• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩০
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন

৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে ফের নির্বাচন


নিজস্ব প্রতিবেদক:  জানুয়ারি ১৫, ২০২৫, ০৮:০২ পিএম
৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে ফের নির্বাচন

ঢাকা: নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনরায় সেই নির্বাচন করার সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহারের আইন বাতিল করার সুপারিশ করেছে।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই কমিশন পুরো নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে নয় পৃষ্ঠার সুপারিশ জমা দেয়।

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
(ক) ঋণ-বিল খেলাপিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা।

(খ) কোনো আদালত কর্তৃক ফেরারি আসামি হিসেবে ঘোষিত ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা।

(গ) বেসরকারি সংস্থার কার্যনির্বাহী পদে আসীন ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ওই পদ থেকে তিন বছর আগে অবসর গ্রহণ সংক্রান্ত আরপিও’র ধারা বাতিল করা।

(ঘ) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬(২)(ঘ) এর অধীনে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে বিচারিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার শুরু থেকেই সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য করা।

(ঙ) আইসিটি আইনে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে) শাস্তিপ্রাপ্তদের সংসদ নির্বাচনে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার শুরু থেকেই সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য করা।

(চ) গুরুতর মানবাধিকার (বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, সাংবাদিকদের/মানবাধিকারকর্মী ওপর হামলা, ইত্যাদি) এবং গুরুতর দুর্নীতি, অর্থপাচারের অভিযোগে গুম কমিশন বা দুর্নীতি দমন কমিশন বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত হলে তাদেরকে সংবিধানের ৬৬(২)(ছ) অনুচ্ছেদের অধীনে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য করা। (সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতার মাপকাঠি উচ্চতর হওয়া দরকার এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা দরকার। এ ক্ষেত্রে ‘ট্রানজিশন্যার জাস্টিসের’ যুক্তিও উত্থাপন করা যেতে পারে। )

(ছ) স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পদত্যাগ না করে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য করা।

(জ) তরুণ, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য শতকরা ১০ ভাগ মনোনয়নের সুযোগ তৈরির বিধান করা।

(ঝ) স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ১% শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধানের পরিবর্তে ৫০০ ভোটারের সম্মতির বিধান করা এবং এ ক্ষেত্রে একক কিংবা যৌথ হলফনামার মাধ্যমে ভোটারদের সম্মতি জ্ঞাপনের বিধান করা।

(ঞ) একাধিক আসনে কোনো ব্যক্তির প্রার্থীর হওয়ার বিধান বাতিল করা।

(ট) হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের প্রেক্ষাপটে আপিল প্রক্রিয়ায় অনুচ্ছেদ ১২৫(গ) বহাল রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা। [“১২৫(গ)। কোনো আদালত, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হইয়াছে এরূপ কোনো নির্বাচনের বিষয়ে, নির্বাচন কমিশনকে যুক্তিসঙ্গত নোটিশ ও শুনানির সুযোগ প্রদান না করিয়া, অন্তর্বর্তী বা অন্য কোনোরূপে কোনো আদেশ বা নির্দেশ প্রদান করিবেন না। ”

(ঠ) হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কিংবা তথ্য গোপনের কারণে আদালত কর্তৃক কোনো নির্বাচিত ব্যক্তির নির্বাচন বাতিল করা হলে ভবিষ্যতে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য করার বিধান করা।

মনোনয়পত্র
(ক) বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আইনি হেফাজতে থাকা ব্যতীত সকল প্রার্থীর সশরীরে মনোয়নপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি করা।

(খ) নির্বাচনী তফসিলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বৃদ্ধি করা, যাতে হলফনামা যাচাই-বাছাই করা ও আপিল নিষ্পত্তি জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণার সময় কমানো, যাতে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় সাশ্রয় হয়।

(গ) প্রার্থিতা চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করা। এ লক্ষ্যে আদালতের হস্তক্ষেপের বিষয়টি শুধু ‘কোরাম নন জুডিস’ ও ‘ম্যালিস ইন ল’-এর ক্ষেত্রে সীমিত করা।

(ঘ) মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ৫ বছরের আয়কর রির্টানের কপি জমা দেওয়ার বিধান করা।

(ঙ) নির্বাচনী তফসিলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বৃদ্ধি করা, যাতে হলফনামা যাচাই-বাছাই করা ও আপিল নিষ্পত্তি জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণার সময় কমানো, যাতে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় সাশ্রয় হয়।

হলফনামা
(ক) প্রার্থী কর্তৃক মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রত্যেক দল তার প্রার্থীদের জন্য প্রত্যয়নপত্রের পরিবর্তে দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা অনুরূপ পদধারী ব্যক্তি কর্তৃক হলফনামা জমা দেয়ার বিধান করা, যাতে মনোনীত প্রার্থীর নামের পাশাপাশি মনোনয়ন বাণিজ্য না হওয়ার ও দলীয় প্যানেল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ থাকে।

(খ) পরবর্তী নির্বাচনের আগে যে কোনো সময় নির্বাচন কমিশন নির্বাচিত ব্যক্তির হলফনামা যাচাই-বাছাই করতে এবং মিথ্যা তথ্য বা গোপন তথ্য পেলে তার নির্বাচন বাতিল করা।

নির্বাচনব্যবস্থা
(ক) নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান বাতিল করা।

(খ) নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা।

(গ) কোনো আসনে মোট ভোটারের ৪০% ভোট না পড়লে পুনর্নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।

(ঘ) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বন্ধ করা, রাজনৈতিক দলগুলোকে সৎ, যোগ্য এবং ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনে ‘না-ভোটে’র বিধান প্রবর্তন করা। নির্বাচনে না-ভোট বিজয়ী হলে সেই নির্বাচন বাতিল করা এবং পুনর্নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাতিলকৃত নির্বাচনের কোনো প্রার্থী নতুন নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারার বিধান করা।

নির্বাচনী ব্যয়
(ক) সংসদীয় আসনের ভোটার প্রতি ১০ টাকা হিসেবে নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারণের বিধান করা।

(খ) সকল নির্বাচনী ব্যয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা বা আর্থিক প্রযুক্তির (যেমন, বিকাশ, রকেট) মাধ্যমে পরিচালনা করা।

(গ) নির্বাচনী আসনভিত্তিক নির্বাচনী ব্যয় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবিড়ভাবে নজরদারিত্ব করা।

(ঘ) প্রার্থী এবং দলের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাবের রিটার্নের নিরীক্ষা এবং হিসাবে অসঙ্গতির জন্য শাস্তির বিধান করা।

নির্বাচনী অভিযোগ ব্যবস্থাপনা
(ক) বিদ্যমান ‘নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি’কে অনুসন্ধান বা তদন্ত করার ক্ষমতা প্রদানের পাশাপাশি বিচার-নিষ্পত্তির ক্ষমতা প্রদান করে নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটি নামে একটি পূর্ণাঙ্গ বিচারিক সত্তা/বডি গঠন করা।

(খ) নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটির আওতায় প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে সদস্য করা। এর প্রেক্ষিতে উক্ত কমিটিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ ধারা মতে বিচারার্থে অপরাধ আমলে নেওয়ার এবং সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতিতে অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা অর্পণ করা।

(গ) সংসদ নির্বাচন চলাকালে নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটিগুলোর কার্যাবলি তদারকি করার নিমিত্তে নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরে একটি উচ্চ পর্যায়ের ‘নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কার্যক্রম তদারকি কমিটি’ একজন নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে গঠন করা।

(ঘ) কার্যকালীন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটিগুলো প্রশাসনিকভাবে নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কার্যক্রম তদারকি কমিটির আওতায় আনা। বিচারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এগুলোকে স্বাধীন করা।

(ঙ) হাইকোর্ট বিভাগে নির্বাচনী মামলার চাপ কমাতে এবং শুধু নির্বাচনী বিরোধ সংশ্লিষ্ট মামলা (ইলেকশন পিটিশন) দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য জেলা পর্যায়ে ‘সংসদীয় নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল’ (Parliamentary Election Tribunal) স্থাপন এবং ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিলের সুযোগ রাখা।

এই সুপারিশগুলো দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।

আইএ

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!