ঢাকা : ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ চলমান। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের নানান আয়োজন ও পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এবারে আসছে বেকারদের জন্য নতুন চমক ‘বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ প্রকল্প’। বর্তমান মহামারী করোনাভাইরাসে সারা পৃথিবীর বিপর্যস্ত জনজীবন, যার প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশও পড়েছে সংকটে। করোনায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের বহু কর্মী ছাঁটাই বা চাকরিচ্যুত হয়েছে। করোনা মহামারীতে তাই বাড়ছে বেকারের সংখ্যা এবং কমছে কর্মসংস্থানের সুযোগও। হঠাৎ করে বেকার হয়ে যাওয়ায় এসব মানুষ হতাশাগ্রস্ত জীবনযাপন করছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মীরা চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়ছে এবং পরিবার নিয়ে শহরে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ফলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চিরচেনা শহর ছেড়ে গ্রামের পথে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
আগামী কয়েক বছর নতুন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করা এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা কঠিন হয়ে যাবে। দেশে বেড়ে যাবে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এবং বেড়ে যাবে সীমাহীন জনদুর্ভোগ ও নানাবিধ সমস্যা। এসব বিষয় বিবেচনা করে মুজিববর্ষে করোনাকাল ও পরবর্তী বাংলাদেশে বেকারত্ব ঘোচাতে ‘বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের অধীনে কুড়ি হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। কিছুদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এই চমকের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘কেউ যাতে বেকার না থাকে সে জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে ‘বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ’ নামে একটি প্রকল্প চালুর ব্যবস্থা করেছে সরকার, যেখানে সর্বনিম্ন ২০ হাজার থেকে সর্বাধিক ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারা দেশে বেকার হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাই এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। আর সে হিসেবে এই বেকারদের বিভিন্ন মেয়াদি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থা করবে সরকার। আগামী তিন বছরের মধ্যে ১২ লাখ দক্ষ যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্যই এই সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ বেকার হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা গ্রামে চলে গেছে বা যাবে ভাবছে, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন ট্রেডে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে এরাই অগ্রাধিকার পাবে এবং আগের চেয়ে অর্ধেক হবে এই ঋণের সুদের হার।
করোনাকালীন এই সময়ে বেকার হয়ে যাওয়া অধিকাংশই শিক্ষিত বা হাতে-কলমে কাজ জানা দক্ষ ও স্বল্প দক্ষ কর্মী। এই কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও স্বল্প মেয়াদি ঋণ দিলে তারা নতুনভাবে নিজের কর্মসংস্থান করতে পারবে এবং পরিবার নিয়ে নিজেরা ঘুরে দাঁড়াতেও সক্ষম হবে। ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়াটা সরকারের বিভিন্ন মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে সঠিক গ্রহীতাকে দিতে পারলে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা পর্যন্ত যা যা করার দরকার সে ব্যাপারে সুপরামর্শ দেওয়া হলে, বদলে যাবে যুবসমাজ এবং নিশ্চিত হবে কর্মসংস্থান।
এতদিন এই বেকার তরুণকর্মীরা বিভিন্ন কাজে অত্যন্ত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, তাদের এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক সুবিধাদানের মাধ্যমে গ্রামেই যদি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে তারা সহজে আর শহরমুখী হবে না। যারা এতদিন পরিবার নিয়ে শহরে বাসা ভাড়া করে চাকরিতে বা ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত ছিল, এই করোনা মহামারী বুঝিয়ে দিয়েছে যে, শহর তাদের স্থায়ী নিবাস নয় এবং তাদের কর্মও স্থায়ী নয়। এটাই সুযোগ এই কর্মীদের সঠিক কর্মের ব্যবস্থা করে গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।
ভবিষ্যৎ স্বপ্ন অর্জনে তরুণরাই হচ্ছে মূল যোদ্ধা, তাই এই বেকার যুবক, যুবতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে পাল্টে যাবে তারুণ্যের জীবনধারা তথা দেশের চেহারা। এক অনন্য অগ্রযাত্রায় ধাবিত হবে সোনার বাংলা। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বেকার তরুণদের জন্য এই প্রকল্প একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে এবং এতে বেকারত্বের হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমাদের একটি বিষয়ই মাথায় রাখতে হবে যে, তরুণরাই দেশের চালিকা শক্তি। তারাই গড়বে আগামীর সুন্দর ভবিষ্যৎ। যদি তাদের সেভাবে গড়ে তোলা হয় বা কর্মের ব্যবস্থা করা যায়, তবে তরুণরাই পারবে সৃজনশীলতার মাধ্যমে তার কর্ম ও মেধাকে সবার সামনে তুলে ধরতে এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে।
সম্ভাবনার এই বাংলাদেশে তরুণদের জন্য এই নতুন চমক ‘বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ প্রকল্প’ হতে পারে একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে তৈরি হতে পারে নতুন নতুন উদ্যোক্তা এবং দক্ষ জনবল। তরুণ যুবসমাজকে উজ্জীবিত এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এই প্রকল্পের সফলতা নিয়ে বিশিষ্টজনদের মতো আমিও আশাবাদী।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।