রাজশাহী: ক্ষমতার অপব্যবহার করে পৃথকভাবে আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ২২ লক্ষাধিক টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে আত্মসাতের অভিযোগে রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাছ আলী (৫৬) সহ তিনজনের নামে পৃথক দুইটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর উপসহকারী পরিচালক মো. বোরহান উদ্দিন বাদী হয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা দুটি দায়ের করেছেন।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর উপপরিচালক মো. ফজলুল বারী বিষষটি নিশ্চিত করেছেন।
সাবেক মেয়র আক্কাছ আলী ছাড়াও মামলার বাকি দুই আসামি হলেন- বাঘা পৌরসভার সাবেক পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে-পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা, সাতক্ষীরা পৌরসভা) মো. লিয়াকত আলী (৩৯) ও বাঘা উপজেলার বাসিন্দা ইজারাদার মো. মাইনুল ইসলাম (৩৫)। তাদের নামে পৃথকভাবে একটি করে মামলা হলেও সাবেক মেয়র আক্কাছ আলীকে উভয় মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এডিপি ও বিশেষ বরাদ্দের উন্নয়নমূলক প্রকল্প এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরের গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসহ মোট ৭৮টি প্রকল্পের দুই কোটি ৬৬ লাখ ৮১ হাজার ৭৮৬ টাকার অনুমোদন পায় বাঘা পৌরসভা। বাঘা পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আক্কাছ আলী ও তৎকালীন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে-পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা, সাতক্ষীরা পৌরসভা) মো. লিয়াকত আলী পরস্পর যোগসাজশে প্রকল্পের ওই টাকার বিপরীতে ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮০ টাকা আয়কর ও ভ্যাট বাবদ কেটে নেওয়ার নামে শুধু ট্রেজারি চালানের পাতায় ও চেকের পাতায় লিপিবদ্ধ করে স্বাক্ষর করে রাখেন। কিন্তু সরকারি কোষাগারে তা জমা না দিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই টাকা আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাদের নামে মামলা দায়ের করেছে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহী।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ৪ মে থেকে ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আক্কাছ আলী বাঘা পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসময় ২০১৬ সালে সিএনজি, ট্যাম্পু, ট্যাক্সি স্ট্যান্ড চলাচলের ফি আদায় এবং বহিরাগত ট্রাক/মাইক্রোবাস সিএনজি, ট্যাম্পু, ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের টোল আদায়ের জন্য ইজারার দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে দুই জনের মধ্যে সর্বোচ্চ হওয়ায় এক বছরের জন্য স্ট্যান্ডের ইজারা পান মো. মাইনুল ইসলাম। কিন্তু ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী ইজারার সম্পূর্ণ অর্থ আদায় না করে ইজারাদার মো. মাইনুল ইসলামকে ওই স্ট্যান্ড থেকে টোল আদায়ের অনুমতি দেন তৎকালীন পৌর মেয়র আক্কাস আলী। পাশাপাশি তারা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে ইজারা থেকে পাওয়া ১০ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তি যোগ্য এই অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
পৃথক এই মামলা দুটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর উপপরিচালক মো. ফজলুল বারী। তিনি বিষষটির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্নভাবে আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ২২ লক্ষাধিক টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে আত্মসাতের অভিযোগে বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাছ আলীসহ তিনজনের নামে পৃথক দুইটি মামলা করেছে দুদক। সাবেক এই মেয়র উভয় মামলার প্রধান আসামি। তবে বাকি দুইজনকে পৃথকভাবে একটি করে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মামলা দুটির তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলসহ পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসএস