ঢাকা: জনপ্রশাসনে তিন স্তরে (অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব ও উপসচিব) পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যুগ্মসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে ২৮৭, উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব পদে ৫৭২ ও সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে ৫৪২ করে মোট ১ হাজার ৪০২ কর্মকর্তা পদোন্নতিযোগ্য হয়েছেন।
প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তার চাকরিজীবনের যাবতীয় তথ্য যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করছে পদোন্নতির সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)।
গতকাল সোমবার পদোন্নতির জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ এর সভাপতিত্বে বৈঠকে বসে এসএসবি। বৈঠকে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সব নথি পর্যালোচনা করা হয়। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরি জীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতি বিষয়সহ সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের ২১২ পদে কর্মকর্তা রয়েছেন ৪৫৩ জন। যুগ্মসচিবের ৫০২টি পদে রয়েছেন ৮৬২জন কর্মকর্তা। সুপারনিউমারারী পদসহ উপসচিবের অনুমোদিত পদসংখ্যা ১ হাজার ৪২০টি। তবে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৫৯৮ জন।
অর্থাৎ প্রতিটি স্তরেই পদের দ্বিগুণ কর্মকর্তা রয়েছে। তারপরও তিন স্তরের পদোন্নতি দিতে বৈঠক শুরু করেছে এসএসবি। প্রথমে উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব এরপর সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব এরপর যুগ্মসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব পদোন্নতির জন্য নিয়মিত হিসেবে ২৪ ব্যাচকে বিবেচনা করা হচ্ছে। ৩৩৬ জন কর্মকর্তা ২০০৪ সালে এই ব্যাচে চাকরিতে যোগদান করেন। এর মধ্যে ৩২৯ জন কর্মকর্তা পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে লেফট আউট হয়ে বঞ্চিত আছেন ৪৩ কর্মকর্তা।
অন্যান্য ক্যাডারের যোগ্যতা অর্জন করেছেন ২০০ কর্মকর্তা। সব মিলিয়ে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতির জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন ৫৭২ জন কর্মকর্তা। এসকল কর্মকর্তার প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরি জীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতি বিষয়সহ সামগ্রিক তথ্য এসএসবির টেবিলে দেওয়া হয়েছে।
পদোন্নতি বিধিমালা, উপসচিব পদে অন্যূন পাঁচ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা। অথবা উপসচিব পদে অন্যূন তিন বছর চাকরিসহ ক্যাডার পদে ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সিনিয়র সহকারী সচিব হতে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি দিতে চলতি বছরের শুরুতেই প্রশাসন যোগ্য কর্মকর্তাদের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে সব সচিবকে চিঠি পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। উপসচিব পদোন্নতির জন্য নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে ৩০ ব্যাচকে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই ব্যাচে ২৭৭ জন কর্মকর্তা ২০১২ সালে যোগদান করে। লেফট আউটসহ প্রশাসন ক্যাডারের ৩১৯ জন কর্মকর্তা পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন।
এছাড়াও অন্যান্য ক্যাডারের ২২৩ কর্মকর্তা ডিএস পুলে যোগ দিতে আবেদন করেছেন। এসকল কর্মকর্তার প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা-দুর্নীতির বিষয়সহ ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে চাকরিজীবনের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত এবং পরিবারের সদস্যসহ নিকটাত্মীয়দের সম্পর্কেও খোঁজ নেওয়া হয়েছে।
যুগ্মসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিতে নিয়মিত হিসেবে ২০তম ব্যাচকে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডার থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে এ পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এবারের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য যুগ্মসচিব পদমর্যাদার প্রায় ২৮৭ জন কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এসকল কর্মকর্তার শৃঙ্খলাসহ প্রয়োজনীয় প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ১৯৯৯ সালে শেষ হয়। ২০১৯ সালে যুগ্মসচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও তাদের পদোন্নতি হয়েছে ২০২১ সালে। যুগ্মসচিব হিসেবে দুই বছর চাকরি করলেই অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জিত হয়। সে হিসাবে এ ব্যাচের অতিরিক্ত সচিব হওয়ার যোগ্যতা হয়েছে ২০২৩ সালে।
সরকারের উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২-এ বলা হয়েছে, মূল্যায়ন নম্বরের অন্তত ৮৫ নম্বর পেতে হবে। যুগ্মসচিব পদে কমপক্ষে তিন বছর চাকরিসহ ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা বা যুগ্মসচিব পদে কমপক্ষে দুই বছরের চাকরিসহ ২২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হন।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলেন, জনপ্রশাসনে পদোন্নতির বিষয়টি আমাদের নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ।
তিনস্তরে পদোন্নতির জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। যুগ্মসচিব এবং উপসচিব পদোন্নতির জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতির প্রক্রিয়াও শুরু করেছি। এসএসবির বৈঠক চলছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে এসএসবির সদস্যদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
এআর