ঢাকা: পুলিশের সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দিবাগত রাতে রাজধানী থেকে সাবেক এই দুই আইজিপিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক খুদে বার্তায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে এই প্রথম পুলিশ মহাপরিদর্শক পদমর্যাদার কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হলো।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, 'আমরা ঢাকা থেকে সাবেক দুই পুলিশ প্রধানকে গ্রেপ্তার করেছি। তারা এখন আমাদের হেফাজতে রয়েছেন।'
তাদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তারা বৈঠক করবেন এবং পরে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখাবেন।
এই দুই সাবেক পুলিশ প্রধান হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, তাদের দুজনকেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা, গুলি বর্ষণ ও নির্বিচারে হত্যা- এসব অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নির্দেশদাতা হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। আজ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ পুলিশের ৩১তম মহাপরিদর্শক ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর থেকে তাকে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়।
এর পূর্বে তিনি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র্যাব) মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান ছিলেন।
অন্যদিকে, শহিদুল হক ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম ও সিরাজগঞ্জ জেলায় কার্যভার পালন করেছেন।
ডিআইজি হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, রাজশাহী রেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও পুলিশের ভিন্ন ভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ২০১৪ সালের শেষদিন আইজিপির দায়িত্ব পান এবং ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি অবসরে যান।
শহীদুল হকের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নরবালাখানা গ্রামে। তার ছোট ভাই ইসমাইল হক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আরেক ভাই নুরুল হক ব্যাপারী নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শহিদুল হক শরীয়তপুর-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতা ধরে রাখা এই স্বৈরশাসনের অন্যতম সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় পুলিশ বাহিনীকে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশ সরাসরি গুলি চালায়। এতে ঝরেছে শত শত প্রাণ। এজন্য সরকার পতনের পর ব্যাপক জনরোষে বিপর্যস্ত হয় পুলিশ বাহিনী। থানাগুলো হয়ে পড়ে পুলিশশূন্য। আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুনসহ কর্মকর্তাদের প্রায় সবাই পালিয়ে বাঁচেন।
সাম্প্রতিক আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শত শত মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় অন্যতম মাস্টার মাইন্ড আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের করা হত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে।
আর সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের বিরুদ্ধেও দায়িত্ব পালনকালে রয়েছে নানা অভিযোগ। ২০১৩ সালে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যার অভিযোগেও তিনি অভিযুক্ত। ওই সময় তিনি র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। সাম্প্রতিক আন্দোলনেও তার উস্কানিকে দায়ী করা হয়।
এসএস