ঢাকা : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তিনি পদত্যাগপত্র আদৌ জমা দিয়েছেন কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের বিশিষ্ট কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা কলেজের শহীদ আ ন ম নজীব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়াম ‘অভ্যুত্থান পরবর্তী কেমন বাংলাদেশ চাই?’ শীর্ষক মতবিনিময়ে এ প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ফরহাদ মজহার বলেন, ফ্যাসিস্ট নিজেকে সংবিধানের মধ্যে হাজির রেখেছে। এই রাষ্ট্রটাও শেখ হাসিনার সংবিধানের মধ্যে হাজির হলো। গণ-অভ্যুত্থানের পর (অন্তর্বর্তী সরকার) শপথ নিয়েছেন। (শপথে) বলা হয়েছে না? আমি শেখ হাসিনার সংবিধান রক্ষা করব। এখনও তো তার ছেলে (সজীব ওয়াজেদ জয়) বলেছেন: শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী! আপনারা কেউ শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখেছেন?
তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় তারা কাগজটা দেখুক না, কোথায় পদত্যাগ করেছেন? চিন্তা করে দেখুন ষড়যন্ত্র কতদূর! যে কোনো মুহূর্তে একটি স্বাক্ষরের দ্বারা এ সরকার বাতিল হয়ে যেতে পারে। উনি (বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) কিন্তু প্রেসিডেন্ট এবং বাকিরা কিন্তু তার উপদেষ্টা।
তরুণদের রাজনীতি শিখতে ও বুঝতে হবে মন্তব্য করে এ রাষ্ট্রচিন্তক বলেন, জনগণ যখন উত্থিত হয় তখন তাকে গণতন্ত্র বলে। গণতন্ত্রের আইন পরিভাষা জনগণের অভিব্যক্তি। আমাদের বিভিন্ন দোষ আছে সেগুলো কাটাতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে রাষ্ট্র ও সরকার এক নয়। বিগত সময়ে পুলিশ সরকারের ছিল, রাষ্ট্রের নয়। রাষ্ট্র গঠন করতে হবে আগে।
তিনি বলেন, আমরা এখনও রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। ১৯৭২ সালের সংবিধান পাকিস্তানের সংবিধান, আইনের ভাষায়। এই সংবিধানকে যখন ছুড়ে ফেলে দিতে হবে, তখন আপনারা বসে আছেন। এখন আমাদের প্রধান কাজ হওয়া দরকার ছিল সংবিধান সংস্কার।
ফরহাদ মজহার বলেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী কেমন বাংলাদেশ চাই– সেটা আমাদের ওপর নির্ভর করবে। আমরা কেমন! আমরা যখন গণ-অভ্যুত্থান করেছি, তখন কিন্তু আমাদের ভাবতে হয়েছে, পরিকল্পনা করতে হয়েছে, লক্ষ্য নিবিষ্ট রাখতে হয়েছে। শত্রু চোখের প্রতি সচেতন থাকতে হয়েছে। যার ফলে শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী দিনে আমরা কী করব এবং কেমন বাংলাদেশ আমরা চাই, যেই প্রশ্নটি আমরা তুললাম, সেটি আমাদের লক্ষ্যের ওপর নির্ভর করছে। আমরা কোথায় যেতে চাই এবং আমাদের দৃষ্টি কোথায় নিবদ্ধ, সেটি করতে পারলে আমরা লক্ষ্য পূরণে দ্রুত অগ্রসর হব।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুভূতি প্রকাশ করেন করেন ৫ আগস্ট বিজয় মিছিল থেকে পুলিশের গুলিতে শহীদ সাব্বির হোসেন রনির বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ।
এ ছাড়া আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন কবি ও সাহিত্যিক আব্দুল হাই শিকদার, ডেইলি স্টারের বাংলা বিভাগের প্রধান ইমরান মাহফুজ, হিউম্যান রাইট অ্যাকটিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ প্রমুখ।
এমটিআই