Menu
ঢাকা : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর আসামিদের গ্রেপ্তারে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এসব মামলায় কাউকে গ্রেপ্তারের আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে, অভিযুক্তের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণসহ (যেমন: প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য, ভিডিও-অডিও চিত্র, মোবাইল কল লিস্ট ইত্যাদি) গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এসব নির্দেশনা জারি করা হয়।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সংক্রান্ত মামলাগুলোতে এজাহারনামীয় আসামির সংখ্যা অনেক বেশি। এজাহার বা তদন্তে প্রাপ্ত যেকোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে হলে আগে যথাযথ প্রমাণসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে যুগ্ম কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা সব সময় স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কাজ করতে চাই। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন এবং প্রকৃত অপরাধীরা যেন ছাড় না পান, সে বিষয়টি নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’
পুলিশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, তদন্তকারী কর্মকর্তার গ্রেপ্তার ও প্রতিবেদন দেওয়ার এখতিয়ার থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলাগুলোতে এজাহারে ঢালাওভাবে আসামির নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ উঠেছে। এসব মামলায় অনেককে সম্পৃক্ততা ছাড়াই আসামি করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। ফলে পুলিশ সদরদপ্তর ও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আসামি হলেই গ্রেপ্তার নয়—এমন নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
সরকার পতনের পর শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশজুড়ে দেড় হাজারের বেশি মামলা দায়ের হয়। একেকটি মামলায় হাজার হাজার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে অনেকের ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকারও প্রমাণ মেলেনি। এসব মামলায় আওয়ামী লীগের নেতাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিরোধীদেরও আসামি করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আসামি করা ও গ্রেপ্তার নিয়ে অর্থনৈতিক লেনদেন বা ‘বাণিজ্য’ হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে, গত ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদরদপ্তর থেকেও একটি নির্দেশনা জারি করে বলা হয়, শুধু মামলার আসামি হলেই গ্রেপ্তার করা যাবে না—সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও গ্রেপ্তার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও বলেন, ‘মামলা হলেই গ্রেপ্তার নয়। আগে তদন্ত হবে, তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে তবেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত ৫ অক্টোবর উত্তরার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এক অনুষ্ঠানে তিনি এই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
ডিএমপির নতুন নির্দেশনা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলাগুলোতে দায়ী ও নির্দোষদের আলাদা করতে তদন্তে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চায় প্রশাসন। ফলে এখন থেকে যে কাউকে আটক করতে হলে তা হবে যাচাই-বাছাই ও অনুমতির পরই।
এমটিআই
© 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সোনালীনিউজ.কম
Powered By: Sonali IT