ঢাকা : বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয় বলে মন্তব্য করছেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের যে দাবি বিএনপি জানিয়েছে, সে বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) তিনি এ কথা বলেন।
গোয়েন লুইসের নেতৃত্বে ইউএনডিপির নির্বাচন বিষয়ক মিশন মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। পরে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন গোয়েন লুইস।
নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা আমাদের নির্বাচন মিশনের আলোচনার আওতার বাইরে। এটা আসলে রাজনৈতিক দল ও সরকারের সিদ্ধান্ত। আমরা নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে আলোকপাত করছি না, এই সিদ্ধান্ত নেবে অধ্যাপক ইউনূসের সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো।
গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে দ্বান্দ্বিক অবস্থানে আছে বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো।
গত বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছিলেন, ভোট কবে হবে তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কতটা সংস্কার করে নির্বাচনেযাওয়া হবে, তার ওপর। মোটাদাগে ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে হতে পারে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন।
ইউনূসের ওই ঘোষণায় সন্তুষ্ট না হয়ে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ চেয়ে আসছে বিএনপি; তবে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় সংস্কারে গঠিত কমিশনগুলোর প্রতিবেদন আসার পর সংস্কার প্রক্রিয়া এবং ভোটের সময় ঘোষণার বিষয় আসবে।
এর মধ্যে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা বারবার করে বলছি যে, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নাই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে ইমপর্টেন্ট বিষয়। আমরা মনে করি যে, এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে, অর্থাৎ জুলাই-অগাস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব।
এই কারণে আমরা সরকারকে আহ্বান জানাতে চাচ্ছি, নির্বাচন কমিশনকেও আহ্বান জানাচ্ছি এবং রাজনৈতিকদলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি- দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই বছরের মাঝামাঝি সময়েই মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।
গোয়েন লুইস বলেন, নির্বাচনে কারগরি সহায়তা চেয়ে জাতিসংঘকে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন। কী কী সহায়তা লাগবে এবং সেটা কীভাবে করা হবে, তা নির্ধারণে কাজ করছে এই ইউএনডিপির মিশন।
সেজন্য ইউএনডিপি মিশনের প্রতিনিধিরা আগামী ১০ দিন বাংলাদেশে থেকে রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, সুশীল সমাজ, শিক্ষকসহ অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করবে।
কোন কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন মিশন বসবে তা জানতে চাইলে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক বলেন, যতগুলো সম্ভব; বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল হিসাবে যাদের চিন্তা করা যায়, এমন প্রত্যেকের সঙ্গেই বসবে তারা।
স্থানীয় নির্বাচন নয়, কেবল জাতীয় নির্বাচনে সহযোগিতার বিষয় নিয়ে এই মিশন কাজ করবে বলে আরেক প্রশ্নের জবাবে জানান গোয়েন লুইস।
ভোটার তালিকা হালনাগাদের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি ও কারিগরি সহযোগিতার বিষয়েও কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এটাও (ভোটার নিবন্ধনে সহায়তা) আলোচনার অংশ ছিল।
এমটিআই