ঢাকা : পনের বছর আগে বিডিআর বিদ্রোহের সময় ঢাকার পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত শুরুর কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত র্যাটো র্যাংলির সঙ্গে সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপদেষ্টা।
এ সময় পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্তের বিষয়ে এক প্রশ্নে সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের অধিকার, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর।
শুধু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক ও সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য হিসেবে আমি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চাই। সঠিকভাবে এ হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু করা হবে।
সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে মর্মান্তিক সেই সেই ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনী গঠিত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, যিনি তার আগে বিডিআর প্রধানেরও দায়িত্বে ছিলেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছেন ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠছে।
কিছুদিন আগে বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিনও বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে সেনাবাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদন জনগণের সামনে প্রকাশের দাবি তোলেন।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :