ঢাকা: উজানের তীব্র ঢল এবং অতি ভারি বৃষ্টির কারণে গত মঙ্গলবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। তাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ জন। আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জনে।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান।
অল্প সময়ের মধ্যে তা বিস্তৃত হয় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে।
এই ১১ জেলায় ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জানিয়ে কামরুল হাসান জানান, বন্যায় মৃত ২৩ জনের মধ্যে কুমিল্লায় মারা গেছে ছয়জন, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে মারা গেছে পাঁচজন করে এবং কক্সবাজারে তিনজন মারা গেছে। আর একজন করে মারা গেছে ফেনী, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে।
সচিব কামরুল হাসান বলেন, পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তিন হাজার ৮৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৩ জন মানুষ এবং ২৮ হাজার ৯০৭টি গবাদিপশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। '১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মোট ৬৪৫টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।'
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
চলমান বন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ফেনীসহ বেশিরভাগ স্থানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
সোমবার সকালে কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, গেল ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের ভেতরে তেমন বৃষ্টি হয়নি। সেই সঙ্গে উজানের নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত আছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনীর নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে, তবে কোনো কোনো স্থানে পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বিভিন্ন নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে।
আবহাওয়া সংস্থার বরাতে পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। তাতে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে সাঙ্গু, মাতামুহুরী, কর্ণফুলী নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।
দুই নদীর পানি বিপৎসীমার উপর
দেশের বেশিরভাগ নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। কেবল সিলেটে কুশিয়ারা এবং কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে বইছে।
এদিন সকাল ৯টায় কুমিল্লা স্টেশনে গোমতীর পানি ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় এ নদীর পানি কমেছে ৩৩ সেন্টিমিটার।
সিলেটের অমলশীদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ২৪ ঘণ্টায় এ নদীর পানি কমেছে ৯ সেন্টিমিটার। উজানের তথ্যের ভিত্তিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ফেনীর পরশুরাম পয়েন্টে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছে।
গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত নথিবদ্ধ করা হয়েছে যশোরে, ২২২ মিলিমিটার। এছাড়া বরগুনায় ১২০, বরিশালে ১০৪ এবং টেকনাফে ১০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নথিবদ্ধ করা হয়েছে।
এখনও অচল ১২০০ টাওয়ার
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসির সোমবার সকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেনীতে ধীরে ধীরে সচল টাওয়ারের সংখ্যা বাড়ছে। তবে সার্বিকভাবে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।
ফেনীর ৬৫৩টি টাওয়ারের মধ্যে সকাল পর্যন্ত ১১৯টি সচল হয়েছে। রোববারে রাতে এ সংখ্যা ছিল ১১৫।
নোয়াখালীতে ভয়াবহ বন্যা
এদিকে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেখানে অচল টাওয়ারের সংখ্যা বেড়েছে। ১১৫১টি টাওয়ারের মধ্যে সকালে অচল ছিল ৩৩৭টি, যা জেলার মোট টাওয়ারের ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
আগের রাতে সেখানে অচল টাওয়ার ছিল ১৯৪টি। লক্ষ্মীপুরেও অচল টাওয়ারের সংখ্যা বেড়েছে, ৩১টি থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫। এ জেলায় মোট টাওয়ার আছে ৭০১টি।
বিটিআরসি বলছে, বানের পানির উচ্চতা কমলে এবং বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নেটওয়ার্ক পুনঃস্থাপন কার্যক্রমের দ্রুত অগ্রগতি সম্ভব হবে।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :