• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
ভয়েস অফ আমেরিকার জরিপ

৪৪.৭% মানুষের ধারণা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে খারাপ করছে অন্তর্বর্তী সরকার


নিউজ ডেস্ক ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ১২:৪৮ পিএম
৪৪.৭% মানুষের ধারণা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে খারাপ করছে অন্তর্বর্তী সরকার

ঢাকা : মার্কিন গণমাধ্যম ভয়েস অফ আমেরিকার এক জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে অধিকাংশ মানুষের ধারণা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে অথবা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে।  

রোববার (১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যমটি।

জরিপে দেখা গেছে, ৪৪.৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন চাল, মাছ, সবজি, ডিম, মাংস, তেল-এর মত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে খারাপ পারফর্ম করেছে।

এক-চতুর্থাংশের কম উত্তরদাতা – ২৩.৮ শতাংশ - মনে করেন বর্তমান সরকার আগের সরকারের তুলনায় ভাল করছে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ – ৩০.৮ শতাংশ – মনে করেন পরিস্থিতি আগে যা ছিল তাই আছে।

ভয়েস অগ আমেরিকা জানায়, ১,০০০ মানুষের ওপর এই জরিপ করা হয়। জরিপে উত্তরদাতাদের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ের সাথে সাবেক আওয়ামী সরকারের শাসনামলের তুলনা করতে বলা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ে নারী এবং পুরুষ উত্তরদাতাদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।

পুরুষ উত্তরদাতদের ৩১.৩ শতাংশ মনে করেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের চেয়ে ভাল করছে। অন্যদিকে, নারী উত্তরদাতাদের মাত্র ১৬.৩ শতাংশ মনে করেন বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে ভাল করছে।

নারীদের একটি বড় অংশ – ৪১.২ শতাংশ – মনে করেন পরিস্থিতি আগে যা ছিল তাই আছে, কিন্তু পুরুষ উত্তরদাতাদের মাত্র ২০.৩ শতাংশ তাই মনে করেন।

ভয়ানক আর্থিক চাপ : সরকার পরিবর্তনের পর মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে ভয়াবহ আর্তিক চাপে পড়েছেন মানুষ। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ’বছর জুন মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৭২ শতাংশ। এই হার অক্টোবর মাসে এসে দাঁড়িয়েছে ১০.৮৭ শতাংশে। এর মধ্যে দেশে একটি গণঅভ্যুত্থান এবং সরকার পরিবর্তন হয়ে গেছে।

তবে মূল্যস্ফীতি হঠাৎ করে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০২৪ –এর জুলাই-এ সৃষ্টি হয় নি, যদিও সে মাসেই ছিল এ পর্যন্ত বছরের সবচেয়ে উঁচু হার – ১১.৬৬ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ২০২০ বা ২০২১ সালে ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠা-নামা করছিল। কিন্তু ২০২২ সালের মাঝা-মাঝি সময় থেকে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে এবং ২০২৩ সাল তা ৯ শতাংশের উপরে, ১০ ছুঁই ছুঁই করছিল।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০২২ সালে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্ব জ্বালানী বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে, এবং তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর ফলে আমদানি-নির্ভর বাংলাদেশের জন্য আসে বড় ধাক্কা।

বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমে যায়, বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভ কমতে থাকে এবং দেশের আমদানি করার সক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।

অগাস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা নেয়ার পর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের উপর উর্ধমুখি চাপ অব্যাহত থাকে। সেপ্টেম্বর যদিও মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে, কিন্তু অক্টোবরে তা পুনরায় ১১ শতাংশের কাছাকাছি চলে যায়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন এখানে রাজনৈতিক এবং প্রাকৃতিক ঘটনাবলী প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশে জুলাই-অগাস্ট-এর আন্দোলন এবং তার প্রেক্ষিতে সরকার পতনের ফলে সরবরাহ চেইন ব্যাহত হয়েছে, এবং আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থাও প্রভাবিত হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর রিসার্চ ডিরেক্টর গোলাম মোয়াজ্জেম।

এছাড়া একই সাথে দেশের বড় এলাকা জুড়ে পর পর দুটো বন্যার ফলে চালের উৎপাদন, বিশেষ করে আমন এবং অন্যান্য শাক-সবজির উৎপাদনের উপর চাপ পড়েছে বলেন তিনি।

গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর দেশের অনানুষ্ঠানিক সেক্টরে এবং সেবা খাতে কর্মসংস্থান এবং আয়ের উপর সম্ভবত নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে গোলাম মোয়াজ্জেমের ধারনা। যার ফলে তুলনামুলকভাবে কাজ কম, এবং বিশেষ করে যারা দৈনিক কাজ করে অ্যায় করেন, তাদের উপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

তবে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেবার পর তারা মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষে বেশি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন চাল, আলু, চিনি, তেল, পিঁয়াজ ইত্যাদির উপর আমদানি কর কমানো হয়েছে।

বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য এলসির মার্জিন ১০০ ভাগ থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে, যাতে আমদানিকারক সহজে আমদানি করতে পারে। একই সাথে বাজার মনিটর করা হচ্ছে, সরবরাহ চেইনে যারা বড় ভূমিকা রাখেন তাদের উপর নজরদারি করা হচ্ছে।

চাকুরীজীবীদের উপর চাপ : অন্তর্বর্তী সরকারের পরিসংখ্যান আগের তুলনায় আরও স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য হলেও, প্রশাসনের পদক্ষেপে কোন নতুনত্ব নেই বলছেন, সিপিডির রিসার্চ ডিরেক্টর গোলাম মোয়াজ্জেম।

ভয়েস অফ আমেরিকা বলছে, মূল্যস্ফীতির এই ধাক্কা নির্দিষ্ট আয়ের চাকুরীজীবীদের উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলছে। আগে চাকুরীজীবীদের মাসিক আয়ের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ খরচ হতো বাসা ভাড়া এবং খাদ্যদ্রব্যে। এখন ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ খরচ করতে হচ্ছে। যার ফলে থমকে গেছে তাদের সঞ্চয়।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!