Menu
ঢাকা : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মর্যাদাপূর্ণ ‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারী’ পুরস্কার পাওয়ায় গণ অভ্যুত্থানের কন্যাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (৩০ মার্চ) তার দপ্তর থেকে অভিনন্দন বার্তা জানানোর তথ্য দেওয়া হয়।
অভিনন্দন বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই স্বীকৃতি ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট মাসে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ অভ্যুত্থানে তোমাদের অসাধারণ সাহসিকতা, নেতৃত্ব এবং অটল অঙ্গীকারের শক্তিশালী প্রমাণ। সেই সংকটময় সময়ে তোমাদের কৃতিত্ব সত্যিকার সাহসিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার ‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারী’ পুরস্কার ঘোষণা করে। এটি বাংলাদেশের সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী একদল সাহসী নারীকে দেওয়া হয়।
এ পুরস্কার ঘোষণার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পাঠানো মেইলটি ফেইসবুকে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বিগত সরকারের সহিংস দমননীতির বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি ছিলেন মেয়েরা। তারা অসাধারণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন, এমনকি হুমকি ও সহিংসতার মধ্যেও নিরাপত্তা বাহিনী ও পুরুষ আন্দোলনকারীদের মাঝে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন।
মেইলে বলা হয়, “যখন পুরুষ সহযোদ্ধারা গ্রেপ্তার হন, তখন এই মেয়েরা নতুন কৌশল অবলম্বন করে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এমনকি ইন্টারনেট বন্ধ থাকার সময়েও তারা সেন্সরশিপের বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হন। অনিশ্চয়তার মাঝেও তাদের এই সাহস ও নিঃস্বার্থ ভূমিকা ছিল প্রকৃত বীরত্বের প্রতিচ্ছবি।”
এজন্য আন্তর্জাতিক নারী সাহসিকতা পুরস্কারের অংশ হিসেবে ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ-২০২৫’ নামে এই অ্যাওয়ার্ডের অধীন ‘ম্যাডেলেইন আলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড’পাচ্ছেন বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেডেলিন অলব্রাইটে নামে চালু এ পুরস্কার আগামী মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বার্ষিক ’আন্তর্জাতিক সাহসী নারী’ পুরস্কার অনুষ্ঠানে দেওয়া হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ফার্স্ট লেডি মিলানিয়া ট্রাম্প পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন।
শান্তি, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, লিঙ্গ সমতা এবং নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়নের পক্ষে অসাধারণ সাহস, শক্তি ও নেতৃত্ব প্রদর্শনকারী নারীদের ২০০৭ সাল থেকে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
প্রধান উপদেষ্টা অভিনন্দন বার্তায় বলেন, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে জুলাই কন্যারা কেবল প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেনি, বরং অস্থির সময়ে জাতীকেও নতুন করে আশা দিয়েছে।
পুরস্কারের ঘোষণায় যেমনটি বলা হয়েছে, তোমরা অটল সংকল্পের সঙ্গে সহিংস দমন-পীড়নের মুখোমুখি হয়েছ, নিরাপত্তা বাহিনীর আক্রমণের সামনে তোমাদের পুরুষ সহযোদ্ধাদের ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়েছ। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার মধ্যেও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার নতুন উপায় খুঁজে বের করেছ।
তোমাদের শক্তি, দৃঢ়তা এবং সংকল্প বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী অগণিত মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তোমাদের নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ন্যায়বিচারের সাধনা কখনই সহজ নয়, তবে তা সর্বদা সার্থক। তোমরা বিশ্বকে দেখিয়েছ প্রকৃত নেতৃত্ব এবং ত্যাগ কেমন হওয়া উচিত, আর তোমাদের সাহসের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জ্বল ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করেছ।
তিনি বলেন, তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমরা ভীষণভাবে গর্বিত। এই স্বীকৃতি তোমাদের প্রাপ্য এবং তা তোমাদের অটল স্পৃহাকে প্রতিফলিত করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তোমাদের পাশে আছে। একসাথে, আমরা গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতার আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাব, যা তোমরা এত সাহসের সঙ্গে রক্ষা করেছ।
উমামার প্রত্যাখান : তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানিয়ে এ পুরস্কার গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানিয়েছেন।
তিনি লেখেন, 'নারী আন্দোলনকারীদের কালেক্টিভ স্বীকৃতি আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের উপর ইসরায়েলের নারকীয় হামলাকে প্রত্যক্ষভাবে এন্ডোর্স করে যাওয়ার জন্য অ্যাওয়ার্ডটি ব্যবহৃত হয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা যুদ্ধকে অস্বীকার করে পুরষ্কারটি ইসরায়েলের হামলাকে যে প্রক্রিয়ায় জাস্টিফাই করেছে তা পুরষ্কারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যেখানে ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের মৌলিক মানবাধিকার(ভূমির অধিকার) থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাই ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সম্মান রেখে এই পুরষ্কার আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যাখ্যান করলাম। '
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি লেখেন, 'ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি'।
এমটিআই
© 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সোনালীনিউজ.কম
Powered By: Sonali IT