• ঢাকা
  • রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩০
সংসদ নির্বাচন

সীমানা আইন সংশোধনীর অপেক্ষায় ইসি


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২২, ২০২৫, ০৩:২৭ পিএম
সীমানা আইন সংশোধনীর অপেক্ষায় ইসি

ঢাকা : সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজই শুরু হয়নি, তার আগেই এ সংক্রান্ত প্রায় সাড়ে তিনশ দাবি-আপত্তি জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন ধরে এর মাস ছয়েক আগেই সীমানাসংক্রান্ত দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করতে চান। কিন্তু কীভাবে এসব আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না এ এম এম নাসির উদ্দিন কমিশন।

এর কারণ হিসেবে কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সীমানার খসড়া প্রকাশ করা যায়নি। শেষ হয়নি ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন’ সংশোধনের কাজও।

গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সাংবাদিকদের বলেন, সীমানাসংক্রান্ত বিষয়ে এখনও আপডেট আমরা পাইনি।

কেবিনেট থেকে যেসব কোয়েরি করেছে, সেগুলোর জবাব পাঠিয়েছি ইতোমধ্যে। এখন আমরা অপেক্ষায় আছি সিদ্ধান্তের।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি সরকারের কাছে সংশোধন প্রস্তাব পাঠায় ইসি।

জমা পড়েছে সাড়ে তিনশ আবেদন : গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, বরগুনা, বরিশাল, পিরোজপুর, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, সিলেট ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলার অন্তত ৬০টি আসন নিয়ে দাবি-আপত্তি রয়েছে।

এসব আসন থেকে সাড়ে তিন শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১০৩টি আবেদন জমা পড়েছে পিরোজপুর-২ আসন নিয়ে।

>> ১৯৭৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণ মোটামুটি একই পদ্ধতিতে হয়।

>> ২০০৮ সালে সীমানা নির্ধারণে জনসংখ্যার ঘনত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল।

>> নবম সংসদ নির্বাচনের সময়- কোনো জেলার আসনসংখ্যা দুটির কম হবে না, পার্বত্য তিন জেলায় একটি করে এবং ও ক্ষুদ্র জেলা মেহেরপুরে দুইটি আসন বরাদ্দ রাখা হয়। ঢাকায় ১৩টি থেকে আসন হয় ২০টি।

দ্বাদশে লাগে ৪ মাস : ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির ভোটের ছয় মাস আগে সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করা হয়।

আগের সংসদ নির্বাচনের আসন অপরিবর্তি রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য খসড়া ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খসড়া প্রকাশ করে তৎকালীন ইসি। এ নিয়ে দাবি কিংবা আপত্তি জমা দিতে ১৯ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

নির্ধারিত সময়ে ৩৮টি আসনের বিপরীতে শতাধিক আবেদন পড়ে। সেগুলোর ওপর ৩ থেকে ১৪ মে শুনানি হয়।

এরপর সব বিচার-বিশ্লেষণ শেষে কমিশন সবকিছু চূড়ান্ত করে জুনের মধ্যে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের রোডম্যাপ রাখে।

৩৮টি আসনে দাবি-আপত্তির আবেদন এলেও ১০-১২টি আসনের বিষয়ে যুক্তিতর্ক ও বিশ্লেষণই বেশি আমলে নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।

এক ডজন আসনে সামান্য পরিবর্তন এনে গেজেট হয় ৩ জুন।

দেড় মাস লাগে একাদশে : ২৫টি আসনে সীমানার পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময়।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আট মাস আগে চূড়ান্ত পুনর্নির্ধারিত গেজেট প্রকাশ করে ইসি। সে বছর ১৪ মার্চ খসড়া প্রকাশ করে, দাবি-আপত্তি ও নিষ্পত্তি শেষে ৩০ এপ্রিল তিনশ আসনের গেজেট হয়।

খসড়ায় ৪০ আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করে; পরে ২৫টি আসনে ছোটোখাটো পরিবর্তন আনা হয়।

দশমে পরিবর্তন ৫০ আসনে : দশম সংসদ নির্বাচনে ৮৭ আসনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করে আগের ইসির পদাঙ্ক অনুসরণ করে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনা হয়।

৮৭টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করে ইসি। এ খসড়া প্রস্তাবের ওপর দাবি-আপত্তি শুনানি শেষ হয় এপ্রিলে।

সব বিষয় পর্যালোচনা করে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

শতাধিক আসনে পরিবর্তন নবমে : নির্বাচনের ছয় মাস আগে নবম সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনের গেজেট প্রকাশ করা হয়।

তৎকালীন ইসি প্রথমবারের মতো ১৮ মাসের ভোটের রোডম্যাপ ঘোষণা করে কারিগরি টিম নিয়ে কয়েক মাস ধরে সীমানা পুননির্ধারণের কাজ গুছিয়ে নেয়।

দুই বছরের সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ব্যাপক সংস্কার আনা হয় নির্বাচনী সব আইনে। এ ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। ওই বছর নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৩৩ আসনে সীমানা পরিবর্তনের প্রস্তাব করে ইসি।

সে সময় আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার আনুপাতিক হার মেনে আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে জিআইএস পদ্ধতি অনুসরণ করে শতাধিক সংসদীয় আসনে পরিবর্তন আনে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন আগামীকে স্বতন্ত্র কমিশন চায় : বদিউল আলম মজুমদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ভবিষ্যতে স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে।

একই সঙ্গে ২০০৮-২০২৩ সালের সীমানা নির্ধারণে বিতর্কের বিষয়টিও তুলে ধরেছে।

সংস্কার কমিশন বলেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিশেষ কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপকভিত্তিক সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ করা হয় ২০০৮ সালে।

এসময় জাতিসংঘের সহায়তায় একজন আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণ বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দিয়ে একটি গবেষণা করা হয়, যদিও ওই গবেষণার সকল পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!