বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন। কারণ বন্যার  পানি উচ্চতা এতই বেশি, বাড়ির ছাদেও মানুষ নিরাপদ বোধ করছেন না। তাই নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য মানুষের ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও স্পিডবোড প্রয়োজন পড়ছে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিংবা নিজ উদ্যেগে মানুষ বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধারে স্বেচ্ছাই ঘটনাস্থলে হাজির হচ্ছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্যায় আটকা পড়াদের উদ্ধার করছেন।

গতকাল চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে মানুষ স্পিডবোড ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ফেনীতে ছুটে গেছে। এছাড়াও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যেগে হেলিকপ্টারে পানিবন্দিদের উদ্ধারে এগিয়ে যায়। যা আজও অব্যাহত রয়েছে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সবার উন্মুক্ত অংশগ্রহণ নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছ্ববি বলে অনেকেই মনে করছেন।

এদিকে বন্যার্তদের জন্য টিএসসিতে গণত্রাণ সংগ্রহ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এই গণত্রাণ কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এই গণত্রাণ কর্মসূচিতে আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে অংশ নিতে গেছে। মানুষকে ত্রাণ দেওয়ার জন্য টিএসসি প্রাঙ্গনে ভীড় করতে দেখা গেছে। সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষ প্রাইভেটকার, ট্রাক, রিক্সা, মোটরসাইকেল করে ত্রাণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।

এদিকে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন বন্যার্তদের ত্রাণ সামগ্রী প্যাকেজিং কাজে লোক প্রয়োজন এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেয়। সেই পোস্টের পর আজ শুক্রবার সকালে ঢাকার মাদরাসাতুস সুন্নাহর মাঠে মানুষের ঢল নামে। মুসলানদের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মালম্বীরাও প্যাকেজিংয়ের কাজে অংশ নিতে সেখানে হাজির হোন। এমনকি পূজার টাকা বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনকে দান করেছে এমন খবরও পাওয়া গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি প্রাঙ্গনে ত্রাণ দেওয়ার দৃশ্য দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিজ্ঞানের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘৮৮ এর বন্যায় যেমন টিএসসি দেখেছিলাম আজকের ২০২৪ এসে তার চেয়েও বেশি দেখছি। গাড়িতে, ট্রাকে, রিকশা করে ত্রাণ নিয়ে এসে লাইন ধরে ত্রাণ দেওয়ার এমন দৃশ্য আমি দেখিনি। এ যেন ত্রাণের বন্যার অভূতপূর্ব দৃশ্য। এইবারের  অভ্যুত্থানের দৃশ্য। এইবারের অভ্যুত্থানের মূলমন্ত্র ছিলো কমিউনিটি সার্ভিস। মানুষ মানুষের জন্য হয়ে একসাথে কাজ করা। এই স্পিরিট নিয়ে আমরা যদি দেশ উন্নয়নে কাজ করি, আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ বদলে যাবে এই জেন জেড এর হাত ধরে।’ 

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে আওয়াজ তোলা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর আল মতিন পীতম একটি পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, ‘হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান দেশটা সবার।’ ঠিক এভাবেই মানুষ মানুষের জন্যে আজ একত্রিত হয়েছে।

টিএসসি গণত্রাণ কর্মসূচির বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সম্বনয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘টিএসসি গণত্রাণ কর্মসূচি থেকে আজ (শুক্রবার) বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উনচল্লিশ লাখ পয়ত্রিশ হাজার দুইশত বাহাত্তর টাকা নগদ সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ রাত দশটা পর্যন্ত অর্থ সংগ্রহ চলবে।’

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!