• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাজনীতি হোক দেশ ও জাতির কল্যাণে


মাইন উদ্দীন হাসান ফেব্রুয়ারি ১, ২০২১, ০৩:৫৪ পিএম
রাজনীতি হোক দেশ ও জাতির কল্যাণে

ঢাকা : রাজনীতি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মাধ্যম, তাই রাজনীতির প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টির শুরু থেকেই। একটি দেশকে পরিবর্তন করতে হলে প্রয়োজন সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশ। কারণ প্রত্যেক মানুষের স্বপ্ন এ দেশকে সুস্থ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখার। কিন্তু যেখান থেকে একটা দেশ সুস্থ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়, সেই রাজনৈতিক পরিবেশের প্রতিটি রন্ধ্র বিশ্বাসঘাতকে পরিপূর্ণ। যারা জাতির বিশ্বাস নিয়ে দিনের পর দিন ছিনিমিনি খেলছে।

রাজনীতি হতে হবে দেশের কল্যাণের জন্য। যেখান থেকে উপকৃত হবে পুরো জাতি। কিন্তু বর্তমান রাজনীতিবিদরা দেশ এবং জাতির কল্যাণের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছে। তারা রাজনীতিকে বানিয়েছে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের পথ। ব্রিটিশরা ২০০ বছরে যা করতে পারেনি, এদেশের স্বার্থান্বেষী, পাজি, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক রাজনীতিবিদরা ৪৯ বছরেই তা করে ফেলেছে।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রকৃতি হতে হবে উদার-নৈতিক, সংকীর্ণমনা নয়। তবে এমন রাজনীতিবিদ সমাজে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখনকার রাজনীতিকে সবাই মনে করে ক্ষমতা এবং টাকার মহোৎসব। রাজনীতিতে প্রবেশ করতে পারলেই ভুরি ভুরি টাকার মালিক হবে, সবসময় পাওয়ার নিয়ে চলাফেরা করবে। এমন মানসিকতাসম্পন্ন রাজনীতিবিদদের অভাব বর্তমান সমাজে নেই বললেই চলে। বরং অভাব একজন আদর্শিক রাজনীতিবিদের।

যে রাজনীতিকে টাকা এবং ক্ষমতার চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেই রাজনীতি কখনো দেশ এবং জাতির জন্য ক্ষতি ছাড়া কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এমন রাজনীতি হয় নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য এবং রাজনীতিবিদরা প্রতিনিয়ত এমনটাই করছে।

সরকার প্রতি বছর হাজার কোটি বা লক্ষ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে। এই বাজেট থেকে দেশ এবং জাতি যতটুকু উন্নত হওয়ার কথা, তেমন উন্নত দেশ ও জাতি হতে পারেনি। কারণ এর ভিতর প্রবেশ করেছে দুর্নীতি। যার সঙ্গে জড়িত অসৎ রাজনীতি। দেশে এমন অনেক রাস্তা দেখা গেছে, যেখানে রডের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশ। যেটা দুর্নীতির এক জ্বলন্ত উদাহরণ। রাজনৈতিক দুর্নীতির মধ্যে আছে ঘুষ, চাঁদাবাজি, চাটুকারিতা, স্বজনপ্রীতি, প্রভাব বিস্তার এবং অর্থ আত্মসাৎ। এমন দুর্নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সমগ্র দেশ এবং পুরো জাতি।

রাজনীতি হলো রাজার নীতি। যেটা এক বিশেষ চেতনা বা আদর্শ। তবে সেই আদর্শ কজন রাজনীতিবিদ লালন করতে পারছে? এখনকার রাজনীতিবিদরা সুযোগসন্ধানী। কখন দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়ে তুলবে সবসময় সেটার অপেক্ষায় থাকে। এমনকি অনেক রাজনীতিবিদ দেশের অর্থ পাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধও করে থাকে। যেখানে দেশের মানুষ এখনো চিকিৎসার অভাবে মারা যায়, যেখানে  বাসস্থানের অভাবে ফুটপাতে মানুষ ঘুমায়, যেখানে অনাহারে মানুষের দিনাতিপাত করতে দেখা যায়, সেই দেশ থেকে রাজনীতিবিদরা করছে অর্থ পাচার। কিন্তু সেই অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা ছিল দেশ ও জাতির কল্যাণে।

রাজনীতি নিয়ে অ্যারিস্টটলের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এমন যে, রাজনীতির অর্থ হলো সবকিছুই কথা ও যুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে, সহিংসতার মাধ্যমে নয়। কিন্তু বর্তমান রাজনীতির সাথে সহিংসতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজনৈতিক নেতারা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য প্রায়ই বিভিন্ন অনৈতিক ও অমানবিক পথ অবলম্বন করে এবং এতে তাদের আপত্তি বা সংকোচ হয় না। মানুষ হত্যা থেকে শুরু করে এমন কোনো অনৈতিক কাজ নেই যা তারা করে না। সাগর, রুনি, বিশ্বজিৎ হত্যাও ছিল রাজনৈতিক কোন্দলেরই অংশ।

তরুণ প্রজন্মের বর্তমান রাজনীতির প্রতি একটা অনীহা কাজ করে। বেশিরভাগ তরুণের ফেসবুক প্রোফাইলে পলিটিক্যাল ভিইউজে দেখা যায় ‘আই হেইট পলিটিকস’। যেখানে আজকের তরুণরা নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে তরুণদের মাঝে তৈরি হয়েছে রাজনীতির প্রতি এক ধরনের অনীহা। তার কারণ কী? কারণ দেশের রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্র দুর্নীতি এবং সহিংসতা আচ্ছাদিত করে রেখেছে, যা তাদের মনে ভীতির সঞ্চার করছে।

রাজনীতিতে থাকে সেবা। যেটার মধ্য দিয়ে উপকৃত হবে জাতি। তবে সেবার কথা রাজনীতিবিদদের মাথায় থাকে তখনই, যখন নির্বাচনে দাঁড়ানো বা জয়ী হওয়ার প্রশ্ন আসে। এরপর ‘সেবা’ নামের শব্দ তাদের মাথায় আর থাকে না। সেবার পরিবর্তে সাধারণ মানুষের ওপর পেশিশক্তি খাটিয়ে করা হয় অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম।

রাজনীতি হলো বিলিয়ে দেওয়ার জায়গা। কিন্তু কজন রাজনীতিবিদ দেশ ও জাতির জন্য ত্যাগ স্বীকার করছেন? রাজনীতিকে ত্যাগ-তিতিক্ষার জায়গায় বানানো হয়েছে ব্যবসার জায়গা। যেটা করে বাড়ি-গাড়ির মালিক হওয়া যায় এবং তারা সেসব অর্জনের জন্যেই রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে।

আদর্শভিত্তিক রাজনীতি, সুশাসন ও দেশের উন্নয়ন হাত ধরাধরি করে চলে। আদর্শচ্যুত রাজনীতি সমাজ বা রাষ্ট্রকে কিছুই দিতে পারে না। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, অর্থ ও পেশিশক্তির প্রভাবে আদর্শ, জনকল্যাণ, আত্মত্যাগ ও নৈতিকতা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের পথ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনীতি করতে হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে। যিনি সবসময় রাজনীতির মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণের কথা চিন্তা করেছেন। সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করলে মানুুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করা যায়। মানুষ তাদের প্রিয় নেতা হিসেবে মৃত্যুর পরেও স্মরণ করে। যদি সততা, নিষ্ঠা, আদর্শ মনে ধারণ করে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া না যায়, তাহলে দেশ আগামীতে হারাবে সঠিক নেতৃত্ব। অসহায় হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষ।

লেখক : মার্কেটিং বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

 

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!