ঢাকা: বেশকিছুদিন ধরেই নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের অন্যতম অনুসঙ্গ ছিল নিত্যপণ্যের এই উর্দ্ধগতি। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার নিত্যপণ্যের লাগাম টেনে ধরতে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত করে প্রতিযোগিতা কমিশন (সিসিবি)। কিন্তু আওয়ামী সরকারের কতিপয় মন্ত্রী সিন্ডিকেট প্রথা সচল রাখার জন্য এই কমিশনকে একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো আজ্ঞাবহ দলদাশ চেয়ারম্যান ও সদস্য।
ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা অনুসারে চেয়ারম্যান পদত্যাগ করলেও প্রতিষ্ঠানটির চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সদস্য সওদাগার মোস্তাফিজুর রহমান, সালমা আখতার জাহান এবং মো. হাফিজুর রহমান পদত্যাগ করেননি। এই নিয়ে প্রতিযোগিতা কমিশনে চাপা উত্তেজনা কাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকদেরও অন্যতম উদ্বেগ হলো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বাজারে সিন্ডিকেটের রাজত্ব। খোদ পতিত সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রীসহ বিগত মন্ত্রিসভার বেশ কয়েক সদস্য বিষয়টি সংসদের ভেতরে-বাইরে স্বীকারও করেছেন, যদিও বাস্তবে তারা এর বিরুদ্ধে কার্যকর কিছু করতে পারেননি।
প্রতিযোগিতা আইন ২০১২-এর আওতায় ২০১৬ সালে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন স্থাপন করা হয়েছে। মনোপলি, ওলিগোপলি, সিন্ডিকেট ভাঙার ক্ষমতা এই প্রতিযোগিতা কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। তাদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক জরিমানা করার। কোনো ব্যক্তি প্রতিযোগিতাবিরোধী চুক্তি সম্পাদন বা কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার করলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মুনাফার ৩ (তিন) গুণ অথবা বিগত ৩ (তিন) অর্থবছরের গড় টার্নওভারের ১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করার এখতিয়ার রাখে। একই সঙ্গে বিভিন্ন পণ্যের ওপর প্রতিনিয়ত মার্কেট স্টাডি করাও তাদের দায়িত্ব।
কাজেই বাজারে যদি কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মিলে সিন্ডিকেট তৈরি করে বাজারে প্রতিযোগিতা নষ্ট করে, তবে তা প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূলের দায়িত্ব মূলত বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের। কিন্তু আওয়ামী সরকারের অনুগত কর্মকর্তাদের এই প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ায় তারা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমান সোনালীনিউজকে বলেন, যদি কেউ অসৎ উপায় পারস্পারিক যোগসাজসের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে সেক্ষেত্রে প্রমাণ সাপেক্ষে প্রতিযোগিতা কমিশন অ্যকশনে যেতে পারে। আর যদি বাজারে পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়া বা সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে দাম বাড়ে সে ক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না।
চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্যদের ওপর কোনা রকম চাপ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। ব্যক্তিগত কারণে চেয়ারম্যান মহদয় পদত্যাগ করেছেন। নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের মাঝে হীনমন্যতার কোনো প্রশ্নই আসে না বা কোনো রকম সমস্যাও নেই।
সদস্যদের পদত্যাগের সম্ভাবনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য কারো বিষয়ে আমি বলতে পারবো না তবে আমার পদত্যাগের কোনো সম্ভাবনা নেই এবং পদত্যাগের বিষয়ে কোনো ম্যাসেজ পাইনি এখনও।
এসআই/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :