• ঢাকা
  • বুধবার, ০২ এপ্রিল, ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩০
ভারতকে তৌহিদ হোসেন

আসুন, বাস্তবতা মেনে নিই


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫, ১১:৩১ এএম
আসুন, বাস্তবতা মেনে নিই

ঢাকা : বাংলাদেশে জুলাই-অগাস্ট অভ্যুত্থানের পরের বাস্তবতা মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান ভারতের সামনে রেখেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ওমানের মাসকাটে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইয়নকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা স্বীকার করি যে, জুলাই-অগাস্টের পরিবর্তন (দুদেশের) সম্পর্কের ওপর কিছু অনিশ্চয়তা নিয়ে এসেছে। চলুন, যেটা ঘটেছে সেটার বাস্তবতা মেনে নিই।

আমরা চাই, উভয়পক্ষ সেটা থেকে বেরিয়ে আসুক, একে অপরের দাবিগুলো শুনুক এবং সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে এগিয়ে যাক।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে দায়িত্বে আসে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই আছেন। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনো আত্মগোপনে।

এর মধ্যেই ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একাধিক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।

প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ভারত এখনও কোনো জবাব দেয়নি।

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপড়েন চলছে। দিল্লিতে বসে তিনি বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল করার চেষ্টা’ করছেন বলে অভিযোগ এনেছে ইউনূস সরকার।

পাশাপাশি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ প্রচারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকার করেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে ভারত সরকার।

বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্ত সমস্যা এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে কূটনীতিক তলবের পাল্টাপাল্টি ঘটনাও ঘটেছে।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে নিজের ‘অভিমত ও উদ্বেগ’ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক ভারতীয় সাংবাদিক বাংলাদেশের বিষয়টি ট্রাম্পের সামনে তুললেও তা এড়িয়ে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

বাংলাদেশের ক্ষমতার পালাবদলে যুক্তরাষ্ট্রের কথিত ডিপ স্টেটের ভূমিকা থাকার বিষয়ে ওই প্রশ্নে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা এক্ষেত্রে ছিল না। বরং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এবং এমন কাজ ‘শত শত বছর ধরে চলেছে’।

এরপর রোববার ওমানের মাসকাটে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দুই প্রতিবেশী দেশ যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, ওই বৈঠকে তা স্বীকার করেছে উভয়পক্ষ। সেগুলো নিরসনে একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

অন্যদিকে জয়শঙ্কর তার এক্স হ্যান্ডেলে তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছিল আলোচনার কেন্দ্রে, বিমসটেক নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

দুদেশের সম্পর্ককে ঢাকা কীভাবে দেখছে, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ইয়নকে বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে দুই প্রতিবেশী দেশই ‘পরস্পরের জন্য উপকারী ভালো সম্পর্ক’ চায়। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ‘ভালো’ আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমরা একে-অপরের ভাষা বুঝি। এবং আমরা সম্পর্কোন্নয়নের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা করেছি।

দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আসন্ন বৈঠকের পাশাপাশি অন্যান্য বৈঠক আয়োজনের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা বলেন তিনি।

এপ্রিলে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, দুই নেতার বৈঠকের সুযোগ সেখানে রয়েছে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, বিমসটেক সম্মেলনে দুদেশের সরকারপ্রধান একই সময়ে অংশ নেবেন। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে দুজনের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী মোদী আগে দেশে ফিরে যান। ফলে দুজনের সময় মেলানো যায়নি।

এটা (বিমসটেক) এমন একটা সম্মেলন, যেখানে সবগুলো দেশের সরকারপ্রধানরা থাকবেন। দ্বিতীয়ত, এটা অত বড় ফোরাম নয়, বরং তুলনামূলকভাবে ছোট। সাধারণত প্রত্যেক সরকারপ্রধান অন্য সবার সঙ্গে বৈঠক করেন। সুতরাং তাদের দুজনের বৈঠকের সুযোগ সেখানে রয়েছে।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বাংলাদেশই দেখভাল করছে : সাক্ষাৎকারে সংখ্যালঘু ‘নিপীড়নের’ বিষয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রকাশের প্রসঙ্গ টেনে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আসুন আমরা এই ইস্যু থেকে বের হই। আমরা এটাতে গত পাঁচ মাসে বহু সময় ব্যয় করেছি, বিশেষ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম; প্রায়ই অতিরঞ্জিত ও কোনো কোনো সময় পুরোপুরি মিথ্যার ভিত্তিতে। আসুন এখান থেকে বের হই।

বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুরাও মুসলিমদের মত সমান নাগরিক। তাদের সমান অধিকার আছে, আইনে তাদের সমান সুরক্ষা রয়েছে। সুতরাং আমরা আমাদের সংখ্যালঘুদের দেখভাল করব, যেভাবে ভারতকে তার সংখ্যালঘুদের দেখভাল করতে হয়।

তিনি বলেন, আমি মনে করি না, এটা দুদেশের মধ্যকার কোনো ইস্যু হতে পারে। আমরা তো রয়েছি। সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা রয়েছে, সে কারণে এবার পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ছিল বেশি।

গত দুর্গাপূজায় বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে ‘কোনো অভিযোগ না পাওয়ার’ দাবি করে তৌহিদ হোসেন বলেন, সুতরাং আসুন, এই মানসিকতা থেকে বের হই। ভালো হয়, আমরা দুদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য ইস্যুগুলোর সমাধান করি। সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশের বিষয় এবং বাংলাদেশই তাদের দেখভাল করছে।

অপরাধ সব সীমান্তেই হয়, কেউ গুলি করে মারে না : ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত চুক্তি বাতিলের বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ ধরনের কোনো কথা তিনি ‘শোনেননি’।

ওই প্রশ্নে তিনি বলেন, সীমান্তের প্রধান সমস্যা হল, বিএসএফ বেসামরিক মানুষকে গুলি করে হত্যা করে, যেটা পৃথিবীর আর কোথাও ঘটে না।

আমরা দুই বন্ধু দেশ। এক্ষেত্রে ইস্যু আছে, সীমান্তে অপরাধের বিষয় আছে। হ্যাঁ, পৃথিবীর সব সীমান্তে অপরাধ হয়, কিন্তু তার মানে এই না যে, তারা মানুষ মারার জন্য গুলি করে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কেউ যদি আইন লঙ্ঘন করে, তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে, ভারতের আদালতে নেওয়া যেতে পারে। আদালত সিদ্ধান্ত দেবে তাদের ক্ষেত্রে কী হবে।

কিন্তু কোনো বন্ধু দেশের মধ্যে এটা কখনও হয় না যে সীমান্তে বেসামরিক লোকদের গুলি করা হয়; এমনকি তারা কোনো অপরাধ করলেও এটা হয় না।

সীমান্তে ‘অননুমোদিত’ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ এবং প্রাণক্ষয় নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ১৮-২০ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে।

সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয় সেখানে আলোচনা এবং সমাধানের আশা প্রকাশ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় আমরা একে-অপরকে সহায়তা করব।

ভারতের ক্ষতি হয়, এমন কিছু করছি না : পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে অতীতে ‘বাধাগ্রস্ত’ করার প্রক্রিয়া চলেছে মন্তব্য করে এখন সেখান থেকে বেরিয়ে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিক’ করতে উদ্যোগ নেওয়া কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হওয়ার পর ভারতের নিরাপত্তা আগের মত থাকবে– এমন নিশ্চয়তা দেবেন কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ করা হয়েছে বা বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। সেগুলো দূর করার চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

এবং আমি মনে করি না তার মাধ্যমে ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো কারণ আছে। কেননা আমরা এমন কিছু করছি না যা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করবে। না, কোনোভাবেই না।

আরেক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরে ভিসার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিষয়ে ‘পৃথক’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

পৃথিবীর সব দেশ ছিল এক রকম, আর পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ভিন্ন। আত্মীয়স্বজনকে ঢাকায় দেখার জন্য ৬০-৭০ বছরের কোনো ব্যক্তির কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হত। এটা কোনো স্বাভাবিক কিছু নয়।

তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তানকে অন্য আরেকটি দেশের মতই দেখি। আমরা মনে করি, অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক যেভাবে বজায় রাখা হয়, পাকিস্তানের সঙ্গেও সেভাবে রাখা হবে।

সংবাদমাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়কে এত বড় করে দেখানোর কিছু আছে বলে মনে হয় না। আমরা শুধু অন্যান্য দেশের মত পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ককে স্বাভাবিক করছি; এটুকুই।

ট্রাম্প প্রশাসনের ‘নীতির সঙ্গে মানিয়ে নেব’ : একক দেশ হিসাবে রপ্তানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য এবং বাংলাদেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে ‘খাপ খাইয়ের নেওয়ার’ চেষ্টার কথা বলেছেন তৌহিদ হোসেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন মাত্রই ক্ষমতায় এসেছে। সেখানে অনেক নীতির পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা এখনও জানি না আসলে কী হতে যাচ্ছে। তবে আমাদের বিষয় হচ্ছে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দিই।

এই গুরুত্ব দেওয়ার কারণ হিসাবে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের শীর্ষ গন্তব্য হওয়া এবং অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সকে কারণ হিসাবে তুলে ধরেন তিনি।

এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং সেটা চালিয়ে নিতে সব প্রচেষ্টা আমরা চালাব, বলেন তৌহিদ হোসেন।

তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কোনো পরিবর্তন যদি হয়, আমরা মানিয়ে নেওয়ার এবং সম্পর্ক থেকে সর্বোচ্চ উপকার বয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করব।

আমি চাই, শেখ হাসিনা চুপ থাকুন : ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির ভাঙার মধ্য দিয়ে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তরাধিকার’ থেকে বর্তমান সরকার সরে যাচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল সাক্ষাৎকারে।

জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারত থাকা শেখ হাসিনার ‘বিস্ফোরক মন্তব্যের’ প্রতিক্রিয়ায় বাড়ি ভাঙার ওই ঘটনা ঘটেছে।

এমন একটা অবস্থা আমি চাই, ভারতে থাকাকালীন শেখ হাসিনা চুপ থাকবেন এবং আমাদের (দুদেশের) সম্পর্ক ঠিকঠাক হওয়ার সুযোগ দেবেন।

ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ৫ অগাস্ট ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই ঘটনার ছয় মাস পূর্তির দিন ৫ ফেব্রুয়ারি ভারতে বসে শেখ হাসিনার অনলাইনে ভাষণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

সেই রাতে আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-লুটপাট চালানো হয়।

ওই ঘটনার পর বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে বিবৃতি দেয় ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, হামলা-ভাঙচুরের এই ঘটনার অবশ্যই নিন্দা জানানো উচিত।

এরপর ঢাকায় ভারতের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের এমন বিবৃতি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত’।

ওই ঘটনা নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাক্ষাৎকারে বলেন, ভাঙার ঘটনা কেবলই অভ্যন্তরীণ একটা বিষয় এবং আমি মনে করি না ভারতের এখানে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ আছে।

‘ইতিহাস ও বাংলাদেশের পরিচয়ের অংশ’ ওই বাড়ি সরকার পুনর্নির্মাণ করবে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তিনি মনে করেন না যে বাংলাদেশের পরিচয় একটি ‘ভবনের সঙ্গে সম্পর্কিত’। তবে তিনি বাড়ি ভাঙার পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছেন- এমনও নয়।

রোজা সামনে রেখে ভারতকে অতিরিক্ত খাদ্যপণ্য পাঠানোর অনুরোধ জানানো হবে কি-না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি মনে করি না বিশেষ কোনো অনুরোধের প্রয়োজন আছে। রপ্তানি-আমাদানি অনুরোধের বিষয় নয়। প্রশ্নটা হল ব্যবসায়ীদের আগ্রহী হওয়া নিয়ে, আর তাদের আগ্রহের জায়গা হল মুনাফা।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য যেখান থেকে লাভজনক হবে, সেখান থেকে তারা আমদানি করবে। আর ভারতের ব্যবসায়ীরা যদি মনে করে বাংলাদেশে পাঠানো লাভজনক, তাহলে তারা রপ্তানি করবে।

ভারতের সহযোগিতায় প্রকল্পগুলোর বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ প্রকল্পের কাজ বন্ধ কি-না, এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, কোনো প্রকল্প বন্ধ থাকার বিষয়ে আমি শোনেননি।

চলমান প্রকল্পগুলোর অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে তিনি বলেন, এটা চলমান প্রক্রিয়া, যেখানে প্রকল্প থাকবে এবং সময় সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং কাজ এগিয়ে যাবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত নিকট প্রতিবেশী, বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। সুতরাং আমরা দুদেশের দেশের জন্য উপকার হবে, এমনভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাব।

বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, নির্বাচন ঠিক কখন হবে, সেটা বলার উপযুক্ত ব্যক্তি তিনি নন। আর কোনো সময়সীমা এখনো ঠিক হয়নি।

যাদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বর্তমান সরকার দেশ চালাচ্ছে, সেই তরুণ প্রজন্ম চায়, এই সরকার যেন রাজনৈতিক ও নানা ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম চালায়। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে সংস্কারের বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকারও আশা করছে তারা।

এমটিআই

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!