• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ইউনূস সরকারের এক মাস

সংস্কার, কূটনৈতিক সাফল্য ও আস্থা অর্জনের নবযাত্রা


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪, ১১:৩৭ এএম
সংস্কার, কূটনৈতিক সাফল্য ও আস্থা অর্জনের নবযাত্রা

ঢাকা : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম মাস পূর্ণ হয়েছে রোববার (৮ সেপ্টেম্বর)। ইতোমধ্যে সংস্কারের উদ্দেশ্যে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং জনগণের পূর্ণ আস্থা অর্জনের জন্য আরও কিছু করা প্রয়োজন হবে।

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস গত ৮ আগস্ট শপথ নেওয়ার পর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য একটি রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার ‘গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের’ মাধ্যমে তাদের ‘ম্যান্ডেট’ পূরণ করতে একটি ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই তাদের লক্ষ্য। খবর বার্তা সংস্থা ইউএনবির।

শান্তি পুনরুদ্ধার এবং নতুন নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়টি নজরে রেখে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন অংশীদারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশের ভিত্তিতে সংস্কারের একটি রোডম্যাপ নিয়ে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বৈশ্বিক নেতারা এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নতুন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জোরালো সমর্থন ঘোষণা করেছেন। তারা বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে যেকোনো উপায়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম মাসে একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্যে হলো অধ্যাপক ড. ইউনূস সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে ৫৭ বাংলাদেশি নাগরিককে ক্ষমা করতে রাজি করাতে সক্ষম হন। তারা উপসাগরীয় দেশটির কয়েকটি শহরে সাম্প্রতিক ছাত্র-নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য বিক্ষোভ করে কারাবন্দি হয়েছিলেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টকে লেখা এক চিঠিতে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা সত্যিই আপনার সহানুভূতি ও বোঝাপড়ায় গভীরভাবে মুগ্ধ।’

অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে যেমন সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ; বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি, মন্থর জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও আর্থিক সংকট। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানবাধিকার রক্ষায় জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে বলেও প্রত্যাশা রয়েছে অনেকের।

মানবাধিকার ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুমবিরোধী কনভেনশনে স্বাক্ষর করে। এই কনভেনশনে যোগদানের উদ্দেশ্য হলো জোরপূর্বক গুম হওয়া থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির সুরক্ষা এবং বলপূর্বক গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের সাজা নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন সবার জন্য স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখায় জনগণের আকাঙ্খা পূরণের ৯টি মূল মানবাধিকার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করতে সুশাসন এবং দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিয়ে শক্তিশালী ও সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ পেয়েছে একজন নতুন গভর্নর। ড. আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কার করছেন, যা এখনও ভঙ্গুর অবস্থায় রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে একটি বিস্তৃত ‘শ্বেতপত্র’ প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো এবং এসডিজির জন্য নাগরিক প্ল্যাটফর্মের বাংলাদেশের আহ্বায়ক।

উপদেষ্টা পরিষদ গত সপ্তাহে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে পতন ঘটানো ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে এই ‘জুলাই বিপ্লব স্মৃতি জাদুঘর’ করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনের পর ক্ষমতায় ফেরার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো এই সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন, যা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তবে, দেশের বিভিন্ন জেল থেকে কিছু অপরাধী ও জঙ্গির মুক্তি পাওয়ায় অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া যেভাবে গণমাধ্যমকর্মীসহ লোকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হচ্ছে, যাদের এ ধরনের ঘটনায় কোনো ভূমিকা নেই, এমন কাণ্ডে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে।  

গত ২৮ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ প্রত্যাশিতভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং এর সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে। সরকার বলেছে, তারা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির এবং অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সন্ত্রাস ও সহিংসতায় সম্পৃক্ততা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণ পায়নি। সরকার বিশ্বাস করে, দলটির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার প্রায় সব অংশীদারের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক বজায় রাখছে। তবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের ইস্যুতে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে উত্তেজনার লক্ষণ রয়েছে।

অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেছেন, শেখ হাসিনা ভারত থেকে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া ‘বন্ধুত্বহীন প্রকাশভঙ্গি’। ঢাকা শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ না করা পর্যন্ত উভয় দেশের মধ্যে অস্বস্তি এড়াতে তাকে অবশ্যই নীরব থাকতে হবে।

অন্যদিকে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে শিগগিরই একটি উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিন্ডসে ডব্লিউ ফোর্ড ও মার্কিন ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি/অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফর ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স ব্রেন্ট নেইম্যান মার্কিন প্রতিনিধিদলে যোগ দিতে পারেন।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!