ঢাকা: শুধু একটি নির্বাচনের জন্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতরা রক্ত দেয়নি বলে অভিমত দিয়েছেন হতাহতের স্বজনরা।
ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের (এফবিএস) আয়োজনে ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ স্লোগানে জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী জাতীয় সংলাপে এ কথা বলেন তিনি।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এ সংলাপ শুরু হয়। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনিও তার ভাষণে সংস্কারের ওপর জোর দেন। সেই সঙ্গে সংস্কার ইস্যুতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সংলাপে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নিহতদের স্বজন ও আহতরা বলেন, সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করেন তারা। একই সঙ্গে গণহত্যায় জড়িত পুলিশদের গ্রেফতার করার দাবি তোলা হয় তাদের পক্ষ থেকে।
মঞ্চে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নিহতদের স্বজন ও আহতদের মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকী, গণফোরামের কো-চেয়ারম্যান সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) নুরুল হক নূর প্রমুখ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আহতদের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর জাতীয় সংলাপে উপস্থিত হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয় সংলাপের শুরুতে কথা বলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবু বকর, নিহত ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল ইসলাম, উত্তরা চব্বিশের সংগঠক মনিশা মাফরুহা, নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান।
আবু বকর বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চার মাসের মধ্যেই সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করেন। এটাকে জাতির জন্য ব্যর্থতা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের জন্য অপমানজনক বলে মন্তব্য করেন আবু বকর।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় আদৌ বিচার হবে কি না, প্রশ্ন তোলেন রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, একটি হত্যাকাণ্ডে একজন করে পুলিশ জড়িত থাকলে ১ হাজার পুলিশ গ্রেফতার হতো, দুজন করে জড়িত থাকলে ২ হাজার পুলিশ গ্রেফতার হতো। কিন্তু গ্রেফতার হয়েছে ২৩ জন পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের কতজন গ্রেফতার হয়েছে? তাহলে আমরা বিশ্বাস করব কীভাবে বিচার হবে? আপনারা সংস্কারের কথা বলেন, কিন্তু বিচারের কথা জোর দিয়ে বলেন না।
এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, যাত্রাবাড়ীতে গণহত্যায় ডিএমপি কমিশনারের (নাম বলেননি) ভাগনে এডিসি জড়িত। তাকে গ্রেফতারের কথা বললেও করা হয়নি। এসময় নিহতদের পরিবার ও আহতদের সহায়তার বিষয়টি দ্রুত করার দাবি জানান মনিশা মাফরুহা।
আবুল হাসান বক্তৃতায় ছেলের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ছেলের জানাজা এলাকায় দিতে দেওয়া হয়নি। দুটি মসজিদে মরদেহের গোসল করাতে দেওয়া হয়নি। আবুল হাসান বলেন, এত রক্ত নির্বাচনের জন্য দিইনি। তিনি নিহতদের পরিবার ও আহতদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলেন।
গোলাম রহমান তার ছেলের নামে একটি রাস্তা ও মেট্রোরেল স্টেশনের নামকরণের দাবি জানান।
এআর