ঢাকা: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প ও ডিজাইন) উজ্জ্বল মল্লিককে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদাবনতি দিয়েছেন রাজউক কর্তৃপক্ষ। বুধবার (৬ নভেম্বর) রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ছিদ্দিকুর রহমান সরকার (অবঃ) স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, উজ্জ্বল মল্লিক, প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প ও ডিজাইন), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা ২০২০ সালের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন ফরম তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা আবদুল লতিফ হেলালী, প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) এর নিকট থেকে গ্রহণ না করে এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস, প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প ও ডিজাইন) এর কাছ থেকে গ্রহণ করতঃ জমা দিয়েছেন মর্মে আবদুল লতিফ হেলালী, প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) এর নিকট থেকে গত ০৭/০৮/২০২৪ খ্রি. তারিখ এবং মোঃ নুরুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ডিজাইন) এর নিকট থেকে গত ০৮/০৮/২০২৪ খ্রি. তারিখ অভিযোগ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে তাকে স্মারক নং-২৫.৩৯.০০০০,০০৯,২৭,২২০(০০৯),২১.১৫৬৯, তারিখ ০৮/০৮/২০২৪ খ্রি এর মাধ্যমে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হলে তার গত ১৩/০৮/২০২৪ খ্রি. তারিখে দাখিলকৃত কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব সন্তোষজনক মর্মে প্রতীয়মান হয়নি।
এতে আরও বলা হয়, যেহেতু, উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকুরী বিধিমালা, ২০১৩ এর বিষি ৩৭(খ) মোতাবেক অসদাচরণ দায়ে অভিযুক্ত করে বিভাগীয় মামলা নং-১৬/২০২৪ রুজু করতঃ স্মারক নং-২৫.৩৯,০০০০,০০৯,০৪,০১৬,২৪,১৯৫৭ তাং- ১৮.০৮.২০২৪খ্রি. এর মাধ্যমে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী প্রেরণ করা হয়; এবং যেহেতু, অভিযুক্ত কর্মকর্তা অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণীর জবাব দাখিল করেন এবং ব্যক্তিগত শুনানির গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিগত ২৫/০৯/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ ব্যক্তিগত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ব্যক্তিগত শুনানি অন্তে ঘটনা প্রমাণিত হলে গুরুদন্ড আরোপের সদ্ভাবনা থাকায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। এবং যেহেতু, তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক দাখিলকৃত ২৩ অক্টোবর, ২০২৪খ্রি. তারিখের প্রতিবেদন অনুযায়ী উজ্জ্বল মল্লিক, প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প ও ডিজাইন), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা এর বিরুদ্ধে আনীত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা-২০১৩ এর বিধি ৩৭(খ) মোভাবেক অসদাচরণ এর অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হয়েছে মর্মে মতামত প্রদান করেন; এবং যেহেতু, তদন্ত প্রতিবেদন এবং বিভাগীয় মামলা সংশ্লিষ্ট নথি ও অন্যান্য কাগজপত্রসহ প্রাসঙ্গিক সকল বিষয় পর্যালোচনায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা ও কর্মচারি) চাকুরি বিধিমালা, ২০১৩ এর বিধি ৩৭(খ) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় একই বিধিমালার ৩৮(১) এর দফা (খ)(অ) অনুযায়ী চাকরি হতে বরখাস্ত বা অন্য কোনো পুরুদন্ড প্রদান করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণক্রমে একই বিধিমালার বিধি ৪১(৬) মোতাবেক দ্বিতীয় কারন দর্শানোর নোটিশ জারি করে ৭(সাত) কার্যদিবসের মধ্যে জবাব প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়, এবং যেহেতু, অভিযুক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ৫ নভেম্বর, ২০২৪, তারিখের দাখিলকৃত দ্বিতীয় কাজদর্শানোর নোটিশের জবাব সন্তোষজনক মর্মে প্রতীয়মান হয়নি।
সেহেতু, উজ্জ্বল মল্লিক, প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প ও ডিজাইন), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, তার কার দর্শানোর জবাব, বিভাগীয় মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, ব্যক্তিগত শুনানী এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনাক্রমে বর্ণিত ‘অসদাচরণ’ অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকুরী বিধিমালা, ২০১৩ এর বিধি ৩৮(১) দফা খ(অ) মোতাবেক আদেশ জারির তারিখ হতে ৫ (পাঁচ) বছরের জন্য ‘নিম্নপদে অবনতকরণ’ অর্থাৎ ৫০,০০০-৭১,২০০ টাকার বেতন স্কেলের নিম্ন স্কেল ৪৩,০০০-৬৯,৮৫০ টাকার স্কেলে ৪৩,০০০ টাকার মূল বেতনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে নামিয়ে দেওয়ান গুরুদন্ড আরোপ করা হলো। পদাবনতি বলবৎ থাকার সময়কাল বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির জন্য গণনাযোগ্য হবে না। তবে দড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৫০,০০০-৭১,২০০ টাকার বেতন স্কেলে প্রত্যাবর্তন করবেন। তিনি কোনো বকেয়া প্রাপ্য হবেন না।
এর আগে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিকের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিলো। গত ২ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ আদেশ দেন। আদেশপত্রে স্বাক্ষর করেন মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।
আদেশে বলা হয়েছিল, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিকের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায় সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হলো।
এর আগে মামলার স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক ২০০৯ সালে প্রকল্প কর্মকর্তা হয়ে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে যোগ দেন। পরে তিনি ওই প্রকল্পে অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক এবং পরে পদোন্নতি পেয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হন । ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি পিডি ছিলেন। একপর্যায়ে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী হয়েও পিডির পদে ছিলেন। পরে তাকে পিডির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পিডি থাকাকালে প্রকল্পের মহাপরিকল্পনায় বাণিজ্যিক ব্লকের সঙ্গে থাকা একটি আরবান ইউটিলিটি ফ্যাসিলিটির (ইউইউএফ) জায়গায় ৭ কাঠা আয়তনের প্লট বানিয়ে নিজের নামে বরাদ্দ নেন। পূর্বাচল প্রকল্পের ৫ নম্বর সেক্টরের ১০৩ নম্বর রোডের ৯১ নম্বর প্লটটির জন্য সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অথচ প্লটটির বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
রাজউক সূত্র বলেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রধান প্রকৌশলী (ডিজাইন ও নকশা) পদে পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে উজ্জ্বল মল্লিকের বিরুদ্ধে। পদোন্নতির জন্য নিয়ম অনুযায়ী তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ হেলালীর কাছ থেকে বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি নেন আরেক প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌসের কাছ থেকে। বিষয়টি নিয়ে সংস্থাটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ দিলে ৮ আগস্ট উজ্জ্বল মল্লিককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। তিনি লিখিত জবাব দিলে ১৮ আগস্ট তা গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেন রাজউকের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ছিদ্দিকুর রহমান সরকার।
সূত্র বলছে, ওই পদে পদোন্নতির তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন আব্দুল লতিফ হেলালী ও দুই নম্বরে ছিলেন নুরুল ইসলাম। এ পদোন্নতির অংশ হিসেবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় যে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করেছিল, সেখানে আপত্তি দিয়েছিল দুদক। অনাপত্তি চাওয়া হলে ছক আকারে পাঠানো পত্রে দুদক উজ্জ্বল মল্লিকের নামের পাশে দুদকের মামলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এসএস
আপনার মতামত লিখুন :