ঢাকা : রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত তিন মাসে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় দুই হাজার ২০০ মামলা হয়েছে।
এসব মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, পতিত সরকারের সহযোগী হিসাবে চিহ্নিত আমলা, ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক-বর্তমান সদস্যদের আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫ পুলিশসহ ১১০ হাই প্রোফাইল ব্যক্তিকে।
এছাড়া বিভিন্ন মামলায় আরও প্রায় ১৫ হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অক্টোবরেই গ্রেফতার করা হয় প্রায় ছয় হাজার আসামিকে।
অপরদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গত তিন মাসে চার হাজার ৭১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে আগস্টে ৯১১, সেপ্টেম্বরে এক হাজার ১৪২ এবং অক্টোবরে দুই হাজার ৬৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গ্রেফতারের জন্য শতাধিক পুলিশ সদস্য ও কয়েকশ আওয়ামী লীগের হাই প্রোফাইল নেতাকে খুঁজছে পুলিশ। যাদের খোঁজা হচ্ছে তাদের নামে বেশ কয়েকটি করে মামলা আছে। এদের কেউ কেউ ইতোমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত যেসব পুলিশ সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন-সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ হিল কাফি, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, ডিএমপি ডিবির সাবেক উপকমিশনার মশিউর রহমান, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, গুলশানের সাবেক ওসি মাজহারুল ইসলাম, গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের সহকারী কমিশনার ইফতেখার মাহমুদ, ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) তানজিল আহমেদ, এসপি শাহেন শাহ, অতিরিক্ত এসপি রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন হোসেন, এসআই শাহাদাত আলী, কনস্টেবল শোয়াইবুর রহমান, নায়েক সজিব সরকার, কনস্টেবল বায়েজিদ বোস্তামী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল রানা, অতিরিক্ত ডিআইজি মহিউদ্দিন ফারুকী, মিরপুর বিভাগের সাবেক ডিসি জসিম উদ্দিন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলেপ উদ্দিন প্রমুখ।
গ্রেফতার তালিকায় থাকা পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে আছেন-সাবেক অতিরিক্তি আইজিপি (সাবেক এসবি প্রধান) মনিরুল ইসলাম, সাবেক র্যাব ডিজি হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার, ডিএমপি ডিবির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, এসএম মেহেদী হাসান, ওয়ারী বিভাগের সাবেক ডিসি ইকবাল হোসাইন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া, সাবেক অতিরিক্ত আইজি লুৎফর কবির, জামিল আহম্মেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সিটিটিসির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান, সিটিটিসির সাবেক যুগ্ম-কমিশনার কামরুজ্জামান, সাবেক ডিআইজি রিপন সরদার, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জেয়াদ্দার, সাবেক যুগ্ম-কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন সরদার, ডিএমপি ডিবির সাবেক যুগ্ম-কমিশনার সঞ্জিত কুমার রায়, ডিএমপি ডিবি রমনা বিভাগের সাবেক ডিসি মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, সাবেক ডিসি (হেডকোয়ার্টার্স) তানভির সালেহীন ইমন, ডিবির সাবেক ডিসি রাজিব আল মাসুদ, উপকমিশনার মাহফুজুল আল রাসেল, জাহিদুল হক তালুকদার, হায়াতুল ইসলাম, আশরাফুল আজিম, এইচএম আজিমুল হক, হাফিজু আল ফারুক, মাহাবুব-উজ-জামান, জাফর হোসেন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নুরুল আমিন, গোবিন্দ চন্দ্র, শাহেন শাহ, হাফিজ আাল আসাদ, মুহিত কবির সেরনিয়াবাত, শহিদুল ইসলাম, হাসান আরাফাত, নাজমুল ইসলাম, সাব্বির রহমান, আফজাল হোসেন টুটুল, ফজলে এলাহী, রওশানুল হক সৈকত, শাকিল মোহাম্মদ শামীম, সহকারী কমিশনার (এসি) রেফাতুল ইসলাম রিফাত, শাহীনুর রহমান, শহীদুল হক, মিজানুর রহমান, তানজিল আহমেদ গোলাম রুহানী, সাবেক ওসি আমিনুল ইসলাম, শাহীনুর রহমান শাহীন, খন্দকার হেলাল উদ্দিন, মাহাবুব রহমান, ফরমান আলী, মাহফুজুল হক ভূঁইয়া, শিকদার মো. শামীম হোসেন, সেলিমুজ্জামান, পলয় কুমার সাহা, আতিকুর রহমান মসিউর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল হাসান রনোজিত রায়, মেহেদী হাসান, ফায়োত উদ্দিন রক্তিম, জাকির হোসেন, আতিকুল হক, রবিউল ইসলাম, মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন, আবুল বশার, এসআই অমিতাভ দর্জি, মামুন মাতব্বর, আশরাফুল সিকদার, শাহাদাৎ আলী, কাউসার আহম্মদ খান, নূরে আলম মিয়া, মাসুম বিল্লাহ, মো. বশির, রাজিব চন্দ্র সরকার, মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম, এএসআই শাহরিয়ার আলম প্রমুখ।
তিন মাসে গ্রেফতার হওয়া ভিআইপিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, সাবেক এমপি সাদেক খান, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহায়েল, সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, দেশ টিভির এমডি আরিফ হাসান, সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভু, অভিনেত্রী শমী কায়সার, গান বাংলা টেলিভিশনের চেয়ারম্যান কৌশিক হোসেন তাপস, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আব্দুস শহীদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ পরিবারের সদস্য হাসনাত আব্দুল্লাহর ছেলে মঈন আব্দুল্লাহ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, সাবেক এমপি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম মিলন, সাবেক মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও উপদেষ্টা কামাল নাসের চৌধুরী, সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ, বিএবির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, বসুন্ধরা গ্রুপের কো-অর্ডিনেটর নাসিম আদনান, সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল জ্যাকব, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক এমপি এমএ আউয়াল, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।
পুলিশ মহাপরিদর্শক ময়নুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল তাদের অনেককেই আমরা ইতোমধ্যে আইনের আওতায় এনেছি। যেসব আসামিকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি, তাদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
এমটিআই