• ঢাকা
  • সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন

গুলশানে বিলাসবহুল ভবনে বাসিন্দার তালিকাভুক্ত ছিলেন টিউলিপ


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫, ০৮:২৩ পিএম
গুলশানে বিলাসবহুল ভবনে বাসিন্দার তালিকাভুক্ত ছিলেন টিউলিপ

ঢাকা : ঢাকার একটি বিলাসবহুল ১০তলা ভবনের বাসিন্দা হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম তালিকাভুক্ত ছিল। তার পরিবারের নামে ভবনটির নামকরণ হয়। শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।

টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের সাবেক দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী। তিনি দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি)। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার খালা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার কর্মকর্তাদের ধারণা, ২০১৪ সালে টিউলিপের ‘স্থায়ী ঠিকানা’ ছিল ‘সিদ্দিকস’ নামের ওই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স। ওই সময় তিনি যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন। অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটির অবস্থান ঢাকার গুলশানে। এই এলাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের পাশাপাশি বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এ নিয়ে বাংলাদেশে টিউলিপের সঙ্গে সম্পর্কিত পঞ্চম সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেল। যদিও যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে টিউলিপের কোনো সম্পত্তি নেই। তাই এ নিয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেওয়ারও দরকার নেই। 

যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে টিউলিপ সিদ্দিক প্রায় এক মাস আগে পদত্যাগ করেন। কিন্তু তিনি এখনও সম্পত্তিসংক্রান্ত বিষয়সহ বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সঙ্গে যোগসূত্র নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। 

টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার সদস্যদের মানদণ্ডবিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাস তদন্ত করেন। তদন্তে তিনি দেখতে পান, শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক ব্যক্তির কাছ থেকে টিউলিপ উপহার পান একটি ফ্ল্যাট। এ নিয়ে তিনি অসাবধানতাবশত জনগণকে বিভ্রান্ত করেন। এই তদন্তের জেরে টিউলিপ পদত্যাগে বাধ্য হন টিউলিপ।

অল্প সময়ের জন্য সিটি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন টিউলিপ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা ছিল তার দায়িত্ব। এদিকে, ৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনা ছিলেন বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে এখন তিনি ভারতে। এই অভ্যুত্থানের ঘটনায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হন।

টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার এবং গোপনে কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে। গাজীপুরের কানাইয়া এলাকায় ‘টিউলিপস টেরিটরি’ নামের প্লটসহ একটি পারিবারিক বাগানবাড়ি নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন। এ তথ্য সামনে আসার পর গুলশানের সম্পত্তির সঙ্গে টিউলিপের যোগসূত্রের তথ্য জানতে পারে দ্য টেলিগ্রাফ।

একটি অফিসিয়াল নথিতে দেখা যায়, সম্পত্তিটি তার ‘বর্তমান’ এবং ‘স্থায়ী’ ঠিকানা উভয়ই বিবেচনা করা হয়েছিল। নথিটি প্রকাশ হয় ২০১৪ সালের মে মাসে টিউলিপের ক্যামডেনের কাউন্সিলর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর তিন সপ্তাহ পর।

গুলশান এলাকার ১০তলা অ্যাপার্টমেন্টটি ২০১০ সালের দিকে নির্মিত। একটি ভিডিওর তথ্য অনুসারে, ফ্ল্যাটে একাধিক বারান্দা ও তিনটি শয়নকক্ষ রয়েছে। ভবনটি টিউলিপের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক, টিউলিপের নানা কিংবা এই পরিবারের নামে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সম্পত্তিটি সম্পর্কে জানা এক ব্যক্তির ধারণা, এই পরিবারের এক সদস্যের মালিকানাধীন জমিতে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু এই ভবনের কোনো ফ্ল্যাটের মালিক এই পরিবার কিনা কিংবা বিশেষভাবে এটি কার নামে নামকরণ করা হয়েছে- সে সম্পর্কে জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি।

টিউলিপের বাবা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেখানকার একটি অনলাইন জীবনীর তথ্যানুসারে, সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে বসবাসকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলেন শফিক। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক।

টিউলিপস টেরিটরি : টিউলিপ সিদ্দিক তার বাবার পারিবারিক অবকাশযাপনের বাড়ি নিয়েও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। এই বাড়ির বাইরের দেয়ালে ও বাগানে ‘টিউলিপস টেরিটরি’ নাম লেখা আছে। তবে গুলশানে টিউলিপের পরিবারের নামে থাকা সম্পত্তির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে লেবার পার্টি। একাধিক সূত্র জানায়, সে সময় টিউলিপ বাংলাদেশ নয়, বরং লন্ডনে বসবাস করছিলেন। বাংলাদেশে তার কোনো সম্পত্তি নেই।

টিউলিপের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তির মাধ্যমে চার বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। এ ছাড়া তিনি তার প্রভাব ব্যবহার করে ঢাকায় তার পরিবারের জন্য অবৈধভাবে জমি বরাদ্দ করতে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তদন্তের বিষয়ে টিউলিপের এক মুখপাত্র বলেছেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে কোনো প্রমাণ নেই। টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে এ বিষয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি। তিনি এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করছেন।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!