ঢাকা : আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৯) শেষের দিকে এসে ঠেকেছে। সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয়—জলবায়ু অর্থায়ন—নিয়ে গভীর বিভক্তি ও মতবিরোধ তৈরি হয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নত দেশগুলোর কাছে জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য চাপ বাড়ালেও সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা দেখা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার জলবায়ু তহবিল নিয়ে প্রস্তাবিত একটি নতুন খসড়া ঘোষণা করা হলে, এটি পুরো সম্মেলন জুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
বিশ্বব্যাপী ৮০টি জলবায়ু-প্রভাবিত দেশের একটি জোট, যার মধ্যে ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহ, স্বল্পোন্নত দেশসমূহ (এলডিসি), আফ্রিকান গ্রুপ (এজিএন) এবং ল্যাটিন আমেরিকার স্বাধীন অ্যাসোসিয়েশন (এআইএলএসি) অন্তর্ভুক্ত, বিপুল পরিমাণ অনুদান-ভিত্তিক একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের ‘রোডম্যাপ টু বেলেম’ পরিকল্পনায় প্রতি বছর ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা শিপিং ও এভিয়েশন খাতে নতুন শুল্ক এবং তেল-গ্যাস ভর্তুকি পুনঃনির্দেশনার মাধ্যমে অর্জন করা হবে।
প্রতিশ্রুত তহবিল নিয়ে উত্তেজনা বাড়লেও এখনো কোথা থেকে কত অর্থ আসবে এবং কতটা অর্থ প্রাপ্তি হবে- এ ব্যাপারে কোনো সমঝোতা হয়নি।
কপ২৯-এর সভাপতি মুখতার বাবায়েভ আজ দুপুরে (শুক্রবার) বাকু সময়ে সংশোধিত একটি তহবিল টেক্সট প্রকাশের কথা বলেছেন, যা এই অচলাবস্থা কাটাতে সহায়ক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে কপ২৯-এর অন্তিম সময়ে সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, চুক্তির কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকার কারণে তার সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে।
আন্তর্জাতিক জলবায়ু নীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু তহবিলের জন্য উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য সমঝোতা না হলে, কপ-২৯ সম্মেলনটি একটি হারিয়ে যাওয়া সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে ইতিহাসে স্থান পাবে।
বিশ্বের শীর্ষ ২০ অর্থনৈতিক শক্তি, উন্নত দেশগুলো তাদের জলবায়ু তহবিল প্রতিশ্রুতি পূরণে মনোযোগ দিচ্ছে না—এমন অভিযোগ তুলেছেন উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেতারা।
কলম্বিয়ার পরিবেশমন্ত্রী সুসানা মুহাম্মাদ বলেছেন,‘ধনী দেশগুলোকে এখন মানুষের জীবন নিয়ে ভূ-রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করতে হবে।’ তার এই মন্তব্য পুরো সম্মেলনে প্রশংসিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কপ-২৯-এর খসড়া টেক্সট ও বৈজ্ঞানিক সমাধানগুলোর মধ্যে অসঙ্গতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সমাধানগুলো সহজলভ্য, তখন মার্কেট-বেসড কার্বন ট্রেডিংয়ের দিকে কেন মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে?’
ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়কারী বাংলাদেশি জলবায়ু কর্মী সোহানুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ু অর্থায়ন দান-খয়রাতের বিষয় নয়। এটা আমাদের ন্যায্য হিস্যা, জলবায়ু সুবিচারের প্রশ্ন। উন্নত দেশগুলোকে ঋণ নয়, অনুদান দিতে হবে। কম অভিযোজন মানে বেশি ক্ষতি। উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে আর বাড়াতে হবে অভিযোজন অর্থায়ন।’
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :