ঢাকা : মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী রোববার (১৭ নভেম্বর)। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
টাঙ্গাইলের সন্তোষে মাওলানা ভাসানীকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়। এ উপলক্ষে ঢাকা ও টাঙ্গাইলের সন্তোষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাণী দিয়েছেন।
মওলানা ভাসানী তার কৈশোর-যৌবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি তৎকালীন বাংলা-আসাম প্রদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। লাইন-প্রথা উচ্ছেদ, জমিদারদের নির্যাতনবিরোধী আন্দোলনসহ সারাজীবনই তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। তার উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী অধিকার বঞ্চিত, অবহেলিত ও মেহনতি মানুষের অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় আজীবন নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম করে গেছেন। জাতীয় সংকটে জনগণের পাশে থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি দেশ ও জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন। মওলানা ভাসানী সবসময় ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন। ক্ষমতার কাছে থাকলেও ক্ষমতার মোহ তাকে কখনও আবিষ্ট করেনি। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন নির্মোহ, অনাড়ম্বর ও অত্যন্ত সাদাসিধে। তার সাধারণ জীবনযাপন দেশ ও জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রতিফলন। শোষণ ও বঞ্চনাহীন, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের জন্য মওলানা ভাসানী আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে মওলানা ভাসানীর জন্ম। সিরাজগঞ্জে জন্ম হলেও তার জীবনের বড় অংশই কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে। তিনি তার কৈশোর-যৌবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
জানা গেছে, মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে টাঙ্গাইল পৌর শহরের সন্তোষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ভাসানী ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সমাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
রোববার সকাল সাড়ে ৭টায় মওলানা ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করার কথা ছিল মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দের। এরপর ভাসানীর পরিবার, রাজনীতিক দল, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও মওলানা ভাসানীর মুরিদান, ভক্ত, অনুসারীরা মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং মোনাজাত করবেন। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, এতিম ও দুঃস্থদের খাবার পরিবেশন করা হবে।
ভাসানী ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মাহমুদুল হক সানু জানান, মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সন্তোসে ভাসানী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১১ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত সাত দিনব্যাপী ভাসানী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলার মুক্ত মঞ্চে প্রতিদিন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল জানান, মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার সকাল ১১টায় ভাসানীর মাজার প্রাঙ্গণে জেলা বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকার কথা রয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ জাতীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
এমটিআই