ঢাকা :
প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে দায়িত্ব পালনের শপথ নিল এ এম এম নাসির উদ্দীন নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন, যাদের ওপর থাকছে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ভার।
রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুর দেড়টায় সুপ্রিম কোর্ট জাজেজ লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ প্রথমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনকে শপথ পড়ান। এরপর চার নির্বাচন কমিশনারকে শপথ বাক্য পাঠ করান তিনি।
শপথ নেওয়া চার নির্বাচন কমিশনার হলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তহমিদা আহ্মদ ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
ক্ষমতার পালাবদলের পর এমন এক সময়ে নাসির কমিশন দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে, যখন রাষ্ট্র সংস্কার করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে মুহাম্মদ নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ এর অধীনের নতুন ইসি গঠনে ৩১ অক্টোবর সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। আইনে বেধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম জমা দেয় এই কমিটি।
সার্চ কমিটি প্রস্তাবিত তালিকা থেকে বৃহস্পতিবার একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চারজনকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তাদের মেয়াদ পাঁচ বছর।
ক্ষমতার পালাবদলে পর গঠিত অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের তরফে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ন্যূনতম ঐক্যমত্যের’ ওপর নির্ভর করছে নির্বাচনের টাইমলাইন’।
সবশেষ এ বছরের ৭ জানুয়ারি তাদের অধীনেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে গত জানুয়ারিতে সেই নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তার আট মাসের মাথায় গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গঠিত কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে।
দেড় মাস ধরে শূন্য থাকার পর এ এস এম মো. নাসির উদ্দীন নেতৃত্বাধীন ইসি নিয়োগ পেয়ে পূর্ণ হল নির্বাচন কমিশন।
সিইসি যারা : দেশে এর আগে ১৩ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং ৩১ জন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের অধিকাংশই নাসির উদ্দীনের মত অবসরপ্রাপ্ত আমলা।
এবার নিয়ে টানা পঞ্চমবার সিইসি পদে নিয়োগ পেলেন সাবেক সচিব, যার শুরু হয়েছিল এ টি এম শামসুল হুদার মাধ্যমে। শামসুল হুদার আগের কমিশনে একজন বিচারক থাকলেও তার আগে আবার ছিলেন আমলা।
১৯৭২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতিরা। এরপর ইসিতে শুরু হয় সাবেক আমলাদের নেতৃত্ব।
মাঝখানে ২০০৫ সালে এক বছর সাত মাস একজন বিচারপতি ছাড়া গত প্রায় তিন দশক সাবেক আমলারাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এ এম এম নাসির উদ্দীন: ২৪ নভেম্বর থেকে…
কাজী হাবিবুল আউয়াল: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
কে এম নূরুল হুদা: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
এ টি এম শামসুল হুদা: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি
বিচারপতি এম এ আজিজ: ২৩ মে ২০০৫ থেকে ২১ জানুয়ারি ২০০৭
এম এ সাইদ: ২৩ মে ২০০০ থেকে ২২ মে ২০০৫
মোহাম্মদ আবু হেনা: ৯ এপ্রিল ১৯৯৬ থেকে ৮ মে ২০০০
বিচারপতি এ কে এম সাদেক: ২৭ এপ্রিল ১৯৯৫ থেকে ৬ এপ্রিল ১৯৯৬
বিচারপতি আব্দুর রউফ: ২৫ ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ১৮ এপ্রিল ১৯৯৫
বিচারপতি সুলতান হোসেন খান: ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯০
বিচারপতি চৌধুরী এ টি এম মাসউদ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০
বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম: ৮ জুলাই ১৯৭৭ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫
বিচারপতি মো. ইদ্রিস: ৭ জুলাই ১৯৭২ থেকে ৭ জুলাই ১৯৭৭
সিইসির দায়িত্বে বিচারপতিদের মধ্যে মো. ইদ্রিস ও এটিএম মাসউদ এবং সাবেক আমলাদের মধ্যে এম এ সাঈদ, শামসুল হুদা, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও নূরুল হুদা পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছেন।
নতুন কমিশনকে বরণে প্রস্তুত নির্বাচন ভবন : নতুন নির্বাচন কমিশনকে বরণ করে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।
নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার কমিশনার রোববার (২৪ নভেম্বর) বেলা দেড়টায় শপথ নেওয়ার পর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে গিয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন।
সেজন্য সব আয়োজন সেরে রাখা হয়েছে জানিয়ে ইসির পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শরিফুল আলম বলেন, দেড়টায় শপথ নেবেন। সেজন্য প্রোটকল পাঠানো হয়েছে। তাদের জন্য প্রস্তুত গাড়িও সেখানে পাঠানো হয়েছে। কমিশনকে বরণ করতে ইসি সচিব নিজে গেছেন। সাথে অতিরিক্ত সচিবও সেখানে গেছেন।
প্রবল গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক মাস পর গত ৫ সেপ্টেম্বর হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করে। এর আড়াই মাস পর অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
নতুন কমিশনে কমিশনার হিসেবে থাকছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব বেগম তহমিদা আহমদ এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ভার কমিশনের ওপর থাকবে।
রোববার (২৪ নভেম্বর) বেলা দেড়টায় নতুন কমিশনকে শপথ পাঠ করাবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এরপর তাদের অফিসে গিয়ে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার কথা রয়েছে।
তাদের যোগদানের আগে নির্বাচন ভবনে নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি অফিসের সাজসজ্জার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নতুন করে রঙ করা হয়েছে।
বেলা সাড়ে ৩টায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন নতুন কমিশনের সদস্যরা। বিকাল ৪টায় ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তাদের মতবিনিময় করার কথা রয়েছে বলে জানান শরিফুল আলম।
দেশের চতুর্দশ সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া নাসির উদ্দীনকে অন্তর্বর্তী সরকার স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিল।
নিয়োগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নাসির উদ্দীন বলেছিলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, তা তা করব ইনশাআল্লাহ। এ দায়িত্ব যখন আসছে, আমাদের সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে সবার সহযোগিতা নিয়ে।
এমটিআই