• ঢাকা
  • সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপের সুযোগ নেই


নিউজ ডেস্ক মার্চ ৩, ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপের সুযোগ নেই

ঢাকা : প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপের সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না থেকে উপায় নেই। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক এখনও ভালো আছে, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে।

সোমবার (৩ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে সম্পর্কের অবনতিটা হয় বেশি। আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ফেরত চাওয়ার প্রত্যুত্তরে ভারতের অনড় অবস্থান অস্বস্তি বেশি বাড়িয়ে দেয়।

কয়েক মাস দুই দেশ থেকেই পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা কথা ছোড়া হলেও এখন কোনো দেশই সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়াতে চাচ্ছে না। উভয় দেশই সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।

ভারতের সঙ্গে কিছুদিন এমন দ্বন্দ্ব দেখা দিলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস বলেছেন, দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপের সুযোগ নেই। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল, আগামীতেও থাকবে।

দুই দেশের সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে আছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, খুবই ভালো। আমাদের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয় নাই। আমি যেভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছি আমাদের সম্পর্ক সবসময় ভালো থাকবে। এখনও ভালো আছে, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ভালো না থেকে উপায় নেই। আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, আমাদের পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা এত বেশি এবং ঐতিহাসিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের এত ক্লোজ সম্পর্ক, সেটা থেকে আমরা বিচ্যুত হতে পারব না। তবে মাঝখানে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, আমি বলেছি মেঘ দেখা দিয়েছে। এই মেঘগুলো মোটামুটি এসেছে অপপ্রচার থেকে। অপপ্রচারের সূত্র কারা সেটা অন্যরা বিচার করবে। কিন্তু এই অপপ্রচারের ফলে আমাদের সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। সেই ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ভারতের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ হচ্ছে। তারা এখানে আসছে, আমাদের লোকজন সেখানে যাচ্ছে। প্রাইম মিনিস্টার মোদির সঙ্গে আমার প্রথম সপ্তাহেই কথাবার্তা হয়ে গেছে।

ইলন মাস্কের সঙ্গে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা মূলত ছিল স্টারলিংক নিয়ে। এটা ব্যবসায়িক একটা সম্পর্কের বিষয় ছিল। সেবিষয়ে আমরা আলাপ করছি যে স্টারলিংকের কানেকশনটা আমরা নিতে চাই।

সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় সাত মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংস্কার ও নির্বাচন, ছাত্র নেতৃত্বের নতুন দল গঠনসহ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়েও কথা বলেন ড. ইউনূস।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা পলাতক দল দেশ ছেড়ে চলে গেছে বা তাদের নেতৃত্ব চলে গেছে। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে এটাকে (দেশটাকে) আনসেটেল (অস্থিতিশীল) করার জন্য।

অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “যে ধ্বংসাবশেষ থেকে এসেছিলাম, তার নতুন চেহারা আসছে। ভেসে উঠছে যে, আমরা অর্থনীতি সহজ করেছি। দেশ-বিদেশের আস্থা অর্জন করেছি। এটাতো পরিষ্কার- সারা দুনিয়ায় আমরা আস্থা স্থাপন করতে পেরেছি। এটা কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না যে আমি অমুক দেশের আস্থা অর্জন করতে পারিনি। যে দেশেই বলুন, তারা আমাদের ওপর আস্থা স্থাপন করেছে। শুধু আস্থা স্থাপন করেছে না, বিপুলভাবে করেছে। তারা বলছে আমরা অতীতে যা করি নাই তারচেয়ে বেশি করব এখন, যেহেতু আমরা দেখছি যে সুন্দরভাবে সরকার চলছে এখন। সেইজন্য তারা বলছে। কাজেই এটা একটাতো বড় প্রমাণ। যখনই আপনি দেশের সারিগুলা দেখবেন- প্রত্যেকটা দেশ নিজে এসে বলেছে, আমরা তোমাদের সমর্থন করছি। তোমাদের যা দরকার আমরা দেব। অবিশ্বাস্য রকমের সহায়তা দিয়েছে তারা।’

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অবনতিটা কোন পয়েন্ট থেকে হয়েছে? এটা বলতে হবে তো আমাকে। আপনি বলছেন অবনতি হয়েছে। কোন রেফারেন্স পয়েন্ট থেকে অবনতিটা হয়েছে? সেটা না দিলেতো আমরা বুঝতে পারব না। আমিতো হিসাব নিচ্ছি। অপরাধের পরিমাণ মোটেই বাড়েনি। আগের মতোই হয়েছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম দিকে সমস্যা ছিল যে পুলিশ বাহিনী যাকে দিয়ে আমরা কাজ করাচ্ছিলাম, তারা ভয়ে রাস্তায় নামছিল না। দুইদিন আগে তারা এদেরকে গুলি করেছে। কাজেই মানুষ দেখলেই সে ভয় পায়। কাজেই তাকে ঠিক করতে করতেই আমাদের কয়েক মাস চলে গেছে। এখন মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে। এখন আবার নিয়মশৃঙ্খলার দিকে আমরা রওনা হয়েছি। কাজ করতে থাকব।

ছাত্রদের গঠন করা দলে সরকার সহায়তা করছে বলে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, না, সরকার কোনো সহায়তা করে না। যে রাজনীতি করতে চায়, সে নিজেই ইস্তফা দিয়ে চলে গেছে। তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি ছিল সরকারের ভেতরে। যিনি রাজনীতি করতে মনস্থির করেছেন, তিনি ইস্তফা দিয়ে সরকার থেকে চলে গেছেন। উনি প্রাইভেট সিটিজেনশিপে রাজনীতি করবেন, কার বাধা দেওয়ার কী আছে?

সবাই একসঙ্গে কাজ করতে না পারলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে বলেন সেনাপ্রধানের করা মন্তব্যের বিষয়ে একমত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এটা ওনার বক্তব্য উনি বলবেন। আমার ওনাকে এনডোর্স করা না করারতো বিষয় না।

চলতি বছরেই নির্বাচন হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরাতো সেটা ঘোষণা করে দিয়েছি। আবার নতুন করে বলারতো কিছু নাই।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও দলটির নির্বাচনে অংশ নেওয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা বরাবরই ফিরে যাচ্ছি ঐকমত্যে। সবাই মিলে যা ঠিক করবে আমরা তাই করব। আমি অত ডিটেইলসে যাচ্ছি না। আমার বরাবরই পজিশন হলো যে আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। আমাদের এই দেশের ওপরে সমান অধিকার। আমরা সব ভাই ভাই। আমাদেরকে এই দেশেই বাঁচতে হবে। এ দেশকেই বড় করতে হবে। কাজেই যে মত-দল করবে, তার মতো করে, সবকিছু করবে। এই দেশ থেকে কারও অধিকার কেড়ে নেয়ার কোনো উপায় নাই। কিন্তু যে অন্যায় করেছে, যার বিচার হওয়া উচিৎ, তার বিচার হতে হবে। এটুকুই শুধু।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যোগাযোগ হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, যখনই প্রয়োজন হয়। শুধু শুধুতো গিয়ে ওনার সময় নষ্ট করার দরকার নাই। যখনই দরকার হয়, আমিতো তার কাছে যাই।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!