ঢাকা : চলতি বছরের আগস্ট ও অক্টোবর মাসে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতে থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে ভয়াবহ দুটি বন্যার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো। ভয়াবহ এই বন্যায় অন্তত ৭৫ জনের প্রাণহানী হয় এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
তবে এই দুই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষিপণ্যের। বিশেষ করে পূর্ব ও উত্তর অঞ্চলে ফসলের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এতে করে চলতি বছরের বন্যায় বাংলাদেশে আনুমানিক ১১ লাখ মেট্রিক টন ধান নষ্ট হয়েছে।
বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, বন্যায় কৃষিপণ্যের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দেশের পূর্ব ও উত্তরের অঞ্চলগুলোতে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এ বছর বন্যার জেরে চালের উৎপাদন বিপুল পরিমাণে কমে গেছে। যার কারণে অন্তর্বর্তী সরকার শিগগিরই বিদেশ থেকে ৫ লাখ টন চাল আমদানি করতে যাচ্ছে। এছাড়া শীঘ্রই বেসরকারি খাতে চালের আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আওয়ামী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিগগির ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হতে পারে। এছাড়া গত মাসেই সিদ্ধ চাল রপ্তানির ওপর শুল্কের হার ১০ শতাংশ কমিয়েছে নয়াদিল্লি।
বিশ্বের চাল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয়। প্রতিবছর প্রায় ৪ কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে।
এদিকে দেশের বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানো, জনগণের ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। চালের ওপর আমদানি শুল্ক ও রেগুলেটরি শুল্ক হ্রাস এবং আগাম কর প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বন্যায় চালের পাশাপাশি অন্যান্য কৃষিপণ্যের উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্তহয়েছে। বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে ২ লাখ টনেরও বেশি শাকসবজি। বন্যার কারণে দেশব্যাপী মোট কৃষি ক্ষতি প্রায় ৪ কোটি ৫০০ লাখ ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের দুর্বলতার দিক তুলে ধরেছে। বিশ্বব্যাংকের এক বিশ্লেষণে অনুমান করা হয় যে, বাংলাদেশের ৩৫ লাখ মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা খন্দকার মোহাম্মদ ইফতেখারুদ্দৌলা রয়টার্সকে বলেন, ক্রমবর্ধমান জলবায়ু চ্যালেঞ্জের মুখে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন্যা ও খরা-সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন করা অপরিহার্য।
তিনি আরও বলেন, স্থিতিস্থাপক ফসল উন্নয়নের জন্য কৃষি গবেষণায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ভারতের ঢলের পানির কারণে চলতি বছরের আগস্টে দেশের পূর্বাঞ্চলে এবং অক্টোবর মাসে উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। এই বন্যায় অন্তত ৭৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫৫ লাখ মানুষ।
এমটিআই