• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২
নববর্ষ ১৪৩২

রাজধানীতে দিনভর বর্ষবরণ আয়োজন


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৪, ২০২৫, ১০:৩৫ এএম
রাজধানীতে দিনভর বর্ষবরণ আয়োজন

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: আজ পহেলা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। নববর্ষের প্রথম প্রহরেই বাঙালির ঘরে ঘরে লেগেছে উৎসবের রঙ। নতুন বছর মানেই নতুন আশা, নতুন আলো—আর সেই আলোর ছোঁয়ায় মুখর রাজধানীজুড়ে নানা আয়োজনে জমজমাট বৈশাখ।

রমনার বটমূলে ভোরের সূর্য ও সুরের মিলন
ভোরের প্রথম আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই রমনার বটমূলে শুরু হয়েছে বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। ছায়ানটের আয়োজনে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানের সুরে নতুন বছরকে বরণ করেছে বাঙালি। এবারের ৫৮তম আয়োজনের মূল সুরধ্বনি—‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’।  

সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ভৈরবী রাগের আলাপনায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। প্রভাতির পরিবেশনায় রয়েছে ৯টি সম্মেলক গান, ১২টি একক গান এবং তিনটি আবৃত্তি। ছায়ানটের কথন পাঠে থাকবেন ডা. সারওয়ার আলী। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে ইউটিউব, ফেসবুক এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে।

রবীন্দ্র সরোবরে জাতিসত্তার মেলবন্ধন
ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে সকাল ৬টায় সুরের ধারা আয়োজন করে পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে বর্ষবরণের বিশেষ অনুষ্ঠান। মুক্তমঞ্চে চলবে নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, আর আশপাশে থাকছে বর্ণিল বাঙালি খাবারের স্টল।

চারুকলায় বৈশাখী শোভাযাত্রায় একতার সুর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজন করেছে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা, শুরু সকাল ৯টায়। এবারের প্রতিপাদ্য—‘নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর ৪৯৪ জন শিল্পী অংশ নিয়েছেন বর্ণিল এই আয়োজনে।  

শোভাযাত্রায় রয়েছে সাতটি প্রধান মোটিফ—ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, কাঠের বাঘ, ইলিশ, তরমুজ ফালি (ফিলিস্তিনের সংহতি), শান্তির পায়রা, পালকি ও পানির বোতল। এছাড়াও থাকছে শতাধিক লোকজ শিল্পকর্ম—ঘোড়া, সেপাই, লাঙল, চরকি, ফ্যাসিবাদের মুখোশসহ নানা মুখরঙা উপস্থাপনা।  

চারুকলা অনুষদের সামনে শখের হাঁড়ির মোটিফে আঁকা ফুল-পাখি, লতা-পাতার চিত্রও এবারের বৈশাখের আমেজে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

জাতীয় সংসদ ভবনে বৈশাখী আকাশে ড্রোনের আলো
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে, শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ও ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের সহায়তায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে আয়োজন করা হয়েছে ‘ড্রোন-শো’ ও ‘ব্যান্ড-শো’। সহযোগিতায় রয়েছে জাতীয় সংসদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

তাজউদ্দীন পার্কে বৈশাখী মেলা তিন দিনব্যাপী
গুলশান-২–এর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্কে চলছে তিন দিনের ‘নগর উৎসব’। আজ সকাল ৭টায় শান্ত–মারিয়াম ইউনিভার্সিটির আয়োজনের মাধ্যমে শুরু হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। সকাল ৯টায় উৎসবের ওয়েবসাইট উদ্বোধনের পর শুরু হয় বাউল গান, বিকেলে থাকছে কনসার্ট—ঘাসফড়িং কয়ার, শিরোনামহীন ও প্লাজমিক নক-এর অংশগ্রহণে।

রমনা বটমূলে চলছে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানরমনা বটমূলে চলছে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শাহবাগে ঐতিহ্য আর সুরের সম্মিলন

জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাংস্কৃতিক ঐক্যফ্রন্টের আয়োজনে সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী চলছে বৈশাখী উৎসব। ‘ঐ নতুনের কেতন ওড়ে’ শিরোনামের এই আয়োজনে পরিবেশিত হচ্ছে বাংলা গান, জারিগান, গম্ভীরা, পুঁথিপাঠ, নাটিকা। অংশ নিচ্ছে ১৪টি শিল্পীগোষ্ঠী।


দক্ষিণ সিটির বৈশাখী র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক আয়োজন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আয়োজন করেছে সকাল থেকে বৈশাখী আনন্দ র‌্যালি, নগর ভবনে পান্তা ইলিশ আর বেলা গড়ালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একই সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে ‘জনমানুষের বৈশাখ, শেকড়ের সংস্কৃতি’ শিরোনামে ১০টি সংগঠনের অংশগ্রহণে চলছে বর্ষবরণ আয়োজন।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক পর্ব
বিকেল ৪টায় দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদের আয়োজনে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অংশ নেবেন জনপ্রিয় শিল্পীরা। শেষে মঞ্চস্থ হবে জুলাই অভ্যুত্থানভিত্তিক নাটক।

উত্তরা থেকে পূর্বাচল—সবখানে বৈশাখ
রাজধানীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে বৈশাখী মেলা—উত্তরার দিয়াবাড়ি, সুত্রাপুরের ধূপখোলা মাঠ, ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড ও পূর্বাচলের তিনশ ফুট এলাকায় উৎসবের রঙ লেগেছে। এসব জায়গায় বরাবরই ভিড় থাকে, তবে আজ যেন শহরটা একসাথে নেচে উঠেছে বাঙালিয়ানার ছন্দে।

এসআই

Wordbridge School
Link copied!