ঢাকা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী-পুরুষের সমকক্ষতায় বিশ্বাসী ছিলেন। আর নারী উন্নয়নের পক্ষে তাঁর এই প্রগতিশীল অবস্থান ঘরের অভ্যন্তরে ও বাড়ির বাইরে বৃহত্তর রাজনীতিতে উভয় স্থলেই প্রতিফলিত হয়। নোবেল বিজয়ী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য যে উন্নত অবকাঠামো, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন প্রয়োজন, তার অনুপস্থিতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের পক্ষে যে অভাবনীয় অর্জন সম্ভব হয়েছে তা মূলত নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতিকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট নারীনেত্রী ও জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা সালমা খান একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, “প্রাকৃতিক সম্পদের অপ্রতুলতা, মাথাপিছু আয়ের স্বল্পতা, জনসংখ্যার আধিক্য ও সুশাসনের অভাব সত্ত্বেও বাংলাদেশ শুধু ‘উন্নয়নের ধাঁধা’ই সৃষ্টি করেনি, সেই সঙ্গে এক অপার সম্ভাবনার দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।” বিশ্বব্যাংকের মতে, স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিলের মতে, বিশ্বের ১১টি সম্ভাবনাময় দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখন জগৎজুড়ে স্বীকৃত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর বিশেষ অবদান রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শ এবং নারী কল্যাণে নিয়োজিত দেশের এনজিওগুলোর কল্যাণে দেশে অবকাঠামো, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শ্রম (বিশেষ করে পোশাক, নির্মাণশিল্প, গার্হস্থ্য, মৎস্য, পোলট্রি ও কৃষিকাজ), এমনকি পুলিশ ও মিলিটারিসহ প্রতিটি সরকারি কাজকর্মে সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে নেতৃত্বের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত আজ নারী। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, বঙ্গবন্ধুর নারী উন্নয়ন ভাবনা ও দর্শনের বিশেষ অবদানের জন্যেই বাংলাদেশের এ ধরনের অভাবনীয় উন্নতি এমন দ্রুতগতিতে ঘটা সম্ভব হয়েছে।
‘বঙ্গবন্ধু’ তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই আমাদের দেশের নারীর অবস্থা ও অবস্থান নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত ছিলেন এবং তাদের ক্ষমতায়নে বিভিন্ন পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। তিনিই প্রথম ’৭২-এর সংবিধানে নারীর অধিকারের বিষয়টি সংযোজন করেছেন বিভিন্ন প্রসঙ্গে। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা ও সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনকালে প্রতি পদক্ষেপে তিনি নারীর ক্ষমতায়নের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছিলেন। ফলে পুরুষের সঙ্গে নারীর সমকক্ষতার বিষয়টি আওয়ামী লীগের মূল এজেন্ডার অন্তর্গত হয়ে পড়ে।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা থেকেই তার কাজকর্মের সঙ্গে কিছু নারী নেতৃত্বের নাম সম্পৃক্ত রয়েছে। যেমন- বদরুন্নেছা আহমেদ, আমেনা বেগম, জোহরা তাজউদ্দীন প্রমুখ। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ব্যানারে ৯ জন নারীনেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এদের মধ্যে আনোয়ারা বেগম, দৌলতুন্নেসা, নূরজাহান মুর্শিদ, বদরুন্নেসা আহমেদ, সেলিনা হোসেন এবং আমেনা বেগম পরবর্তীকালে জাতীয় আন্দোলনের মূলধারার নেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন স্বাধীনতার আগে যেমন ভূমিকা রেখেছেন, তেমনি পরবর্তীকালেও দলের যে কোনো দুঃসময়ে, ক্রান্তিকালে হাল ধরেছিলেন। দেশ ও দলের প্রতি ভালোবাসাই ছিল তাঁর জীবনের ধ্যান-ধারণা। আমৃত্যু একনিষ্ঠভাবে সবার সঙ্গে জড়িয়েছিলেন। বেগম সাজেদা চৌধুরী দলের সুদিনে-দুর্দিনে দলকে করেছেন সংগঠিত। দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন, এখনো মিশে আছেন দলের সঙ্গে। আইভী রহমান নারী নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল নাম। অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন নারীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে। তার সংগঠনের প্রতি ভালোবাসা ছিল অমলিন। প্রাণ উৎসর্গ করেছেন স্বদেশের কল্যাণে রাজনীতি করে, বিশেষ করে দলের নারীকর্মীদের সুগঠিত করার কাজে। স্বাধীন দেশে শান্তিপূর্ণ জনসভায় যোগদান করতে গিয়ে গ্রেনেড হামলায় মর্মান্তিক অকালমৃত্যু বরণ করেন আইভী। এছাড়া প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে আছেন নিবেদিতপ্রাণ নারী। প্রতিকূল পরিবেশ, সামাজিক নানা ধরনের বৈষম্যকে ঠেলে আঁকড়ে আছেন তারা দলের সঙ্গে। প্রাথমিক পর্যায়ে নারীরা এই উপমহাদেশে রাজনীতিতে আসেন মূলত বামপন্থি বা নারী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে। বামদল থেকে পরবর্তীকালে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে আওয়ামী লীগে চলে আসেন কোনো কোনো বাম নারীনেত্রী। এদিক থেকে অন্যতম প্রধান উদাহরণ মতিয়া চৌধুরী। বামপন্থি রাজনীতি থেকে আসা মতিয়া চৌধুরী তাঁর স্বচ্ছতা, সততা ও ঐকান্তিকতা দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মুক্ত বাতাসের আবির্ভাব ঘটিয়েছিলেন। নারী নেতৃত্বের ওপর বঙ্গবন্ধুর অগাধ শ্রদ্ধা ও আস্থা এই আগমনকে ত্বরান্বিত করেছিল। সবচেয়ে বড় কথা, ইতিহাস সাক্ষী দেয়, নারীনেত্রীরা কখনো দলের দুর্দিনে দলের সঙ্গে প্রতারণা বা বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তাই বঙ্গবন্ধুর অগাধ বিশ্বাস ও নির্ভরতা ছিল তাঁদের ওপর।
নারীর উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়, এ গভীর উপলব্ধি থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর নারীসমাজের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু দেশকে উপহার দেন ’৭২-এর অত্যাধুনিক ও অনন্য সংবিধান, যাতে কেবল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির কথাই বলা হয়নি, অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে এতে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে সর্বপ্রথম জাতির পিতা নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষিত করেন। এটাই বাংলাদেশের ইতিহাসে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। মেয়েদের কর্মসংস্থানের জন্যেও প্রতিবন্ধকতামূলক আইন তুলে দিয়ে নারী-সহায়ক আইনের সংযোজন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে যৌন নির্যাতনের শিকার লাখ লাখ নারীকে সমাজে পুনর্বাসনের জন্যে তিনি তাদের আত্মত্যাগকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে এই ধর্ষিতাদের ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। শুধু তা-ই নয়, কোনো পরিবার বা সমাজ যদি কোনো নারীর ওপর ঘটে যাওয়া এসব অনভিপ্রেত ঘটনার জন্যে কোনো নারীকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, বঙ্গবন্ধু সেইসব মেয়ের পিতার দায়িত্ব নিতে রাজি হয়ে তাদের পিতার নামের জায়গায় নিজের নাম এবং ঠিকানা হিসেবে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির ঠিকানা ব্যবহার করতে বলেন। সমাজে ধর্ষিতা নারীদের পুনর্বাসনের এই ঐকান্তিক ইচ্ছা জাতীয়ভাবে এই নারীদের ঘৃণার চোখে দেখার মানসিকতা পরিহারে একটি মহা মূল্যবান ভূমিকা রাখে। এছাড়া এসব নারীর অবাঞ্ছিত সন্তানদের পুনর্বাসনের জন্যে দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজতর করার ব্যবস্থা করে এক বিশাল মানবিক দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশের নারী জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক ক্ষেত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনগ্রসর থাকায় বাংলাদেশের সংবিধানে তাদের অবস্থার উন্নতিকল্পে বিশেষ সুবিধা ও অধিকার সন্নিবেশিত হয়েছে। ১৯৭২ সালে প্রণীত প্রথম ও মূল সংবিধান এবং পরবর্তীকালে কয়েকটি সংশোধনীতে তাদের বাড়তি সুযোগ-সুবিধা ও সংরক্ষিত অধিকার দেওয়ার কথা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংযোজন করা হয়েছে।
ফলে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের প্রথম উৎস ’৭২-এর সংবিধান, যার ওপর ভিত্তি করে নারীর ক্ষমতায়নের বিভিন্ন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ১৯৭২ সালের নবগঠিত সংবিধানে বঙ্গবন্ধু নারী পুরুষের সাম্য প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন ধারা পড়লেই তা বুঝতে পারা যায়। এ সংবিধানে নারীদের জন্যে সংসদে ১৫টি আসন সংরক্ষণ করা হয়, যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে অর্ধশতকে এসে ঠেকেছে। সংরক্ষিত আসন ছাড়াও প্রত্যক্ষ নির্বাচনে পুরুষের পাশাপাশি অনেক নারী এখন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করে বর্তমান সরকার নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্থানীয় সরকারে তাঁদের অন্তর্ভুক্তিও বাধ্যতামূলক আজ। বিদ্যালয়ে নারীশিক্ষা অবৈতনিক করে দেওয়ায় নারীরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় বিস্ময়কর গতি ও পরিসরে এগিয়ে গেলেও পুরুষের তুলনায় উচ্চশিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষায় এখনো পিছিয়ে আছে। এটা পরিবর্তনের চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার। এই সমস্যা সমাধানে বাল্যবিবাহ রোধ ও সমাজে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রধান দুটি চ্যালেঞ্জ।
শুধু বৃহত্তর কর্মক্ষেত্র বা রাজনীতিতে নয়, ঘরোয়াভাবেও বঙ্গবন্ধু সব সময় সংসারে নারীর নীরব অবদানের কথা স্বীকার করতেন। বিশেষ করে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছার ভূমিকা ও স্বার্থত্যাগের প্রশংসা সবসময় করতেন। স্ত্রীর দূরদর্শিতা, ধৈর্য এবং সাহস তাঁকে জনগণের জন্যে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। তিনি বলতেন, একসময় শিশুকালে বিবাহিত চাচাতো বোন ফজিলাতুন্নেছা যে এত বড়মাপের মানুষ ও পরম ধৈর্যশীল স্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন, এটা আগে বোঝা যায়নি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের কয়েকটি বিশেষ ক্রান্তিকালে তিনি সুপরামর্শ ও সৎ সাহস দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে উৎসাহিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু যে তাঁর আত্মজীবনী ও কারারুদ্ধ দিনগুলোর বিশদ বর্ণনা দিয়ে দু’খানি গ্রন্থ রচনা করেছেন, তা কেবল স্ত্রীর পুনঃ পুনঃ তাগাদা ও জেলে থাকাকালীন তাঁকে খাতা-কলম কিনে দিয়ে বারবার উৎসাহ ও প্রেরণা দেওয়ার ফলেই সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ও তিন পুত্রের জনক হওয়া সত্ত্বেও জ্যেষ্ঠা কন্যা হাসিনার সঙ্গেই বেশি নৈকট্য বোধ করতেন এবং রাজনীতি, তাঁর স্বপ্ন ও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর সঙ্গেই বেশি আলাপ করতেন। ভাইবোনের মধ্যেও তিনি তাঁর মেজো আপার (শেখ মণির মা) সঙ্গেই সবচেয়ে নৈকট্য অনুভব করতেন। কলকাতায় পড়াশোনা করাকালে তাঁর মেজো আপা ও দুলাভাইয়ের বাড়িতে সুযোগ পেলেই হোস্টেল থেকে চলে যেতেন। পিতা-মাতার সঙ্গে বরাবর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেও বঙ্গবন্ধু মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে আদর নিতেন। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি করে বঙ্গবন্ধুকে যখন জেলে পাঠান আইয়ুব খান, খুব দুঃখ করে বাবাকে একখানা চিঠি লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধু, যেখানে মায়ের প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে এসেছে যাতে বোঝা যায় নিজ জননীর প্রতি কী ভালোবাসা ও মমত্ব ছিল তাঁর। চিঠিটা নিচে দেওয়া হলো :
বাবা লুৎফর রহমানকে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠি—
ঢাকা জেল
১২.১১.৫৮
আব্বা,
আমার ভক্তিপূর্ণ ছালাম গ্রহণ করবেন ও মাকে দিবেন। মা এবার খুব কষ্ট পেয়েছিল, কারণ এবার তাঁর সামনেই আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। দোয়া করবেন মিথ্যা মামলায় আমার কিছুই করতে পারবে না। আমাকে ডাকাতি মামলার আসামীও একবার করেছিল। আল্লা আছে, সত্যের জয় হবেই। আপনি জানেন বাসায় কিছুই নাই। দয়া করে ছেলেমেয়েদের দিকে খেয়াল রাখবেন। বাড়ি যেতে বলে দিতাম। কিন্তু ওদের লেখাপড়া নষ্ট হয়ে যাবে। আমাকে আবার রাজবন্দি করেছে, দরকার ছিল না। কারণ রাজনীতি আর নাই, এবং রাজনীতি আর করবো না। সরকার অনুমতি দিলেও আর করবো না।
যে দেশের মানুষ বিশ্বাস করতে পারে যে আমি ঘুষ খেতে পারি সে দেশে কোনো কাজই করা উচিত না। এ দেশে ত্যাগ ও সাধনার কোন দামই নাই। যদি কোনদিন জেল হতে বের হতে পারি তবে কোন কিছু একটা করে ছেলেমেয়ে ও আপনাদের নিয়ে ভালভাবে সংসার করব। নিজেও কষ্ট করেছি, আপনাদেরও দিয়েছি। বাড়ির সকলকে আমার ছালাম দিবেন। দোয়া করতে বলবেন। আপনার ও মায়ের শরীরের প্রতি যত্ন নিবেন। চিন্তা করে মন খারাপ করবেন না। মাকে কাঁদতে নিষেধ করবেন। আমি ভালো আছি।
আপনার স্নেহের মুজিব
চিরন্তন স্নেহ-ভালোবাসায় যেমন আপনজনদের জড়িয়ে ধরে রাখতে চাইতেন একজন পরিচিত বাঙালি পরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্র হিসেবে, তেমনি তাঁর আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নারীসমাজের প্রগতির প্রতি আগ্রহ তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল সেই সত্তরের দশকেও তখনকার দিনের মস্তবড় খেলোয়াড় ও সাঁতারু সুলতানা কামালকে বাড়ির জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ হিসেবে ঘরে বরণ করে নিতে। ফলে দেখা যায় রাজনৈতিক জীবনে যেমন, ব্যক্তিগত জীবনেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন আধুনিক ও অকৃত্রিম নারী-বান্ধব পুরুষ ছিলেন।
লেখক: কথাসাহিত্যিক
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।