ঢাকা: আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বেগম মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন।(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
‘অগ্নিকন্যা’ খ্যাত মতিয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগের টিকিটে গত জানুয়ারির নির্বাচনে শেরপুর-২ আসনে ষষ্ঠবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি দ্বাদশ সংসদের উপনেতা ছিলেন। এর আগের সংসদে উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর প্রথম বার সংসদের উপনেতার দায়িত্ব পান।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে টানা চার মেয়াদ ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের। এরপর থেকে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বসহ প্রায় সব নেতাই আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ দেশ ছেড়েও চলে গেছেন। মতিয়া চৌধুরীও আত্মগোপনে ছিলেন। সেই অবস্থাতেই অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুর জেলায় মতিয়া চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন। ইডেন কলেজের ছাত্রী থাকাকালীন তিনি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৬২ সালে হামদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে যে প্রবল ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে, তারও সম্মুখসারির সংগঠক ছিলেন মতিয়া চৌধুরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ১৯৬৩ সালে তিনি রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর পরের বছরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে ছাত্র ইউনিয়ন মতাদর্শিক কারণে বিভক্ত হলে মতিয়া চৌধুরী এক অংশের সভাপতি নির্বাচিত হন। অন্য অংশের সভাপতি হয়েছিলেন রাশেদ খান মেনন। সেই হিসাবে ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপ ও ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপ নামে পরিচিতি পেয়েছিল।
মতিয়া চৌধুরী তার জ্বালাময়ী বক্তৃতার কারণে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসাবে ছাত্র-জনতার কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন। সে সময়ে ছাত্র রাজনীতিতে একজন নারীর যুক্ত হওয়া সাধারণ ঘটনা ছিল না। পাকিস্তানি শাসকরা ছিল অত্যাচার-নিপীড়নে সিদ্ধহস্ত। রাজনৈতিক কর্মীদের ভাগ্যে জেল-জুলুম ছিল নিয়মিত ঘটনা। সে সময়ে শাসকগোষ্ঠীর অনুকূলে এনএসএফ নামে একটি ছাত্র সংগঠন গড়ে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এনএসএফের কাজই ছিল গুণ্ডামি-মাস্তানি করা।
ওই সময়ে ছাত্র সমাজের মধ্যে প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ ছিল জনপ্রিয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ অথবা ছাত্র ইউনিয়নের জয়লাভ ছিল নিয়মিত ঘটনা। সামরিক শাসনের কারণে কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নামে সরাসরি নির্বাচন করা না গেলেও অন্য নামে সংগঠন গড়ে এ দুই ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করতেন।
মতিয়া চৌধুরীর বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তবে তিনি উদার ও গণতান্ত্রিক মানসিকতাসম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন। তিনি তার কন্যা মতিয়া চৌধুরীর রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় আপত্তি করেননি।
১৯৬৪ সালের ১৮ জুন সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মতিয়া চৌধুরী। বজলুর রহমানের সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে তার জানাশোনা ছিল। বজলুর রহমানের বাড়ি বর্তমান শেরপুর জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অর্থনীতিতে এমএ পাশ করে দৈনিক সংবাদে সহকারী সম্পাদক হিসাবে কাজ করছিলেন।
গত শতকের ষাটের দশকে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন-সংগ্রাম, তাতে মতিয়া চৌধুরী অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি আইয়ুব খানের আমলে চারবার কারাবরণ করেন। রাজপথে পুলিশের দ্বারা নির্যাতিত হন।
এসএস