ঢাকা: সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার খান বলেছেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। তদন্ত করে সচিবালয়ের আগুনের বিষয়ে বলা যাবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই সেনাবাহিনীর দায়িত্বভুক্ত।
তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তেই সেনাবাহিনী প্রত্যাহার হবে। কত দিন দায়িত্ব পালন করবে, সে সিদ্ধান্ত সরকারই নেবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি সহজ নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি আছে। অনেক ধরনের অনিশ্চয়তা আছে। বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। সেনাবাহিনী অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সেসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে। যাতে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহনশীল অবস্থায় থাকে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনা সদরের আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান এসব কথা বলেন।
গত ৫ আগস্টের পরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, ‘পরিসংখ্যানগত দিক থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। তবে অনেক ঘটনা ঘটছে। সেগুলো আমাদের নজরদারিতেও আছে। এটা নিয়ে পুলিশ কাজ করছে, আমরাও কাজ করছি। আমাদের বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক সমন্বয় সেল আছে। যেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বয় করে।’
তিনি আরও বলেন, সেনা সদর পর্যায়ে ও উপদেষ্টা পর্যায়েও সমন্বয় করা হয়। এ ছাড়া দেশে যত ধরনের আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত হুমকি উঠে আসে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয় এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে, তা ঠিক করা হয়। এভাবে অনেক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চাঁদাবাজির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে অবশ্যই প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসায় সেনাবাহিনী মোট তিন হাজার ৫৮৯ জনকে সেবা দিয়েছে। বর্তমানে ৩৬ জন এখনো চিকিৎসাধীন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন অসুস্থ হয়ে রংপুর সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ১০ ডিসেম্বর তাকে ঢাকা সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। তিনি বর্তমানে ঢাকা সিএমএইচের এইচডিইউতে চিকিৎসাধীন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২৮ নভেম্বরের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ২৮টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৪২৪টি গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এ সময় দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে (মূলত গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার এলাকায়) ৬৭টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত ১৩ বার মূল সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।
কারখানাগুলো চালু রাখার জন্য মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, শিল্পাঞ্চল পুলিশ, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে বর্তমানে দেশের ২ হাজার ৯৩টি তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে ১টি ছাড়া সব কারখানাই চালু আছে। শিল্পাঞ্চল ছাড়া সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিগত এক মাসে ৪৫টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।
এসএস